November 24, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করেন শারমিন

লক্ষ্মীপুর সদর এলাকার বাসিন্দা বাশার মিয়া। ২০১৪ সালে শারমিন আক্তার নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন তিনি। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। তবে বাশার গাজীপুরে চাকরির সুবাদে শারমিন তার শাশুড়ির সাথে লক্ষ্মীপুরে থাকতেন। এসময় জামাল নামের এক প্রতিবেশীর সাথে তিনি পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এতে বাধা দেওয়ায় এক পর্যায়ে শাশুড়িকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন শারমিন।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলীতে র‍্যাব-৩ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গতকাল রাতে গাজীপুরের গাছা থানা এলাকা থেকে শারমিন আক্তার নামের এক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১৬ সালে লক্ষ্মীপুর জেলায় পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় শাশুড়িকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন তিনি।

আরিফ মহিউদ্দিন জানান, মৃত জাকেরা বেগম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মপুর গ্রামের প্রবাসী রুহুল আমিনের স্ত্রী। ২০১৪ সালে জাকেরার ছোট ছেলে আবুল বাশারের সাথে শারমিনের বিয়ে হয়। ওই বিয়েতে ভিকটিম জাকেরার সম্মতি ছিল না। শুরু থেকেই শারমিনের সাথে জাকেরার সম্পর্ক ছিল তিক্ত। এসময়ে জীবিকার তাগিদে এবং পারিবারিক অশান্তির কারণে তার স্বামী বাশার গাজীপুরে ইলেকট্রিকের কাজ নেন। বাশারের অনুপস্থিতে শারমিন তাদের প্রতিবেশী জামালের সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। জামাল ভিকটিম জাকেরাকে আম্মা হিসেবে সম্বোধন করতেন। বাশারের অনুপস্থিতিতে তিনি তাদের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য নিয়মিত বাসায় যাতায়াত করতেন। শুরুতে জাকেরা তাদের পরকীয়ার সম্পর্কে বিষয়টি বুঝতে পারেননি। তিনি সরল বিশ্বাসে জামালকে তাদের বাসায় অবাধে যাতায়াত করতে দিতেন।

একদিন তিনি জামাল ও শারমিনকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। তিনি জামালকে তাদের বাসায় আসতে নিষেধ করেন এবং পুত্রবধূ শারমিনকে গালমন্দ করেন। তিনি সম্পূর্ণ বিষয়টি তার ছেলে বাশারকে জানান। ওই ঘটনা জানার পর বাশার শারমিনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন এবং তাকে তালাকের হুমকি দেন। তখন শারমিন তার প্রেমিক জামালের সাথে তার শাশুড়িকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই আসামি তাদের বাড়ির ছাদের গেইট খোলা রাখেন। ওইদিন গভীর রাতে জামাল তার বন্ধু নাজিম ও জসিমকে নিয়ে ছাদের গেইট দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে শারমিনের ঘরের দরজায় ধাক্কা দেন। শারমিন দরজা খুলে দিলে তারা শারমিনের রুমের ভেতর দিয়ে শাশুড়ি জাকেরার রুমে প্রবেশ করে তাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন। ওই ঘটনাকে ডাকাতির ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার জন্য তারা জাকেরা এবং শারমিনের আলমারি ভেঙে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে বাড়ির ছাদ দিয়ে পালিয়ে যায়। তারা পালিয়ে যাওয়ার পর শারমিন চিৎকার চেঁচামেচি ও কান্নাকাটি শুরু করেন। তার ডাক চিৎকারে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও সাক্ষীদের জবানবন্দিতে তাদের কাছে ওই ঘটনাটি একটি সাজানো ডাকাতি এবং হত্যার ঘটনা হিসেবে প্রতীয়মান হয়। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে শারমিন তাদের হত্যা পরিকল্পনা এবং ডাকাতির ঘটনা সাজানোর বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তার সহযোগী জামাল, নাজিম ও জসিমকে গ্রেফতার করে। ভিকটিমের দেবর বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মামলা দায়ের পর সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে সবাই জেল খেটে জামিনে বের হন। জেল থেকে বের হওয়ার পর আসামি শারমিন ও জামালের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যায়। আসামিরা সবাই যার যার মতো পলাতক জীবন শুরু করেন। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে শারমিন আক্তারসহ চারজনের ফাঁসির আদেশ এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। তবে গতকাল রাতে শারমিনকে গ্রেফতার করা হয়।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *