নেতৃত্বে ভুল করলে জনগণকে খেসারত দিতে হয় : প্রধানমন্ত্রী
* চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা সম্ভব না
* ধর্ষণ বন্ধে পুরুষদেরও সোচ্চার হতে হবে
* বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়বে না বাংলাদেশ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৪-০৫ সালে মিয়ানমারের গ্যাস নিতে ভারত, চীন ও জাপান বিনিয়োগ করেছিল। সেই গ্যাস বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপলাইন বসিয়ে ভারত নিতে চেয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া সেটা হতে দেয়নি। আমি হলে ভারতে গ্যাস নিতে তো দিতাম-ই, আমার ভাগটাও রেখে দিতাম। আসলে নেতৃত্বের ভুল হলে এর খেসারত জনগণকে দিতে হয়।
চীন সফর শেষে গতকাল সোমবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে গ্যাস আমদানি করতে পারলে এই মুহূর্তে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আনতে হতো না। গ্যাসের দামও বাড়তো না, কিন্তু বিএনপির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, ২০০০ সালে আমার কাছে প্রস্তাব ছিল গ্যাস বিক্রি করার। আমি রাজি হইনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল- গ্যাস বিক্রি করবে। যে কারণে ২০০১ সালে ভোট বেশি পেয়েও আমি ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আমাকে জানতে হবে গ্যাসের মজুদ কত? বিক্রি করতে পারব কি-না। প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানি করতে খরচ হয় ৬১.১ টাকা। ভারতে গৃহস্থালির জন্য স্থানভেদে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০-৩৭ টাকা। বাংলাদেশে তা ১২ দশমিক ৬০ টাকা। শিল্পে গ্যাসের দাম ১০ দশমিক ৭০ টাকা, ভারতে এটির দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা।
শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আমাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি-না? ২০০৮ সাল পর্যন্ত জিডিপি কতটুকু বেড়েছে? গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, সেটা যদি না বাড়ানো হয় তাহলে এলএনজি আমদানি কমে যাবে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আন্দোলনের সময় বলছে- ভারত কমিয়েছে, ভারতে বছরে দুইবার দাম বাড়ানো হয়। এটা তাদের নীতি। পয়লা এপ্রিল ও অক্টোবরে গিয়ে তারা গ্যাসের দাম অ্যাডজাস্ট করে। অর্থাৎ, মূল্যটা বাড়ায়।’
‘এলএনজি আমরা ৬১ দশমিক ১২ টাকায় নিয়ে এসে সেটি দিচ্ছি ৯ টাকায়। সব ট্যাক্স মাফ করে দিয়ে, মানুষ যেন সহজে গ্যাস কিনতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও আন্দোলন। একটা মজার ব্যাপার আছে, বাম আর ডান মিলে গেছে।’
তিনি বলেন, আমরা জিডিপি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাবো। আমাদের গ্যাস লাগবে। দেশে এখন লোডশেডিং নেই। মানুষ অতীতের কথা ভুলে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে চীন সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। তাদের (চীন) কাছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই দেশই গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু। তাই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা বিষয়টিও তারা বুঝতে পেরেছেন। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩৫ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য : সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩৫ বছর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে যখন আলোচনা শুরু হয় তখনই আমি পিএসসির চেয়ারম্যানকে ডেকে এ বিষয়ে আলোচনা করি। কিন্তু এটা সম্ভব না।
গত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষায় পাসের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটু দেরি হলেও ১৬ বছরে এসএসসি, ১৮-তে ইন্টারমিডিয়েট, চার বছর অনার্স, এক বছর মাস্টার্স। সে হিসেবে ২৩-২৪ বছরে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারে।
তিনি বলেন, কাজ করার জন্য একটা সময় থাকে, বয়স থাকে। একটা সময় পর তা আর হয় না। তাই শুধু আন্দোলন করার জন্যই যদি দাবি তোলা হয়, তাহলে কিছু বলার নেই। এক্ষেত্রে তারা হয়তো কোনো জায়গা থেকে সুবিধা- ভালো ভাষায় বললে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন কিনা- সেটিও বিষয়।
এ নিয়ে পার্লামেন্টেও একটা প্রস্তাব হয়েছে। তারা আন্দোলন করেই যাবে। আন্দোলন করুক। আন্দোলন করলে অন্তত রাজনীতিটা শিখবে। এ সময় পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
দেশজুড়ে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা সব সময় সব দেশেই আছে। তবে হ্যাঁ, এখন মেয়েরা সাহস করে নির্যাতনের কথাটা বলে। এর বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নিচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে তাদের (অভিযুক্ত) ধরা হচ্ছে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের জঘন্য কাজ যারা করছে, তারা মানুষ না। এক্ষেত্রে পুরুষ সমাজকেও বলবো, তাদের এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়বে না। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু করছি। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও নিজস্ব অর্থায়নে নেওয়া হচ্ছে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক বাড়লে আমেরিকার সঙ্গে কোনো সমস্যা হবে কি-না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। আমরা এ নীতি মেনে চলেছি।
‘কার সঙ্গে কার দ্ব›দ্ব, তা দেখা আমাদের দরকার নেই। আমার কাজ করার ধরনটা আলাদা। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে চলতে চাই। দেশকে এগিয়ে নিতে কোথা থেকে সাহায্য আসবে, সুবিধা কোথায় পাবো, সেটাই মূল বিষয়।’
চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্স নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ খেলায় যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বিশ্বের নামিদামি টিমের সঙ্গে খেলে হারিয়ে দিচ্ছে, কম কথা না। তাদের পারফরমেন্স ভালো ছিল। সাকিব একটা স্থান করে নিয়েছে, মোস্তাফিজ নিয়েছে। আমি দোষ দেবো না, আসলে খেলায় ভাগ্যও লাগে। তবে সাহস নিয়ে মোকাবিলা করার প্রশংসা করি তাদের।
চীন সফরেও খেলা দেখার কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিশ্বকাপে চারটা দেশ সেমিফাইনালে উঠেছে। তাই বলে কী বাকিরা খারাপ খেলেছে? আমরা নিজেরাই নিজেদের ছোট করি কেন? জাঁদরেল দলের সঙ্গে আমাদের ছেলেরা খেলেছে, সেটা কম কী? নিজেদের দোষ দেওয়ার কিছু নেই। আমার ছেলেরা ভালো করেছে।