পদ্মা সেতুতে যান চলাচল ২০২১ সালে : ওবায়দুল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
পদ্মা সেতু ২০২১ সালের জুনের মধ্যে যান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ঋণ পরিশোধের জন্য অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এখলাছুর রহমান এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. মনিরুজ্জামান চুক্তিতে সই করেন।
২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এরপর চালু করতে করতে হয়তো আরও ৩/৪ মাস সময় লাগবে। সর্বশেষ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল করবে। আমরা যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারব ইনশাআলাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন আমরা এই প্রত্যাশাই করছি।
মূল সেতু কাজের চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাথ টাকা এবং এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৩২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান কাদের। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে এই ঋণ অর্থ বিভাগের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর প্রাপ্ত আয় থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সরকারকে সুদাসলসহ অর্থ ফেরত দেবে। সেজন্যই সেতু কর্তৃপক্ষ ও অর্থ বিভাগের মধ্যে ঋণ পরিশোধ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
সেতুমন্ত্রী জানান, ঋণচুক্তি অনুযায়ী সেতু কর্তৃপক্ষ ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে অর্থ বিভাগ তথা বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ পরিশোধ করবে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে ৩৫ বছর। এক শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করা হবে। ঋণ পরিশোধের সিডিউল অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে প্রায় সর্বনিম্ন ৮২৬ কোটি থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু সেতু প্রকল্পে তিনটি দাতা সংস্থার (আইডিএ, এডিবি ও ওইসিএফ) কাছ থেকে নেওয়া ঋণ সেতু কর্তৃপক্ষ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী সুদাসলে প্রতি বছর চার কিস্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরিশাধ করছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ প্রতি অর্থবছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা এ বাবদ বাংলাদেশ সরকারকে পরিশোধ করে আসছে। আগামী ২০৩৩-৩৪ অর্থবছরে ওই ঋণ সুদসহ সম্পূর্ণ পরিশোধ হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরে ওবাদুল কাদের মন্ত্রী বলেন, মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। মূল সেতুর সবক’টি পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩১টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী ১১টির কাজ চলমান আছে এবং তা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। মাওয়া অংশে এ পর্যন্ত ট্রাস (স্প্যান) এসেছে ২৭টি, এর মধ্যে ১৪টি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অবশিষ্ট স্প্যানগুলোর কাজ চীনে প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সেতুতে রেলপথের জন্য মোট ২ হাজার ৯৫৯টি প্রি-কাস্ট স্ল্যাবের প্রয়োজন হবে এবং স্ল্যাব তৈরির কাজ আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে জানান মন্ত্রী। নদীশাসন কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৬২ শতাংশ।
পদ্মা সেতুতে ব্যয় বাড়ার কোনো সম্ভবনা নেই জানিয়ে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রজেক্টের প্রায় শেষ পর্যায়ে, এখন পর্যন্ত যে মূল সেতুর ব্যয় ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, এটা বাড়ার কোনো ইঙ্গিত আমরা পাচ্ছি না। নদী শাসনেও ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বাইরে যাবে না বলে জানান সচিব। অনুষ্ঠানে অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।