November 25, 2024
আন্তর্জাতিকলেটেস্ট

নির্যাতিত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে ক্ষমা চাইবেন পোপ

কানাডায় গেলেন বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান পোপ ফ্রান্সিস। সেখানে নির্যাতিত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে ক্ষমা চাইবেন তিনি।

দশকের পর দশক ধরে অত্যাচার চলেছে কানাডায় ক্যাথলিক গির্জার নিয়ন্ত্রণাধীন আবাসিক স্কুলগুলোতে। ধর্মের ঘেরাটোপে আদিবাসী শিশুদের উপরে হওয়া সেই নির্যাতনের কোনও বিচার হয়নি, অপরাধীদের কোনও শাস্তি হয়নি। অবশেষে নির্যাতিতদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ক্যাথলিক গির্জার হয়ে ক্ষমা চাইতে রোম থেকে কানাডা পাড়ি দিলেন পোপ ফ্রান্সিস।ভ্যাটিকান জানিয়েছে, সপ্তাহব্যাপী এই এডমন্টন সফর হল ‘অনুতাপের তীর্থযাত্রা’।

রবিবার এডমন্টনে পোপকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, গভর্নর জেনারেল মেরি সিমন।

কানাডার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দেখা করবেন পোপ। ক্যাথলিক গির্জার গায়ে যে দীর্ঘদিনের কলঙ্কের দাগ লেগে রয়েছে, তা নিয়ে কথা বলবেন। পোপ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবেন তাদের কাছে।

১৮০০ শতকের শেষ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত, কানাডায় অন্তত ১৩৯টি স্কুল চলত গির্জার নিয়ন্ত্রণে। এই সব আবাসিক স্কুলে কানাডার আদিবাসী, জনজাতি শিশুদের পাঠিয়ে দিত সরকার। এক রকম কয়েদ করে রাখা হতো তাদের। ছোট ছোট বাচ্চাদের বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল তাদের পরিবার থেকে। নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে গিয়েছিল ওরা। সেই সঙ্গে চলত শারীরিক ও যৌন নির্যাতন। অত্যাচার করত এই সব স্কুলের হেডমাস্টার ও অন্য শিক্ষকেরা। হাজার হাজার বাচ্চা মারা গিয়েছিল অসুস্থ হয়ে, অপুষ্টিতে কিংবা স্রেফ ভালবাসা না পেয়ে, অবহেলায়।

গত বছরও ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও সাসকাটচেওয়ানের দু’টি আবাসিক স্কুলে কয়েকশ’ পরিচয়হীন কবর মিলেছে। কানাডার ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গির্জার অবহেলা, অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার হয়ে এই সব আবাসিক স্কুলে ৪ হাজারেরও বেশি আদিবাসী শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ১৩০০- এর বেশি কবর মিলেছে। কানাডায় দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, পোপকে ক্ষমা চাইতে হবে। এই অপরাধ স্বীকার করতেই হবে।

গত এপ্রিলে পোপের সঙ্গে দেখা করতে ভ্যাটিকানে যান কানাডার আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর নেতারা। পোপ সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, ওই কলঙ্কের কথা ভাবলে তার কষ্ট হয়, লজ্জা লাগে। যাদের হাতে শিক্ষার দায়িত্ব ছিল, তাদের এই অপরাধ মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি বলেছিলেন, “যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, আপনাদের অস্তিত্বকে যেভাবে অশ্রদ্ধা করা হয়েছে, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে আঘাত করা হয়েছে, তা লজ্জার।”

কিউবেক ও ইকালুয়েটেও যাবেন পোপ। তার সঙ্গে থাকবেন দুই কানাডিয়ান কার্ডিনাল, মার্ক ওলেট ও মাইকেল জারনি।

এ মাসের গোড়ার দিকে আফ্রিকা যাওয়ার কথা ছিল ৮৫ বছর বয়সি পোপ ফ্রান্সিসের। কিন্তু হাঁটুর ব্যথা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার জন্য সফর বাতিল করতে হয়। ১০ ঘণ্টার ফ্লাইটে কষ্ট করেই কানাডা যেতে হয়েছে তাকে। সঙ্গী হয় লাঠি, নয়তো হুইলচেয়ার। এডমন্টনে বক্তৃতা দেবেন পোপ। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *