নেতার ব্যানার গায়ে পড়ে তরুণীর মৃত্যু, ভারতজুড়ে তোলপাড়
উপমহাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেকটা একই ধরনের। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে পড়তে উঠতি নেতারা কত কিছুই না করেন! যখন-তখন সভা-সমাবেশ, মিছিল, কাজের উদ্বোধন, অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ- আরও কত কি! তবে সবচেয়ে বেশি যা নজরে পড়ে, তা হচ্ছে ব্যানার-বিলবোর্ড। এসব টানানোর জন্য তেমন কোনো উপলক্ষেরও প্রয়োজন হয় না। ছোটখাটো কারণে শীর্ষ নেতাদের ছবির সঙ্গে নিজের চেহারাটা দেখাতে পারাতেই হয়তো সার্থকতা!
কিন্তু, এসব বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার যে জনগণের ভোগান্তির কারণ হতে পারে, তা নিয়ে যেন মাথাব্যাথা নেই কারও। এক্ষেত্রে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানতে চান না অনেকেই।
সম্প্রতি এমনই এক ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে পাশের দেশ ভারতে। গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) চেন্নাইয়ে রাস্তার মধ্যে টানানো একটি ব্যানার গায়ে পড়ে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন এক তরুণী। এ নিয়ে সরব হয়েছে দেশটির আদালত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যমগুলো। দুর্ঘটনার পরপরই ওই এলাকায় রাজনৈতিক দলের সব ব্যানার-পোস্টার সরিয়ে ফেললেও থামছে না বিতর্ক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ২৩ বছর বয়সী শুভশ্রী রবি পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কাজ করতেন একটি আইটি কোম্পানিতে। ঘটনার দিন অফিস শেষে নিজের স্কুটিতে বাসায় ফিরছিলেন তিনি।
পল্লভারাম-থোরাইপক্কম রেডিয়াল রোড এলাকায় পৌঁছালে রাস্তার মধ্যে ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে ঝোলানো একটি বড় ব্যানার খুলে তার গায়ের ওপর পড়ে। এতে ব্যস্ত সড়কের মধ্যেই পড়ে যান শুভশ্রী। সঙ্গে সঙ্গে একটি পানির ট্যাংকার সজোরে ধাক্কা দেয় তাকে। মাথায় হেলমেট থাকলেও বাঁচানো যায়নি এ মেধাবী তরুণীকে। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান তিনি।
জানা যায়, ব্যানারটিতে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ই পালানিসামি, তার ডেপুটি পান্নিরসিভলাম ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার ছবি ছিল। আর এটি টানিয়েছিলেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল অল ইন্ডিয়া আন্না মুনেত্রা কাজাগামের (এআইডিএমকে) এক নেতা। কারণ, ওই নেতার পরিবারের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
দক্ষিণ চেন্নাইয়ের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার সি মহেশ্বরী জানিয়েছেন, ব্যানারটি অবৈধভাবে টানানো ছিল। যারা এটি টানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শুভশ্রীকে ধাক্কা দেওয়া ট্যাংকারের চালককে আটক করা হয়েছে। যে প্রেসে ওই ব্যানার প্রিন্ট করা হয়েছিল, সেটিও সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বেপরোয়া গাড়িচালনা, জননিরাপত্তা বিপন্ন করা ও অসাবধানতার কারণে মৃত্যুর দায়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
তবে, যে নেতা এ ব্যানার টানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করেননি এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে, শুভশ্রী মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন মাদ্রাজ হাইকোর্ট। এ বিষয়ে সরকারের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন বলে মন্তব্য করেন আদালতের বিচারক।
একই বিষয়ে সরকার ও পুলিশের সমালোচনায় মেতেছে বিরোধীদল দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগামও (ডিএমকে)। দলের প্রধান এম কে স্ট্যালিন এক টুইট বার্তায় বলেন, সরকারের উদাসীনতা, কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও পুলিশের অযোগ্যতাই শুভশ্রী রবির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ক্ষমতার অহংকারের কারণে এ নৃশংসতায় আর কত প্রাণ বলি হবে?
কোনো অনুষ্ঠানে ব্যানার-বিলবোর্ড থাকলে সেখানে আর যোগ দেবেন না বলে নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন ডিএমকে প্রধান। যে এসব টানাবে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দল এআইএডিএমকে’ও আর কোনো ব্যানার-বিলবোর্ড না টানাতে নির্দেশ দিয়েছে নেতাকর্মীদের।
২০১৭ সালের নভেম্বরে হবু স্ত্রীকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তামিলনাড়ু ফিরছিলেন ৩০ বছর বয়সী এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু, রাস্তার মধ্যে বসানো ক্ষমতাসীন দলের একটি বিলবোর্ডের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তার মোটরসাইকেলের।
পরে, ওই বছরের অক্টোবরে পাবলিক প্লেসে সব ধরনের বিলবোর্ড-ব্যানার নিষিদ্ধ করেন মাদ্রাজ হাইকোর্ট