November 23, 2024
খেলাধুলালেটেস্ট

নির্ভার থাকতে সাকিব-মুশফিকদের নাচ-গান আর কুইজ

শরীফুল ইসলামের কথাটা একটু আগেই চোখের সামনে দেখা কুশল মেন্ডিসের মারা একটা ছক্কা মনে করিয়ে দিল। ফজলহক ফারুকির শর্ট বলটা তাঁর ব্যাটের কানা ছুঁয়েই ফাইন লেগ দিয়ে উড়ে মাঠের বাইরে।

শরীফুল কী বলেছেন, সেটা আরেকটু পরে বলছি। তার আগে জেনে নিন পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচের আগের দিনটা আজ কীভাবে পারল করল বাংলাদেশ দল।

লাহোরে বাংলাদেশ দল আজও অনুশীলন করেনি। হোটেল জিম, সুইমিং, টিম মিটিং এবং নিজেদের মধ্যে খেলা নিয়ে আলোচনা—এসব করেই কেটেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচের আগের দিনটা।

তবে এ রকম সাদামাটা দিনের শেষটা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা কাটিয়েছেন দারুণ মজায়, নিজেদের মধ্যে উপভোগ্য এক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লড়ে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা কুইজের, যার সঙ্গে মিলেমিশে ছিল নাচ এবং গানও।

বিকেলে টিম মিটিং শেষে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মিটিং রুমেই হয় সেই প্রতিযোগিতা। টিম বয় থেকে শুরু করে ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফের সদস্য এবং আর যারা দলের সঙ্গে আছেন, সবাইকে নিয়ে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে হয়েছে তা।

‘নিজেদের একটু নির্ভার রাখা, সবাই মিলে একটু মজা করার জন্যই এই আয়োজন। এ রকম কিছু নতুন হলো আমাদের দল। সবাই বেশ উপভোগ করছে’—কুইজ প্রতিযোগিতা নিয়ে বলছিলেন দলের এক সদস্য।

আজ অনুশীলন না করার অন্যতম কারণ লাহোরের ভ্যাপসা গরম। ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে অনুশীলন করে ম্যাচের আগেই যেন ক্রিকেটারদের ক্লান্তি চলে না আসে। এমন আবহাওয়ায় অভ্যস্ত পাকিস্তান দল অবশ্য লাহোরের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমি মাঠে অনুশীলন করেছে। তার আগে সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে কথাও বলেছেন নাসিম শাহ।

বাংলাদেশ দল মাঠে আসেনি। ওদিকে পার্ল কন্টিনেন্টালের নিরাপত্তা জালে সাংবাদিকদের জন্যও নেই কোনো ছাড়। ম্যাচের আগের দিন তাহলে দলের চিন্তাভাবনা জানার উপায় কী? অগত্যা গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে বসেই মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমামের সহায়তায় মুঠোফোনে ধরা গেল পেসার শরীফুলকে।

আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারানো গ্রুপ পর্বের ম্যাচের পর বাংলাদেশ এখন ভালোভাবেই জানে যে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উইকেট বোলারদের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং। আজও আফগান বোলারদের সেই ‘স্বাদ’ কিছুটা দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। রানআউট হয়ে অল্পের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করার আগে মেন্ডিস করে গেছেন ৮৪ বলে ৯২ রান। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রানে শেষ হয়েছে শ্রীলঙ্কার ইনিংস। তবে এই উইকেটে সে রান জেতার জন্য যথেষ্ট হয় কি না, সেটিও একটা কৌতূহলের বিষয়।

শরীফুলের কথাটাও লাহোরের উইকেট নিয়েই। যার সারমর্ম— এই উইকেট বোলারদের জন্য মোটামুটি বিপৎসংকুল উপত্যকা। কালকের পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা বাংলাদেশের বোলার না ব্যাটসম্যান কাদের জন্য বেশি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দলের এই পেসার বলেন, ‘গত ম্যাচে উইকেট একটু ফ্ল্যাট ছিল। বোলারদের জন্যই বেশি চ্যালেঞ্জিং এই উইকেট। এখানে অনেক নিয়ন্ত্রিত বোলিং করা লাগে। বাজে বোলিংয়ের সুযোগ নেই। ভালো কিছু পেতে হলে ভালো জায়গায় বল করে যেতে হবে।’

এমন উইকেটেও অবশ্য আফগানদের বিপক্ষে ৯ ওভারে ৩৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন শরীফুল, দিয়েছেন ব্রেক থ্রু। দলও যেন এখন তাঁকে এই ভূমিকায় দেখতেই পছন্দ করে। বোলার হিসেবে এটা শরীফুলের জন্য বাড়তি তৃপ্তির, ‘অনেক দিন ধরে অনুশীলন করে কিছু জিনিস শিখেছি। এখন সেগুলো কাজে লাগছে। ব্রেক থ্রুটা যখন দিতে পারছি খুব ভালো লাগছে, চেষ্টা করব এটাই যেন করে যেতে পারি।’

হ্যামস্ট্রিং চোটে পড়ে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেনের এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে পড়াটা খারাপ লাগছে শরীফুলের। তবে তাঁর আশা—লিটন দাস চলে আসায় দলের ব্যাটিং ভারসাম্য হারাবে না।

আইসিসি ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে বর্তমানে ১ নম্বর দল পাকিস্তান। তবে শুধু এটুকু বললেই বোঝা যাবে না মাঠে দলটা কতটা বিধ্বংসী এখন। নিজেদের খেলা গত ১০ ওয়ানডেতে হার মাত্র একটি। পাল্লেকেলেতে এশিয়া কাপে খেলা সর্বশেষ ম্যাচেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল পাকিস্তান। বৃষ্টিতে খেলা ভেসে যাওয়ার আগেই ৪৮ দশমিক ৫ ওভারে ২৬৬ রান করে অলআউট ভারত। ভারতের সব উইকেটই নিয়েছিলেন পাকিস্তানের তিন পেসার মিলে।

আর মুলতানে প্রথম ম্যাচে নেপালকে ১০৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে পাওয়া ২৩৮ রানের বিশাল জয়ে বড় ভূমিকা ছিল অধিনায়ক বাবর আজম ও ইফতেখার আহমেদের সেঞ্চুরির। পরে শাদাব খানের ৪ উইকেট জয়টাকে করে দেয় আরও সহজ।

মোটকথা এই টুর্নামেন্ট এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের বোলিং-ব্যাটিং সবই এক শতে নিরানব্বই পাওয়ার মতো। এক শতে এক শ নয় কারণ, এরপর তো তাহলে আর কিছু করারই থাকে না!

এমন দুরন্ত ফর্মে থাকা পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগেও শরীফুলের চিন্তাভাবনা বেশ সহজ-সরল। পাকিস্তানের অবস্থা র‍্যাঙ্কিংয়ে যত ভালোই হোক, যত বিধ্বংসী ফর্মেই দলটা থাকুক, কাল গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে নতুন করেই মাঠে নামতে হবে তাদের। যেখানে অ্যালবামের পুরোনো পাতা উল্টে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

শরীফুল সেটিই মনে করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এটা মানতেই হবে, ওরা ভালো দল। র‍্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বর দল। তবে দিনশেষে খেলাটা বল-ব্যাটের। আমরা ম্যাচটাকে ওভাবেই দেখছি। স্বাভাবিক একটা ম্যাচের মতো নিতে চাচ্ছি। এরপর দেখা যাক, খেলার পর কী হয়। খেলার আগে এ নিয়ে বেশি কিছু ভাবতে চাচ্ছি না।’

কঠিন পরীক্ষার আগের রাতে সবচেয়ে জরুরি ভালো ঘুম। পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার মতো পরীক্ষার আগে সেটা নষ্ট করে লাভ কী! তার চেয়ে নাচ-গান আর কুইজের আনন্দে নির্ভার থাকাটাই তো ভালো।

ক্রীড়া ডেস্ক

শেয়ার করুন: