November 25, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

নিষিদ্ধ হচ্ছে সাকার ফিশ

দেশের সব ধরনের জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যাকুয়ারিয়ামের শোভাবর্ধক ও আবর্জনাভুক ‘সাকার’ মাছ। দ্রুত বংশবিস্তারের মাধ্যমে দখল করছে অন্য মাছের আবাসস্থল। উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছের ডিম ও নিচের শ্যাওলা-আবর্জনা খেয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে খাদ্যশৃঙ্খলে। খাবার হিসেবে অত্যন্ত নিম্নমানের এই মাছ দ্রুত দখল নিচ্ছে জলাশয়ের। সব মিলিয়ে এটি এখন দেশি মাছের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে এবার মাছটি নিষিদ্ধে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে আইনগতভাবে এই মাছটি আমদানি, উৎপাদন, বিপণনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে।

এর আগে বাংলাদেশে পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর মাছ নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর থেকে এই দুই প্রজাতির মাছ আমদানি, উৎপাদন, বিপণন বন্ধ রয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় নিষিদ্ধ হচ্ছে আবর্জনাভুক সাকার ফিশ।

২০০৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পিরানহা ও ২০১৪ সালের ১০ জুন আফ্রিকান মাগুর আমদানি, উৎপাদন, বিপণন নিষিদ্ধ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গেজেট প্রকাশিত হয়। কিন্তু এরপরও পিরানহা মাছ রূপচাঁদা নামে এবং ছোট আকারের আফ্রিকান মাগুর বিক্রি করা হচ্ছে দেশি মাগুর বলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নানান সময়ে বিপুল পরিমাণের আফ্রিকান মাগুর এবং পিরানহা মাছ উদ্ধার করা হয়েছে। শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস রুলস, ১৯৮৫ এর কয়েকটি ধারা সংশোধন করে আফ্রিকান মাগুরের উপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বিদেশ থেকে আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছ, মাছের রেণু ও পোনা আমদানি করলে জেল জরিমানার বিধান রেখে মৎস্য সংগনিরোধ আইন-২০১৭ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ। এই আইন অমান্য করলে দুই বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অববাহিকার সিলারিফর্মস বর্গের লোরিকারিডাই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সাকার মাছ। আমাদের দেশে ‘সাকার’, ‘প্লেকো’ এবং স্থানীয়ভাবে ‘চগবগে’ নামেও পরিচিত। মাছটি বর্তমানে উন্মুক্ত জলাশয় ও চাষের পুকুরে পাওয়া যাচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। স্বাদু পানির এ মাছটি শ্যাওলা পরিষ্কারক বাহারি মাছ হিসেবে সাধারণত অ্যাকুরিয়ামে ব্যবহার করা হয়।

মৎস্য সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০১ বা ২০০২ সালের দিকে ইউরোপের এক কূটনীতিক মেয়াদ শেষে চলে যাওয়ার আগে ঢাকার গুলশান লেকে কয়েকটি সাকার মাছ ছেড়ে দেন। এরপর সেখান থেকেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এটি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত সাকার ফিশ ১৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এটি পানি ছাড়াই প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে। মৎস্য আইন ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে দেশীয় প্রজাতির মাছের ক্ষতি করে এমন যে কোনো বিদেশি মাছ আমদানি ও চাষ দণ্ডনীয় অপরাধ।

জেলেরা জানান, বুড়িগঙ্গাসহ দেশের কিছু নদ-নদীতে জাল ফেললে দেশীয় মাছের চেয়ে সাকার মাছই বেশি উঠছে। এসব মাছ পেলে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। অন্যথায় এসব মাছ আবার অন্য মাছের ডিম খেয়ে ফেলে। দেশীয় মাছ ধ্বংস করে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধান না হলে সাকার মাছের সংখ্যা আরও বাড়বে।

ক্ষতিকর প্রভাব

দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে বিধায় উন্মুক্ত জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধি ও প্রজননে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও পরিবেশ নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। এ মাছটি দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে সক্ষম বলে জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়লে জলাশয়ের পাড়ে ১ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত গর্ত তৈরি করে তা ধ্বংস করে।

দেশীয় প্রজাতির মাছের ডিম ও রেণু ভক্ষণ করে মাছের বংশ বিস্তারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। জলাশয়ের তলার শ্যাওলা ও জৈব আবর্জনা খায় বিধায় জলজ পরিবেশের সহনশীল খাদ্যশৃঙ্খলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সাকার মাছের সঙ্গে স্বল্পায়ু, তৃণভোজী, খরাকাতর দেশীয় মাছের অসম প্রতিযোগিতা হয় বলে দেশীয় মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ নানাবিধ ক্ষতি করে।

এসব বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক জাগো নিউজকে জানান, সাকার ফিস অফিসিয়ালি বাংলাদেশে আসেনি। কোনো না কোনোভাবে এটি বাংলাদেশে আসছে। এটা নিষিদ্ধের জন্যও গেজেট হচ্ছে। সেটার যে প্রক্রিয়া লাগে সেটি আমরা করছি। আমাদের আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং হবে। এরপর এটি জিও হিসেবে জারি হবে। শিগগির এটির গেজেট প্রকাশ হবে।

তিনি আরও বলেন, পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর নিষিদ্ধ করে গেজেট হয়েছে। এখন মেজর কোনো জায়গায় গেলেই যে পিরানহা বা আফ্রিকান মাগুর পাওয়া যাবে এমন কিন্তু না। পিরানহা কোথাও কোথাও গোপনে থাকতে পারে, কিন্তু সেটা তেমন প্রকাশ্যে আসে না। এটার বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। গণমাধ্যমে সে খবরও আসে জেল-জরিমানা করার বিষয়ে। সেজন্য এটি এখন শূন্যের কোঠায় এসে গেছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *