নৌ-ধর্মঘট : আজকের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস প্রতিমন্ত্রীর
১১ দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) থেকে দেশব্যাপী চলছে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট। এ সমস্যা আজকের মধ্যে সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
এর আগে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের নতুন হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দৌরাইস্বামী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নৌ শ্রমিকরা যে দাবি করেছেন, তাদের মূল দাবি হচ্ছে খোরাকি ভাতা। এটা অবশ্যই তাদের ন্যায্য দাবি, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গত এক বছরে তারা দুবার এই ধরনের ধর্মঘটে গেছেন। আমরা আলোচনা করে এটার একটা সমাধান করেছি। আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে, নৌ অধিদফতর ও বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আলোচনা এখন পর্যন্ত চলমান। আশা করি, এটা আজকের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।’
এদিকে, আজকেই নৌযান মালিকরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘শ্রমিকরা সন্ত্রাসীদের মতো কর্মকাণ্ড করছে। তারা মানবে না’- এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘শ্রমিকরা তো খুব অসহায় তারা শ্রম দিয়ে উপার্জন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের আমরা শ্রমিক বলছি, তাদের তো সন্ত্রাসী বলা যায় না। তারা আদের অধিকারের জায়গায় আছে। সেখানে কীভাবে সমন্বয় করা যায়, আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সেই চেষ্টাই চালাচ্ছি। আমরা মনে করি, সেই সমন্বয় আজকের মধ্যে হয়তো হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সবকিছু সমন্বয় করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই, মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। আমরা সেই জায়গাটায় কাজ করছি।’
পণ্য খালাসের জটের কী হবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই সমস্যার সমাধান হয়ে গেলেই (পণ্য জট সমস্যারও সমাধান) হয়ে যাবে।’
উল্লেখ্য, বেতন-ভাতার সুযোগ-সুবিধাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান-শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হয়। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন আটটি সংগঠন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়।
শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবি হলো
১. বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা
২. ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান
৩. ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান
৪. সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ
৫. এনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ
৬. কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ
৭. প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান
৮. নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন
৯. মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা
১০. নৌপরিবহন অধিদফতরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং
১১. নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের অনেকগুলো কার্যক্রম চলমান আছে। সেই বিষয়গুলো আলোকপাত হয়েছে। যেমন পায়রা বন্দরে তাদের প্রকল্প আছে। মোংলা ও আশুগঞ্জেও তাদের প্রকল্প আছে।’
‘ইছামতি নদী ড্রেজিংয়ের বিষয়ে হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে’ জানিয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘সর্বোপরি ভারত ও বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে যেটা তৈরি হয়েছিল সেটা আমরা কন্টিনিউ ও আরও শক্তিশালী করতে চাই। আরও কাছাকাছি আসতে চাই। এখন অর্থনীতির বিষয়টা তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ, সেই জায়গাটায় কীভাবে আরও কাছাকাছি থাকতে পারি সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’