পশ্চিমা চাপে নত নই, হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে: মালয়েশিয়া
পশ্চিমা চাপে মাথা নত নয়, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে মালয়েশিয়া সম্পর্ক রাখবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
সোমবার আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের নিন্দা করার জন্য পশ্চিমা চাপের সাথে একমত নয় মালয়েশিয়া।
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, পশ্চিমা এবং ইউরোপীয় দেশগুলো বারবার মালয়েশিয়াকে বৈঠকে হামাসের নিন্দা করতে বলেছে।
আনোয়ার পার্লামেন্টকে বলেন, ‘আমি বলেছি যে, আমাদের নীতিগতভাবে হামাসের সঙ্গে আগে থেকেই সম্পর্ক রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।’
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে আমরা তাদের (পশ্চিমাদের) চাপের মনোভাবের সাথে একমত নই। কারণ হামাসও গাজায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে এবং গাজাবাসী তাদেরকে নেতৃত্বের জন্য বেছে নিয়েছে।’
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হলেই শান্তিরক্ষা অথবা মানবিক মিশনে ফিলিস্তিনে মালয়েশীয় সৈন্য মোতায়েন করা সম্ভব। ঐকমত্য ছাড়া মালেশিয়ার শান্তিরক্ষী অথবা মানবিক সহায়তা বহনকারী উড়োজাহাজ মাটিতে নামার অনুমতি পাবে না।
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, মালয়েশিয়ার কয়েকটি দল দাবি করছে, আমরা আমাদের সামরিক বাহিনী পাঠাতে অস্বীকার করেছি। আমাদের সামরিক নেতারাও বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এটি সহজ সিদ্ধান্ত নয়। আশা করবো, আরও ভালো বোঝাপড়া হবে। মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।
২০১৩ সালে গাজা সফর করেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক- ফাইল ফটো/এএফপি
বক্তব্যে ইসরায়েলিদের হাতে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার জন্য মালয়েশিয়ার সবাইকে প্রার্থনা করার এবং মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম।
আগামী বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। সেখানে অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি।
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, আমি আসিয়ান এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে আগামী বৃহস্পতিবার রিয়াদ রওয়ানা হবো। তবে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আমার সফর শনিবার পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেন, সেখানে আমি সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, তুরস্কের মতো পক্ষগুলোর সঙ্গে (সংঘাত নিয়ে) আরেকটি আলোচনায় বসবো।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া বরাবরই ফিলিস্তিনের পক্ষে আওয়াজ তুলেছে। দেশটি এই সমস্যার দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে। ইসরায়েলের সঙ্গে মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
অতীতে হামাসের শীর্ষ নেতারা প্রায়ই মালয়েশিয়া সফর করেছেন এবং এর প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ২০১৩ সালে হামাসের আমন্ত্রণে ইসরায়েলের অবরোধ উপেক্ষা করে গাজা সফর করেন।
আরও পড়ুন: গাজায় হামলা বন্ধ না হলে হস্তক্ষেপের হুঁশিয়ারি ইরানের
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে ২৪৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় এসব ফিলিস্তিনি নিহত হন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় আরও ৯,২০০ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। ৭২৪ শিশুসহ নিহতদের মধ্যে শত শত নারী রয়েছে।
চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতির কারণে গাজার হাসপাতালগুলো ‘কবরস্থানে’ পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবিক সহায়তা সংস্থা রেড ক্রস।
এদিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪০০ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি ইসরায়েলি।