পদ্মা সেতু ঘিরে জমজমাট পরিবহন খাত
পদ্মা সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়। সেই স্বপ্ন এখন ছুঁয়েছে বাস্তবতায়। উদ্বোধনের অপেক্ষায় কোটি হৃদয়ের ভালোবাসার পদ্মা সেতু। পদ্মার ওপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটবে গাড়ি। মুহূর্তেই মানুষ পৌঁছাবে গন্তব্যে। শুধু সময়ই বাঁচবে এমন নয়, এর সাথে এখন নতুন করে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগও হবে এখাতে। মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা আরামদায়ক হচ্ছে তেমনি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে যাচ্ছে ওই অঞ্চল।
আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ভোর ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেতুটি। এমন উদ্বোধনের হিসেব নিকেশ যখন চলছে তখন এই রুট ব্যবহারকারী ২১ জেলার মানুষের জন্য নতুন গণপরিবহন, বিশেষ সার্ভিস নামানোর কথা ভাবছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।</p>
জীর্ণ শীর্ণ রঙ বিহীন গাড়িগুলোর পরিবর্তে এখন এই রুটে আরও বিলাস বহুল গাড়ি চলবে। স্বপ্নের ছোঁয়ায় ডানা মেলবে পরিবহন খাতও। পরিবহন সেক্টরের মালিকরা নতুন গাড়ি নিয়ে আসতে চায় সেই সাথে এই পথের যাত্রাকে করতে চায় আরামদায়ক। পরিবহন সেক্টরের মালিক ও শ্রমিক নেতারা মনে করছেন, পরিবহন খাতে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ হতে পারে। আর এই অঞ্চলের রুটে চলবে জার্মানির ‘ম্যান’ ব্র্যান্ডের ডাবল ডেকারের মতো বিলাসবহুল গাড়িও। এছাড়াও নিয়মিত চলবে স্ক্যানিয়া, হুন্দাই ভলভো ব্রান্ডের গাড়িগুলো। যোগযোগখাতে উন্মুক্ত হবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ পদ্মা পাড়ি দিয়ে যাতায়াতের সময় যা লাগতো তার কয়েকগুণ বেশি সময় ফেরিঘাটে অপেক্ষা করেই কাটাতে হতো। অবশেষে সেই ফেরির অপেক্ষা ঘুচে যাচ্ছে। দুই তিন চার ঘণ্টা বা আরও বেশি সময় অপেক্ষা করা ফেরি ঘাটের বদলে এখন পদ্মা সেতুতে সময় লাগবে মাত্র ছয় মিনিট। এতে করে সড়কে বাড়বে পরিবহন। আগের চেয়ে যাত্রীও বাড়বে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে সৌন্দর্য দেখতে যাবে। বিশেষ করে কুয়াকাটা ঘুরতে যাবে বিপুল সংখ্যক পর্যটক। ইতোমধ্যেই সেতু ঘিরে উঁকি দিচ্ছে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট গড়ে উঠছে পদ্মার দুই পাড়েই।</p>
আগামী দিনগুলোতে পর্যটন আকৃষ্ট করতে পদ্মা সেতুর দুই পাড় নানাভাবে সাজবে বলে জানা গেছে। এতে করে প্রতিদিনই মানুষের যাতায়াত থাকবে। এজন্য সড়কে আগের পরিবহনে সংকুলান হবে না। এখন থেকেই নতুন পরিবহন নামানো বা আগের চেয়ে সংখ্যা বাড়ানো বিষয়ে চিন্তা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। সেতু চালু হলেই পরিবহন খাতের ব্যবসা সম্প্রসারণের দ্বার খুলবে সেই সাথে ভাগ্য পরিববর্তন হবে শত শত মালিক ও শ্রমিকদের এমনটাই মনে করছেন ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলার পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।</p>
গ্রিন লাইনের জেনারেল ম্যানেজার মো. আবদুস সাত্তার বলেন, আমাদের জন্য এই সেতু এক আর্শীবাদ। আমাদের ফেরি দিয়ে অনেক ভোগান্তি হতো। সেতু উদ্বোধনের পর থেকে আর কোনো গাড়ি আমরা দৌলতদিয়া পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার করবো না। আমাদের যশোর রুটে চলা গাড়ি খুলনা রুটের গাড়ি সবই পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে পারাপার করবে।<br>তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা নতুন গাড়ি এনেছি। আমরা খুলনা রুটে প্রথমবারের মতো ডাবল ডেকার বাস সার্ভিস শুরু করবো। দুমাস আগে গাড়িগুলো নতুন এনেছি। খুলনা সাতক্ষিরার যাত্রীরা পদ্মাসেতু হয়ে গোপালগঞ্জ দিয়ে যাতায়াত করবে। আমাদের পটুয়াখালি পর্যন্ত গাড়ি চলবে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে, আমারা বেশ উৎফুল্ল। যাত্রীরাও ভালো সেবা পাবে, ভোগান্তি কমবে।</p>
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাশাপাশি পুরো বাংলাদেশে অর্থনৈতির একটা মহা বিপ্লব ঘটবে। সেতু চালু হলে পরিবহন কোম্পানিগুলোর অত্যাধুনিক বাস বিভিন্ন জেলার সঙ্গে চলাচল শুরু করবে। ফলে পরিবহন সেক্টর দেশের প্রধান স্বর্ণময় অবস্থান হয়ে উঠবে। নতুন বাস নামলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে কমবে বেকারত্বও। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। ভাড়া কম লাগবে বলে পণ্যের দামও কমবে। এতে পদ্মা সেতুর সুফল পাবে পুরো দেশবাসী
ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় সেতুর দুই প্রান্তে পদ্মা সেতু উত্তর থানা ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা নামে দুটি থানা স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উত্তর থানার আওতায় থাকবে মেদিনীমন্ডল ও কুমারভোগ দুটি ইউনিয়ন। জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার আওতায় থাকছে পূর্ব নাওডোবা ও পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়ন। থানা দুটি এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়াও সেতুর দুই প্রান্তে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার টোল আদায়ের নিরাপত্তায়ও কাজ করবে।<br>পদ্মাসেতুতে কি পরিমাণ গাড়ি চলবে সে হিসেবে বছরে টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাসে টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যা বছরে প্রায় এক হাজার ছয়শত চার কোটি টাকা টোল আদায় হবে। এ টাকা দিয়ে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও নির্মাণ খরচের ঋণ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ সরকারকে ৩৫ বছরে সুদসহ ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।
গত ১৭ মে পদ্মা সেতুর টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। এরপর পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ রুটের বাস ভাড়া নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।</p>