December 30, 2024
জাতীয়

পাটে লোকসান নয়

বুধবার জাতীয় পাট দিবস-২০১৯ এবং বহুমুখী পাটপণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পাটশিল্পের পুনর্জাগরণের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন। তাঁর কথার মর্মার্থ অনুধাবনে সক্ষম হয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হলে পাটের সোনালি অতীত যে বর্তমান হয়ে উঠবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, ‘পাট এমন একটি পণ্য যার কিছুই ফেলনা নয়। অতএব কেন এতে লোকসান হবে? পাটশিল্প কিভাবে লাভজনক হবে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
বাংলাদেশকে এক সময় সোনালি আঁশের দেশ বলা হতো। এর কারণ বাংলাদেশের পাটের বিশ্বময় সুখ্যাতি। এ ছাড়া বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ আসত পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে। পরবর্তীকালে কৃত্রিম তন্তু প্রচলন হওয়ায় পাটপণ্যের চাহিদা হ্রাস পায় মারাত্মকভাবে। সোনালি আঁশ পরিণত হয় চাষীর গলার ফাঁসে। পাট খাতের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে কিছু সাফল্যও এসেছে, কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে পাটের প্রয়োজন পড়ছে। আমদানি-রফতানি সনদ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র, ব্যবসায় পরিচালনার লাইসেন্স ইত্যাদি পেতে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করার পূর্বশর্ত মেনে নিতে হবে। বিষয়টি পাটের চাষ বাড়ানোর জন্য প্রেরণাদায়ক।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় এবং একুশের বইমেলায় সীমিত আকারে হলেও পাটের পলিব্যাগ ব্যবহারের প্রবণতা দেখে আমরা আশাবাদী হয়েছি। নতুন কিছু গ্রহণে প্রাথমিকভাবে সামান্য অমনোযোগ বা অনাগ্রহ থাকতে পারে। তবে ধীরে ধীরে তা চালু হয়ে যায়। পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প পচনশীল পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাই। পাটের সূক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে বিজ্ঞানীরা এ ব্যাগ তৈরি করেছেন। এটি দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হাল্কা, পাতলা ও টেকসই। এটি মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। বর্তমানে বছরে ৫০০ বিলিয়ন পলিব্যাগের বৈশ্বিক চাহিদা রয়েছে। ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ এবং পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের নির্দেশ দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। নতুন করে আরও ১১টি পণ্য তালিকায় যুক্ত হওয়ায় ১৭টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী পণ্যের ওজন ২০ কেজির বেশি হলে প্রযোজ্য হচ্ছে এই নিয়ম।
সোনালি আঁশ পাটের উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহার উৎসাহিত এবং জনপ্রিয় করতে পাট চাষীদের সোনালি স্বপ্ন পূরণে জোরদার পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। বর্তমান সরকার কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, পাটজাত পণ্য রফতানি ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন বর্জন ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পাটকে বিশ্ব বাজারে তুলে ধরতে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে (জেডিপিসি) ১৩৫ প্রকার পাটপণ্যের স্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র ইতোমধ্যে চালু হয়েছে।
সরকার ‘রফতানি নীতি ২০১৮-২০২১’ ঘোষণা করেছে। এর আলোকে পাটজাত পণ্যের মান উন্নয়ন ও বাজার সম্প্রসারণের জন্য পণ্যভিত্তিক শিল্প এলাকা গড়ে তোলার জন্য দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়েছে। এই আহ্বান ফলপ্রসূ হওয়া প্রত্যাশিত। আমরা আশা করতে পারি আগামীতে বেসরকারী শিল্প খাত পাটের প্রতি আরও গুরুত্ব দেবে। সরকারপ্রধান সব ধরনের সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। নতুন করে প্রণোদনা সুবিধা দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। ফলে পাটে এবার নতুন গতি ফিরবে- সেটাই স্বাভাবিক।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *