December 21, 2024
জাতীয়

নুরের ওপর হামলা: মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিন নেতা রিমান্ডে

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সঙ্গীদের ওপর হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।  ঢাকার মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে তিন দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।

এই তিনজনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত তূর্যকে সোমবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয় মঙ্গলবার সকালে।

পুলিশের পক্ষ থেকে সোমবার রাতে শাহবাগ থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারে আল মামুন ও তূর্যের নাম থাকলেও শান্তর নাম ছিল না। এই তিনজনের মধ্যে আল মামুন ছাত্রলীগের গত কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ সম্পাদক পদে ছিলেন। তূর্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শান্ত বঙ্গবন্ধু হল সংসদের জিএস।

মঙ্গলবার দুপুরে এই তিনজনকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে ৫ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সর্দার। আদালতে রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মাহমুদুর রহমান। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করেন মো. সাগর মিয়া।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামিরা হামলার ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং পলাতক  আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

এর বিরোধিতা করে আসামিদের আইনজীবী সাগর মিয়া বলেন, ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ  না থাকার কারণে আসল ঘটনা পর্যালোচনা করা যাচ্ছে না। নতুন এই দল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে সহ্য করতে না পেরে কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এ কারণেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞসাবাদ করার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনে কারা ফটকে তাদের জিজ্ঞেসবাদ করতে পারে। শুনানি শেষে বিচারক মইনুল ইসলাম তিন আসামির প্রত্যেককে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত রোববার ডাকসু ভবনে নূর ও তার সঙ্গীদের ওপর হামলা হওয়ার পর সমালোচনার মধ্যে সোমবার রাতে মামলা করে পুলিশ। আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩৫ জনকে সেখানে আসামি করা হয়।

এজাহারে নাম থাকা বাকি পাঁচজন হলেন- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এএসএম আল সনেট, এফ রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার, কবি জসীম উদ্দিন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আল রিয়াদ, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব হাসান নিলয় এবং জিয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মাহিম।

এজাহারে বলা হয়, রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে কর্মসূচি শেষে মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে যাচ্ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। সে সময় ডাকসু ভবনের সামনে ভিপি নুরুল হক নূর এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি এবং ঢিল ছোড়াছোড়ি হয়।

এক পর্যায়ে নূররা ডাকসু ভবনের ভেতরে ঢুকে গেলে আসামিরা লাঠিসোঁটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ‘অবৈধভাবে জনতাবদ্ধ হয়ে’ ডাকসু ভবনে ঢুকে পড়ে। তারা ভিপি নূর এবং তার অনুসারীদের এলোপাতাড়ি মারধর করে এবং ডাকসুর ভিপির কক্ষের জানালার কাচ, চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাংচুর করে।

তখন মারামারিতে অংশ নেওয়া মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা হত্যার উদ্দেশ্যে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূরসহ তার সঙ্গী অন্যান্য নেতাকর্মীদের রাঠিসোঁটা ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে। এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫, ৩২৬, ৩০৭, ৪২৭ ও ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে ৩০৭ ধারায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগের কথা বলা হয়েছে।

সেদিন ডাকসু ভবনে নূরদের ওপর হামলার সময় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীকেও সেখানে দেখা যায় বলে খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ভিপি নূরের কক্ষে ঢুকে বাতি নিভিয়ে সেখানে থাকা সবাইকে এলোপাতাড়ি পেটান বলে আহতদের ভাষ্য। হামলায় আহত নূরসহ ২৮ জনকে সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে পাঁচজন মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বাকিরা চিৎিসা নিয়ে ফিরে গেছেন।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *