নূরের ওপর হামলায় কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই ছাত্রলীগের
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের কারও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন এই সংগঠন থেকে নির্বাচিত ডাকসু প্রতিনিধিরা। গতকাল রবিবার ডাকসু ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ডাকসু ভবনের ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত কোনো ডাকসু প্রতিনিধির বিন্দুমাত্রও সংশ্লিষ্টতা নেই। আমরা স্পষ্টভাবে আরও বলতে চাই যে, উল্লেখিত সংঘর্ষ, হামলা-প্রতি হামলার সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কেউ কোনোভাবেই জড়িত নয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাদ্দামের সঙ্গে ছিলেন ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিম অর্ণি, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার, ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তানভীর, সদস্য রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তানভীর হাসান সৈকত, তিলোত্তমা শিকদার, রাইসা নাসের, মুহা. মাহমুদুল হাসান, চিবল সাংমা, রফিকুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ।
তবে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন না। ‘ব্যক্তিগত কারণে’ রাব্বানী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানান সাদ্দাম।
সাদ্দাম ডাকসু ভবনে হামলার ঘটনাকে ‘ন্যক্কারজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এই ঘটনাটি ঘটে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামক একটি সংগঠনের উপর গত ১৭ ডিসেম্বর তারিখে হামলার জের ধরে। এই দুটি সংগঠন ‘মিডিয়াবাজির’ মাধ্যমে পরিচিতি লাভের আশায় এই সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হামলার দিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে সাদ্দাম বলেন, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হামলার এক পর্যায়ে নূর ডাকসু ভবনে অবস্থান গ্রহণ করে এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ভবনের বাইরে। ভবনের দরজা বন্ধ করে ভিতরে নূর তার বহিরাগত সঙ্গীদের নিয়ে বাঁশ, লাঠি, রড, পাইপ সজ্জিত অবস্থায় মারমুখী থাকে যার ভিডিও আমরা দেখতে পাই নূরের নিজ ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পরিচালিত সরাসরি স¤প্রচারের মাধ্যমে।
আমরা আরও দেখতে পাই, নূরের সঙ্গীরা ঢিল ছুঁড়ে ডাকসুর জানালার গ্লাস ভেঙে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উপর হামলা চালায়। আরেকটি ভিডিও ফুটেজে আমরা লক্ষ করি, নূরের সহযোগীরা ডাকসুর বারান্দায় সশস্ত্র অবস্থায় দলবেঁধে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের উপর সংঘর্ষে লিপ্ত হবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবার দৃশ্য। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ডাকসু ভবনের বাইরে অবস্থান করে নিজেদের শক্তির জানান দেয়। এতে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের আবেগের, আমাদের পরম আরাধ্য, পবিত্র ডাকসু ভবন।
লিখিত বক্তব্যে সাদ্দাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে আমরা এই পালটাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে জানা মাত্রই যে যেখানে ছিলাম ছুটে আসার চেষ্টা করি ডাকসু ভবনকে রক্ষার এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য।
কিন্তু হামলা থেকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সমর্থকদের নিবৃত করতে সফল হলেও ভবনের ভিতরে অবস্থিত ভিপি নূরের সমর্থকদের হামলা ও ঢিল ছোড়া বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় ডাকসু মনোনীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য সনজিত চন্দ্র দাস এবং আমি ভবনের নিচে উপস্থিত হই। ডাকসু ভবনের নিচে এসে আমরা প্রথমেই বিক্ষুব্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ পরিহার করে স্থান ত্যাগ করার আহŸান জানাই। আমাদের আহŸানে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ পিছু হটে। এরপর ডাকসুতে কর্মরত স্টাফরা দরজা খুলে দিলে সিনেট সদস্য সনজিত ও আমি ভিপি নূরের কক্ষে গিয়ে তাকেও সংঘর্ষ পরিহারের আহŸান জানাই, যেমনটি জানানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতি। একইসাথে আমরা নূরকে আহŸান জানাই, উপস্থিত বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসু ভবন ত্যাগ করার জন্য যাতে চলমান সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটে।
নূর এ আহŸানে সাড়া না দিয়ে উল্টো সিনেট সদস্য সনজিতের সাথে অসৌজন্যমূলক, ধর্মীয় উসকানিমূলক ও সা¤প্রদায়িক মন্তব্য করেন। এরপর পুনরায় নূরকে বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসু ভবন ত্যাগ করার আহŸান জানিয়ে আমরা অবরুদ্ধ ডাকসুর আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিন অর্নি ও সদস্য রাইসা নাসেরকে উদ্ধার করে ডাকসু ভবন ত্যাগ করি। আমরা ত্যাগ করার পর বিবদমান দুই পক্ষ আবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার উপস্থিত হয়ে সংঘর্ষ থামান এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এই ঘটনার পর নূর ভিপি পদে থাকার ‘যোগ্যতা হারিয়েছেন’ দাবি করে ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পবিত্র আমানত ডাকসু ভবনকে রক্ষা না করে বরং এই ভবনকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে এই নিজের লেলিয়ে দেওয়া বহিরাগত বাহিনী দিয়ে ভবনে ভাংচুরে অংশগ্রহণ করে নূর ভিপি পদে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা আবারও হারিয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।