নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তদের ফাঁসি কার্যকর ১ ফেব্রুয়ারী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ভারতের বহুল আলোচিত মেডিকেল শিক্ষার্থী নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত চার আসামীর সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের নতুন সময় ঘোষণা করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন দেশটির আদালত। শুক্রবার আসামী মুকেশ সিংয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ নাকচ করে দেয়ার পর আগামী ১ ফেব্রæয়ারি সকাল ছয়টায় অভিযুক্তদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এক অভিযুক্তের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে এ পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
ভারতের আইনে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে অন্তত ১৪ দিনের নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে। সেই হিসাবে আগামী ১৪ ফেব্রæয়ারি সকাল ছয়টায় নয়াদিল্লির তিহার কারাগারে অভিযুক্তদের সাজা কার্যকর হবে।
গত সপ্তাহে দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিল, নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত বিনয় শর্মা, মুকেশ কুমার, অক্ষয় কুমার সিংহ এবং পবন গুপ্তকে আগামী বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল সাতটায় তিহার কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দেশটির তরুণী মেডিকেল ছাত্রীকে চলন্ত বাসে নির্যাতন, গণধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনার সাত বছর পর তাদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্ধারিত সময়ের মাত্র পাঁচদিন আগে গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন তারিখের আবেদন করে তিহার কারাগার কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, সবার প্রাণভিক্ষার আবেদন মীমাংসা হওয়ার পরই সাজা কার্যকর করা যাবে।
নয়াদিল্লি সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী রাহুল মেহরা বলেন, রাষ্ট্রপতি আসামির প্রাণ ভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে এখন আর কোনও বাধা নেই। তবে মুকেশের প্রাণভিক্ষার বিষয়টি মিটে গেলেও এখনো তিন আসামির আবেদনের সুযোগ আছে।
আসামিদের মৃত্যুদÐ কার্যকরে আরও বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্ভয়ার মা। মেয়ের ওপর হওয়া অমানসিক নির্যাতনের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাদের (আসামি) যদি অধিকার থাকে, সাত বছর আগে হত্যার শিকার হওয়া মেয়ের জন্য আমাদেরও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।’
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর দিল্লির একটি হলে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে বাসে করে ফিরছিলেন প্যারামেডিক্যালের ওই ছাত্রী। যাত্রী কম থাকায় বাসের চালক-সহকারীসহ অন্তত ছয়জন মিলে নির্ভয়ার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে বাসের পেছনের দিকে ফেলে রাখে। মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। পরে দু’জনকে দিল্লির একটি সড়কের পাশে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।
আহতাবস্থায় দেশটির সরকার মেডিক্যালের এই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠায়। সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্ভয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে দেশটির লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করতে থাকে।
নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত আরেক ধর্ষক অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে তিন বছরের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।
২০১৫ সালে সাজার মেয়াদ শেষে এই তরুণ মুক্তি পাওয়ার পর আবারও ভারতে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দেশটির ধর্ষণের সাজার আইন পরিবর্তন করে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে বিবেচনা করার বিধান করা হয়।
২০১৩ সালে দেশটির দ্রæত বিচার আদালত বাকি চার ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করে। পরে দেশটির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগও ওই সাজা বহাল রাখে।