নুসরাত হত্যা:চার্জশিটে ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে পিবিআই
ফেনীর সোনাগাজী এলাকার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ১৬ জনের প্রত্যেকেরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মঙ্গলবার (২৮ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংস্থাটির প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, মামলার এজারনামীয় ৮ জন এবং এজাহারের বাইরে ৮ জনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ৭২২ পৃষ্ঠার চার্জশিটে ঘটনার সঙ্গে প্রত্যেকের ভূমিকার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা প্রত্যেকেরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি।
চার্জশিটে বাদীসহ ৯২ জনকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আদালতে ৭ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নুসরাত হত্যা মামলায় যে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে তারা হলেন- মাদ্রাসা অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা (৫৭), আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন (৫৫), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), মোহাম্মদ শামীম (২০), মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।
এদিকে এরইমধ্যে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ধারণ ও তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সোমবার (২৭ মে) বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন তার বিরুদ্ধে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
একই সঙ্গে আগামী ১৭ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সংক্রন্ত প্রতিবেদনের জন্য দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী নুসরাতের মা। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর সোনাগাজী থানার ওসির কক্ষে ফের হয়রানির শিকার হতে হয় নুসরাতকে। নিয়ম না মেনে জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।
গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আগ মুহূর্তে মিথ্যা কথা বলে নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
ওইদিন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু হয়।