পাকিস্তান সফরের আগে নিরাপত্তা দল পাঠাচ্ছে বিসিবি
ক্রীড়া ডেস্ক
বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরের আগে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য আগেভাগে একটি নিরাপত্তা দল পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমনটাই জানিয়েছেন।
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে প্রথম ধাপের পাকিস্তান সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। এই সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ দলের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে পাকিস্তান। তবে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও বিসিবি আলাদা নিরাপত্তা দল পাঠাচ্ছে। এর মধ্যে ‘ন্যাশলান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স’ (এনএসআই) এর একটি দল সফরের আগেই যাচ্ছে।
গত ১৪ জানুয়ারি বিসিবি ও পিসিবি এক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তিন ধাপে পাকিস্তান সফরে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যদিও শুরুতে সংক্ষিপ্ত সফরের ব্যাপারে রাজি হয়েছিল বিসিবি। সেসময় শুধু টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার ব্যাপারে রাজি হলেও শেষ পর্যন্ত তিন ধাপে টি-টোয়েন্টি, দুটি টেস্ট ও একটি ওয়ানডে খেলার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২৪-২৭ জানুয়ারি ৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে লাহোরে। এরপর ৭-১১ ফেব্রæয়ারি রাওয়ালপিন্ডির মাঠে গড়াবে প্রথম টেস্ট ম্যাচ। তৃতীয় ধাপে এপ্রিলে ফের পাকিস্তান সফরে গিয়ে করাচিতে বাকি টেস্ট ও একমাত্র ওয়ানডে ম্যাচটি খেলতে যাবে টাইগাররা।
পাকিস্তান সফরকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমাদের অ্যাডভান্স সিকিউরিটি টিম যাচ্ছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টিলিজেন্স (এনএসআই) থেকে আমাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এনএসআই থেকে একটি টিম আগেও যাচ্ছে, পরেও যাচ্ছে। ডিজিএফআই থেকেও লোক যাবে। আমরা আমাদের তরফ থেকে যে পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়ার সেটা তো নেবোই। তবে নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে এখন কথা বলছি না।’
সবমিলিয়ে পাকিস্তান সফরে নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বাসের বাণী শোনালেন পাপন, ‘এটা (নিরাপত্তা) নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। খেলা নিয়ে চিন্তা। মাথার মধ্যে এরকম একটা চিন্তা থাকলে তো স্বাভাবিক পারফরম্যান্স আসে না। মানসিক শান্তি ছাড়া ক্রিকেট খেলা অনেক কঠিন। আর এমনি টি-টোয়েন্টি অনেক মানসিক চাপের খেলা। প্রতি সেকেন্ডে খেলা ঘুরে যায়। তাই এটাই ওদের (ক্রিকেটারদের) বললাম যে ঠাণ্ডা মাথায় খেলবা। ইনশাআল্লাহ, কিছুই হবে না। আমি আসছি। একসঙ্গে থাকব, একসাথে খাবো। কোনো অসুবিধা নেই।’
পিসিবি যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বিসিবি প্রধান বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে যা করার আমরা করছি। ওদের (পিসিবির) নিরাপত্তা পরিকল্পনা দেখেছি। এর চেয়ে বেশি আসলে কিছু করার নেই। এখন সমস্যা যেকোনো জায়গাতেই হতে পারে।’
পাকিস্তান সফরে টেস্ট সিরিজটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিসিবি। যেহেতু এটা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। এ নিয়ে পাপন বলেন, ‘এটা যদি শুধু দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হতো, তাহলে একটা কথা। এখানে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আছে। এটা অনেকটা বিশ্বকাপ। আমরা টি-টোয়েন্টি খেলছি, ওয়ানডে খেলছি। এখন ওরা শুরু করেছে টেস্ট, হোম এবং অ্যাওয়ের ভিত্তিতে। কাজেই এখানে তো অপশন নেই। আইসিসির ফুল মেম্বার হিসেবে এখানে আমাদের অংশ নেয়া উচিত। এখানেই মূল একটা চাপ ছিল। আমার মনে হয় এই টি-টোয়েন্টি সিরিজটি খেলে আমরা বুঝতে পারবো যে আসলে পরিস্থিতি কি এবং কোন। যদি আমাদের সমস্যা থাকে এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারব এবং পরে কথা বলতে পারব।’
মূলত আইসিসি’র সিদ্ধান্তের কারণেই পাকিস্তান সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল, মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আইসিসি তো দল পাঠাচ্ছেই। ওরা এরই মধ্যে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করেছে এবং ওদের সব লোকজন থাকবে। ওরা বলাতেই তো আসলে যাচ্ছি। সবদিক থেকে যেভাবে সিদ্ধান্তটি এসেছে এরপর ওখানে না যাওয়াটা কঠিন। এরপরও ওখানে যদি এমন কোনো ঘটনা আল্লাহ না করুক ঘটে বা তেমন অবস্থা হয় তাহলে তো আর আমরা যাবো না।’
তবে যদি সমস্যা হয়েই যায় সেক্ষেত্রে কি হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের যদি কখনো মনে হয় যে ওখানটায় যেমনটা ভেবেছিলাম বা পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে তাহলে আমাদের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন হবে। সেটা ভিন্ন ইস্যু। তবে এখন পর্যন্ত আমরা মনে করছি এটা একটি নিরাপদ জায়গা এবং আমরা খেলতে যেতে পারি সেখানে। মাথায় এখন সেই নিরাপত্তার ব্যাপারটি বাদ দিয়ে খেলায় মনোনিবেশ করা উচিত। সেটাই ওদেরকে (খেলোয়াড়দের) বলতে এসেছিলাম।’
পাকিস্তান সফরের আগে নিরাপত্তা ইস্যুটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে না যাওয়ার আগে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না। আবার অনেক দল এরইমধ্যে সফর করেও এসেছে। ফলে এখনই এত চিন্তার কিছু দেখছেন না বিসিবি প্রেসিডেন্ট, ‘যেহেতু কয়েকটি দল এরই মধ্যে সেখানে যাওয়া শুরু করেছে এবং একটি টুর্নামেন্ট করেছিল এর আগে, যেখানে তামিমও খেলতে গিয়েছিল। সেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাররা আসা শুরু করেছে। এই পদক্ষেপটি তো আমাদের তরফ থেকে হয়নি। এটা অন্যান্য জায়গা থেকে হচ্ছে। সবদেশে ক্রিকেট খেলা হোক এটা তো সবাই চায়।’
‘এখন পরিস্থিতি ভালো কিনা জানি না। তবে ওদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা আইসিসি মনে করেছে ঠিক আছে এবং তারা ভালো একটা নিরাপত্তা দিচ্ছে, তাই আইসিসি লোক পাঠাচ্ছে, খেলা পরিচালনা করছে। কাজেই আমরাও যাচ্ছি এখন। অন্যরাও গিয়েছে আগে। আমরাও গিয়ে দেখে আসি কি অবস্থা,’ যোগ করেন তিনি।