পাইকগাছা-কয়রায় মৌসুমের শুরুতেই চিংড়ি পোনা সরবরাহে তীব্র সংকট; বিপাকে চাষীরা
পাইকগাছা প্রতিনিধি
পাইকগাছা-কয়রায় মৌসুমের শুরুতেই সংকট দেখা দিয়েছে চিংড়ি পোনার। প্রতিদিন ৫ কোটি পোনার চাহিদার স্থলে সরবরাহ মিলছে এক থেকে দেড় কোটি। ফলে প্রতিদিন চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি পোনা। সরবরাহ কম থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর পোনার দামও অনেক বেশি। বর্তমানে পোনা নিয়ে মহাবিপাকে রয়েছেন ঘের প্রস্তুতকারী চিংড়ি চাষীরা। প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা আহরণ বন্ধ, স্থানীয় হ্যাচারীতে সরবরাহ না থাকা, কক্সবাজারের হ্যাচারীর কম সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় মা চিংড়ির অভাবে এ ধরণের পোনা সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট পোনা ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সূত্রমতে, উপক‚লীয় খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা চিংড়ি চাষের জন্য সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মৎস্য দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, পাইকগাছায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর এবং কয়রা উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। প্রতিবছর জানুয়ারী-ফেব্রæয়ারী মাসে ঘের গুলো নতুনভাবে প্রস্তুত করে চাষ শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে এলাকার অর্ধেকেরও বেশি ঘের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সাধারণত শীত শেষে গরমের শুরুতেই চাষীরা ঘেরে পোনা মজুদ করে থাকে। সে অনুযায়ী যে সব চাষীদের ঘের প্রস্তুত সম্পন্ন হয়েছে তারা এখন ঘেরে পোনা মজুদ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ না থাকায় চিংড়ি পোনার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য চিংড়ি চাষী পোনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে এসে পোনা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন। সকালে কক্সবাজারের পোনা এলাকায় পৌছানোর পর পোনা নেওয়ার জন্য সরবরাহকারী এজেন্টদের নিকট ভীড় জমাচ্ছে চাষীরা। ঘের প্রস্তুত করার পরও পোনা মজুদ করতে না পেরে মহাবিপাকে রয়েছেন চাষীরা।
পাইকগাছার সবুজ মৎস্য খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব ইসতিয়ার রহমান শুভ জানান, মৌসুমের শুরুতেই চিংড়ি পোনা নিয়ে বিপাকে রয়েছি। ঘের প্রস্তুত করার পরও প্রতিদিন যে পোনার প্রয়োজন তা ১০ দিনেও মেলাতে পারছি না। শুরুতেই এ ধরণের পোনা সংকট থাকলে উৎপাদনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বিশিষ্ট এ চিংড়ি চাষী। খুলনা বিভাগীয় পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, পুরস্কার প্রাপ্ত চিংড়ি চাষী ও হ্যাচারী মালিক গোলাম কিবরিয়া রিপন জানান, স্থানীয় হ্যাচারী গুলো এখনো সরবরাহ শুরু করতে পারেনি। রয়েছে মা চিংড়ির অভাব। ফলে মৌসুমের শুরুতেই চিংড়ি পোনার সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশিষ্ট এ ব্যবসায়ী বলেন, স্থানীয় ভাবে পাইকগাছায় ৪টি হ্যাচারী রয়েছে। যার মধ্যে দুইটির উৎপাদন শুরু করলেও এখনো সরবরাহ করতে পারিনি। কয়রা দুইটার মধ্যে একটা শুরু করলেও সরবরাহ নেই। অনুরূপভাবে চালনায় ৫টি হ্যাচারীর মধ্যে দুইটি সরবরাহ শুরু করলেও সরবরাহ খুবই কম। পাইকগাছা-কয়রায় যে সব ঘের প্রস্তুত করা হয়েছে সে সব ঘেরের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ কোটি পোনার চাহিদা রয়েছে। চাহিদার স্থলে প্রতিদিন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে এক থেকে দেড় কোটি পোনা। সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর পোনার দাম অনেক বেশি। গত বছর যেখানে প্রতি হাজার পোনা দেড়’শ থেকে ২শ টাকা দরে বিক্রি হতো সেখানে এ বছর প্রতি হাজার পোনা ৬ থেকে ৭শ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী পোনার সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে চিংড়ি চাষীরা বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশিষ্ট এ চিংড়ি চাষী ও পোনা ব্যবসায়ী রিপন।
এ ব্যাপারে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস জানান, পোনা সংকটের বিষয়টি কোন ঘের মালিক এখানো আমাদের অবহিত করেনি। তবে এসপিএফ (রোগ মুক্ত) পোনার চাহিদা বেশি থাকায় সাধারণ হ্যাচারী মালিকদের মধ্যে হয়তো এক ধরণের শঙ্কা কাজ করছে। ফলে হ্যাচারীতে তুলনামূলক পোনা উৎপাদন কম হচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে পোনা সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।