নুসরাত হত্যা: অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ তদন্তের নির্দেশ
ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি ও হত্যার ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
জন প্রশাসন ও শিক্ষা সচিবকে বিষয়টি তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।
রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ আদালতে নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল বাশার।
নুসরাতকে যৌন হয়রানি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান এবং ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
জনপ্রশাসন, শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ফেনীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সোনাগাজী থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
দৈনিক সমকালে ২১ জুন ‘এডিএম এনামুলের ভূমিকা, পুলিশের তদন্তের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন মন্ত্রণালয়ের’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট আবেদনটি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের ভূমিকা নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর যে তদন্ত করেছিল, তার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মল্লিকা খাতুনের স্বাক্ষরে এক চিঠিতে এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, পুলিশ সদর দপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যাপারে তদন্ত করেছে কি-না, করে থাকলে কোন এখতিয়ার বলে করেছে, তা স্পষ্ট করতে হবে।
সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ সদর দপ্তরের এক ডিআইজিকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করেছিল পুলিশ সদর দপ্তর।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফেনীর এসপি, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি, দুই এসআইয়ের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির তথ্য উঠে আসে। সেখানে চারজনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশও করা হয়।
এছাড়া ফেনীর তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি পি কে এনামুল কবিরের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে বলা হলেও তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার মা গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ওই মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়া হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ওই শিক্ষার্থী।
সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪ এপ্রিল নুসরাত ও তার মা অধ্যক্ষ সিরাজের বিচার চাইতে গভর্নিং বডির সভাপতি এনামুল করিমের অফিসে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিচার তো দূরের কথা, তিনি ঘটনাটি চেপে যেতে বলেন নুসরাতকে।
“এনামুল তাদের বলেন, ‘এখন কেন এসেছেন। আপনারা তো মামলা করে ফেলেছেন। মামলা করার আগে এলে দেখতাম, কী করা যায়।’
“নুসরাতকে তিনি আরও বলেন, ‘প্রিন্সিপাল খারাপ, সবাই জানে। তুমি তার কাছে গেছ কেন। যখন গেছ, তখন হজম করতে পারলে না কেন? তোমার বাবাকে মাদ্রাসায় বসানোর জন্য এ রকম নাটক সাজিয়েছ’।”
অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার পর এই এনামুল করিমকে প্রধান করেই তদন্ত কমিটি করে জেলা প্রশাসন।