November 22, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

পণ্য কিনতে আরও এক কোটি মানুষ পাবেন বিশেষ কার্ড : প্রধানমন্ত্রী

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবে কম দামে পণ্য কিনতে আরও এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকালে গণভবনে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা টার্গেট করেছি এক কোটি মানুষকে আমরা স্পেশাল কার্ড দেব। যেটা দিয়ে তারা ন্যায্যমূল্যে জিনিস কিনতে পারবে। যে ৩৮ লাখকে আমরা টাকা দিচ্ছি তারা তো থাকবে, তার বাইরেও আরও এক কোটি লোককে দেব। তাছাড়া ৫০ লাখ লোককে একটা কার্ড দেওয়া আছে, সেটা থেকে তারা ১০ টাকায় চাল কিনতে পারে। সেই ব্যবস্থা করা আছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা টিসিবি জানিয়েছে, রমজান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০ মার্চ থেকে ‘বিশেষ কার্ডের’ কর্মসূচি শুরু করা হবে। এর আওতায় এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য দেওয়া হবে। প্রতিটি পরিবার দুই দফায় পণ্য পাবেন। এসব পণ্যের মধ্যে থাকবে সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল, ছোলা বুট, পেঁয়াজ প্রভৃতি বলে জানিয়েছেন টিসিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।
১৪ দলের বৈঠকে সরকারের কাছে যথেষ্ট খাদ্য মজুত আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখনও ১৮ লাখ (টন) খাদ্য মজুত আছে আমাদের। সেখানে কোনো অসুবিধা নেই। ফসল উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, কারও এতটুকু জমি যেন অনাবাদী না থাকে। যে যা পারেন সেটাই উৎপাদন করেন। প্রত্যেক এলাকায় কিছু না কিছু উৎপাদন হবেই। সেটাই আমার লক্ষ্য। তাতে আমাদের যে খাদ্য চাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি।
ভোজ্যতেলের বাড়তি মূল্যের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, তেল নিয়ে যে সমস্যা সেটা নিয়ে কালকেও মিটিং করেছি ভার্চুয়ালি। সেখানে আমি বলে দিয়েছি একটা টাস্কফোর্স করা। মজুদ তেলের কোথাও ‘হোল্ডিং’ হচ্ছে কি না তা দেখা হচ্ছে। আর প্রত্যেকটা জায়গায় খোঁজ নেওয়া।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম খুব বেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সয়াবিন তেলটা আমাদের বেশির ভাগই আসে হলো ব্রাজিল থেকে। আর পাম অয়েলটা আসে মালয়েশিয়া থেকে। তো এ যুদ্ধের কারণে যাতায়াত খরচ, অতিরিক্ত কার্গো ভাড়া বেড়ে গেছে। আনতে অসুবিধা। এ সমস্ত সমস্যা আছে। কিন্তু আমাদের মজুদ যেটুকু আছে বা এখানে যেটা হচ্ছে সেটা আমরা খোঁজ নিচ্ছি। কেউ কোনো রকম, অন্য কোনো রকম (কিছু করছে কি না)।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা হয়, দাম বাড়তে দেখলে সবাই মজুত করে, সবাই ইয়ে (সুযোগ নেয়) করে, সে বিষয়গুলো আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বেড়ে যায় তখন খুব বেশি তো আর আমাদের করার থাকে না। কিছু তো কমপ্রোমাইজ আমাদের করতে হয়। কিন্তু রোজার সময় যাতে অন্তত দ্রব্যমূল্য (সহনীয়) থাকে।
ভোজ্যতেলে বাংলাদেশ এখনও ৯০ ভাগই পরনির্ভরশীল জানিয়ে তিনি বলেন, খালি ভোজ্যতেলের ব্যাপারে এখনও আমরা ৯০ ভাগই নির্ভরশীল, পরনির্ভরশীল হয়ে গেছি। সেটাও আমি বলছি যে, আমাদের অবশ্য রিসার্স ইন্সটিটিউট বারি থেকে কয়েকটা বীজ আবিষ্কার করেছে। খুব ভালো উৎপাদন হবে। ভবিষ্যতে আরও কীভাবে করা যায়। আমার কথা হলো প্রত্যেকটা জিনিস আমরা যেন নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারি সে একটা অবস্থানে আমাদের থাকবে হবে। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে আমাদের যেন থাকতে না হয়। সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি।
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানির আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে যে সমস্যা ছিল, আমার মনে হয় পেঁয়াজ আমরা উৎপাদন করতে পারি। আমাদের সেই ব্যবস্থা নিতে পারি। আমাদের বিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে কৃষি বিজ্ঞানীরা খুব ভালো কাজ করে। সাথে সাথে রিসার্স করে এখন আমরা বীজ উৎপাদন করতে পারছি। আশা করি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আর বাইরে থেকে আনতে হবে না। আমরা রফপ্তানি করতে পারব। সেভাবে আমরা কৃষকদের সব রকম সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
বিদেশি বিনিয়োগে ভালো সাড়া পাচ্ছে বাংলাদেশ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি অন্য ক্ষেত্রেও কিন্তু বিনিয়োগ ভালো আসছে। আমরা যে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। ভালো একটা সাড়া আমরা পাচিছ। এখন তো অনেকটা কম্পিটিশন এসে গেছে যে বাংলাদেশে কে কে কী কী বিনিয়োগ করবে। সেটার জন্য আমরা আলাদাভাবে রোড শো করা, বিভিন্ন দেশের মানুষকে আকর্ষণ করা, তাদের আহ্বান করা, অর্থাৎ ভবিষ্যৎটা যাতে চলে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। যাতে করে দেশের উন্নয়নটা এগিয়ে যায়। তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গার্মেন্টসের অর্ডার অনেক বেশি আসছে বাংলাদেশে এখন। অন্যান্য জায়গায় কিছু ঝামেলা হওয়াতে আগ্রহটা বেশি।
দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচেছ জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আরেকটা ভালো সুখবর হলো, সেটা আমরা ঘোষণা করতে যাচ্ছি মার্চ মাসে; এ সময়ের মধ্যেই করব,… পায়রাতে আমি যাব। ওখানে আমাদের একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, সেটা উদ্বোধনের সাথে সাথে এ ঘোষণা দেব, আপনাদের আগে আমি বলে রাখি।
এখন কিন্তু বাংলাদেশে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়ে দিয়েছি। যেসব জায়গায় গ্রিড লাইন সেসব জায়গায় সোলার প্যানেল দিয়েছি। খুঁটে খুঁটে বের করছি, কোন জায়গায় নাই। সর্বশেষ পেলাম গঙ্গাচড়াতে ৭০টা পরিবারের বাড়িতে বিদ্যুৎ নাই। সেখানে আমি সোলার প্যানেল করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, এখন কিন্তু শতভাগ বিদ্যুৎ হয়ে গেছে আমাদের বাংলাদেশে। যেটা আমাদের টার্গেট ছিল। কিছু কিছু দ্বীপ অঞ্চল, সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে লাইন নিয়ে গেছি, যেমন সন্দীপে নিয়ে গেছি, ভোলার কিছু অঞ্চল আর তাছাড়া বেশির ভাগ তো সোলার প্যানেল তো দিচ্ছি। গ্রিড লাইন আরও তৈরি করছি যাতে আরও সুস্থভাবে বিদ্যুৎ দিতে পারি।
জ্বালানি গ্যাস প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, একটা সময় বলতো গ্যাসে ভাসে বাংলাদেশ, এখন আর সেটা না। যার জন্য এখন আমাদের এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে এটাও একটু সমস্যা হচ্ছে। তারপরও প্রচেষ্টা থাকছে যে দাম বাড়ে বাড়বে; কিন্তু তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেভাবে হোক আমাদের উন্নয়নটা যাতে অব্যহত থাকে।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *