পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে টাইগার একাদশে আসছে বড় পরিবর্তন!
সবাই লিটন ছাড়া বাকিদের দায়ী করছেন। কারণ ভারতের বিপক্ষে দল জেতাতে যেমন ব্যাটিং প্রয়োজন ছিলো, লিটন ঠিক সেই ব্যাটিংটাই করেছেন। ভুবেনেশ্বর কুমার, আর্শদিপ সিং, মোহাম্মদ সামি, হার্দিক পান্ডিয়া আর অক্ষর প্যাটেলের সাজানো ভারতীয় শক্তিশালি ও ধারালো বোলিংয়ের বিপক্ষে বুকভরা সাহস নিয়ে ইচ্ছেমত খেলে উইকেটের চারদিকে বাউন্ডারি (৭টি) ও ছক্কায় (৩টি) ২৭ বলে ২২২.২২ স্ট্রাইকরেটে লিটন দাস খেলেছেন ৬০ রানের সাবলীল ইনিংস।
তার এমন আলো ছড়ানো ব্যাটিংয়েই জেগেছিল জয়ের স্বপ্ন; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য- সঙ্গী নাজমুল হোসেন শান্ত (৮৪.০০), সাকিব (১০৮.০০), আফিফ হোসেন ধ্রুব (৬০.০০), ইয়াসির আলীরা (৩৩.৩৩) ছিলেন ততোধিক অনুজ্জ্বল ও চরম ব্যর্থ।
তারা কেউ লিটনের মত হাত খুলে খেলতে পারেননি। রান তোলার পাশাপাশি একদিক ধরে রাখার কাজও করেছেন তিনি। বরং স্লো ব্যাট চালিয়ে ওভারপিছু লক্ষমাত্রা দিয়েছেন বাড়িয়ে। একজন ১৩০ স্ট্রাইকরেটে ত্রিশোর্ধ্ব একটি ইনিংস খেলতে পারলেও হয়তো খেলার চিত্র ভিন্ন হতে পারতো।
শেষ দিকে উইকেটরক্ষক সোহান ১৭৮.৫৭ স্ট্রাইকরেটে ১৪ বলে ২৫ আর পেসার তাসকিন ১৭১.৪২ স্ট্রাইকরেটে ৭ বলে ১২ এবং মোসাদ্দেক ৩ বলে এক ছক্কা হাঁকালেও আর লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ৫ রান দুরে থাকতে থেমে যেতে হয়েছিলো।
খালি চোখে সেটাই ছিল ভারতের কাছে বাংলাদেশের পরাজয়ের কারণ; কিন্তু আসলে কি তাই? এই পরাজয়ের জন্য শুধু ব্যাটাররাই দায়ী? আর কারো দায় নেই?
অবশ্যই আছে। ভারতের কাছে হারের জন্য সবার আগে দায় টিম ম্যানেজমেন্টের। তারা ৪ পেসার দিয়ে দল সাজিয়ে বাঁ-হাতি পেসার শরিফুলকে খেলিয়েছেন। শরিফুলের আলগা বোলিংও এই ম্যাচে সাকিব বাহিনীকে ডুবিয়েছে।
সুতরাং, এর জন্য টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার শ্রীধরন শ্রীরাম ও অধিনায়ক সাকিব কেউই দায় এড়াতে পারবেন না। যেখানে তাসকিন ৪ ওভারে ১৫, মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ৩১ আর হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে ৪৭ (সঙ্গে ২ উইকেটও নিয়েছেন) দিয়েছেন, সেখানে শরিফুলের ৪ ওভারে উঠেছে ৫৭ রান। অর্থ্যাৎ, ৪ পেসারের মধ্যে সবচেযে আলগা বোলিং করা হাসান মাহমুদের চেয়েও ১০ রান বেশি!
ভারতের ৬ ফ্রন্টলাইন ব্যাটার লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, সুর্যকুমার যাদব, দিনেশ কার্তিক এবং হার্দিক পান্ডিয়া- সবাই ডানহাতি। তাই হয়তো একজন বাড়তি বাঁ-হাতি বোলার খেলানো হয়েছে। সেটা পেসার শরিফুল না হয়ে স্পিনার নাসুম আহমেদ হলে ক্ষতি কী ছিল?
ভারতীয়রা স্পিনে অনেক দক্ষ। ধরা যাক বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুমও সুবিধা করতে পারতেন না। মার খেতেন। তারপরও কি শরিফুলের মত ওভার পিছু ১৪.২৫ রান করে দিতেন? বল পিছু ২ রান করে দিলেও নাসুমের ওভারে হয়ত ৪৫-৪৮ রান উঠতো। তাহলেই তো ভারতের স্কোর আরও ৭-৮ রান কম হতো। বাংলাদেশ হেরেছে ৫ রানে। লক্ষটা ১৮০‘র নিচে থাকলেই ফল ভিন্ন হতে পারতো।
এখন প্রশ্ন হলো পাকিস্তানের সঙ্গে আগামী ৬ নভেম্বরও কী শরিফুল খেলবেন? ভারতের মত পাকিস্তানের প্রথম ৬ ব্যাটারের মধ্যে বাঁ-হাতি খুব কম। মাত্র একজন বাঁ-হাতি, সান মাসুদ। রিজওয়ান, বাবর আজম, মোহাম্মদ হারিস, ইফতেখার ও শাদাব খান- সবাই ডানহাতি।
কাজেই এই ম্যাচে বাড়তি বাঁ-হাতি বোলার খেলানোর যৌক্তিকতা কম। তাহলে কী করবে টিম ম্যানেজমেন্ট? শরিফুলকে খেলানোয় থাকবে রাজ্যের ঝুঁকি। তাহলে তার জায়গায় খেলবেন কে? তা চলছে হিসেব-নিকেশ।
জানা গেছে, টিম ম্যানেজমেন্টও খানিক দ্বিধাগ্রস্ত। তাদের সামনে শরিফুলের পরিবর্তে আছে কয়েকটি বিকল্প। প্রথম বিকল্প, মেহেদি হাসান মিরাজ। যদিও ভিন্ন ফরম্যাটে, তারপরও ২০১৯ সালের ৫ জুলাই ইংল্যান্ডের লর্ডসে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুন মাপা বোলিং (১০ ওভারে ৩০ রানে ১ উইকেট) করেছিলেন মিরাজ।
কিন্তু যেহেতু পাকিস্তানে লাইনআপে ওপরে শান মাসুদ আর নিচে মোহাম্মদ নওয়াজ ছাড়া সব ব্যাটারই ডানহাতি, তাই ডানহাতি অফস্পিনার মিরাজকে না খেলিয়ে বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুমকে খেলানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। একইভাবে নিজেকে একদমই মেলে ধরতে না পারা ইয়াসির আলী রাব্বির পরিবর্তে সৌম্য সরকারের অন্তর্ভুক্তির চিন্তাও আছে।
তাই শরিফুলের বদলে নাসুম আর ইয়াসির আলীর জায়গায় সৌম্য সরকারের অন্তর্ভুক্তি ঘটলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।