নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সীমা যেন লংঘন না করে : এইচটি ইমাম
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
নির্বাচন পর্যবেক্ষণে গিয়ে দূতাবাস কর্মকর্তারা যেন তাদের কর্মপরিধির সীমা লংঘন না করেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম এ কথা জানান।
দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে ওই বৈঠকে সিইসি কে এম নূরুল হুদা ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও কবিতা খানমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত জাতীয় নির্বাচনে কোনো একটি দেশের রাষ্ট্রদূত ক্যামেরা নিয়ে বুথের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন জানিয়ে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।
এইচটি ইমাম বলেন, মান্যবর রাষ্ট্রদূতদের যথেষ্ট সম্মান করি। বাংলাদেশের মতো এত আদর-যতœ কেউ করে না। সেটা তো অব্যাহত থাকবে। কিন্তু আতিথেয়তা মানে এই নয় যে কেউ সেটির সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করবে।
এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ৭০ জনের বেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে দূতাবাসগুলোর নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশি ও সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকরা রয়েছেন।
ডিপ্লোম্যাটদের জন্য যে নিয়ম কানুন, সেটা দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ‘প্রযোজ্য হতে পারে না’ বলে স্মরণ করিয়ে দেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচটি ইমাম। তিনি বলেন, তাদের কোনো ক‚টনৈতিক দায়মুক্তিও নেই। কাজেই তাদের বেলায় আইন কানুন যেভাবে আছে সেভাবেই যেন পালন করা হয়। তারা অনেক কিছু করতে পারবে কিংবা যেখানে সেখানে যেতে পারবে তা মনে করার সুযোগ নেই।
এই ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকরা’ যেন বিধি-বিধান মেনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন সি বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের জোরাল পদক্ষেপ চেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা। এইচটি ইমাম বলেন, তারা যেন পর্যবেক্ষণের আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান মেনে চলেন। কোনো বিশেষ দেশের কেউ যেন বেশি মাতব্বরি না করেন। এটি আপনাদেরকেও বলে রাখলাম।
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, অন্যান্য দেশে পর্যবেক্ষণে গেলেও তাদের ওপর অনেক রকম বিধি নিষেধ থাকে। অনেক নিয়মকানুন মানতে হয়। আমাদের দেশে অনেক সময় অনেকে অনেক কথা বলে ফেলেন, যেগুলো আমাদের সার্বভৌমত্বকে কটাক্ষ করার শামিল। আজকের বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই। গণতন্ত্র সুসংহত, উন্নত বাংলাদেশ। আমরা কোন উচ্চতায় চলে গেছি সেটা গতকালের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলেই বোঝা যাবে। আমরা চাই, তারা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক সেটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোড অব কন্ডাক্ট মেনে।
নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও ভোটের দিন বিএনপি কর্মীরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে পারে বলে শঙ্কার কথা জানান এইচটি ইমাম। তিনি বলেন, ভোট গ্রহণের আগ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য এসেছি। কীভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করতে পারি, শান্তি শৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে। সার্বিক অবস্থা ভালো, আমাদের সহযোগিতার জন্যই এমনটি হয়েছে। আমরা চাই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়।
২০১৪ ও ২০১৫ সালের ‘অগ্নিসন্ত্রাসের হোতাদের’ ঢাকা শহরের অনেক জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার তথ্য রয়েছে দাবি করে এইচটি ইমাম বলেন, তাদের ওপরে কড়া নজর রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে কোনোভাবেই অবনতি না হয়। এখন যেই সুন্দর পরিবেশ আছে তা বজায় রাখতে হবে।
গত কয়েকটি নির্বাচনে মাঝপথে বিএনপির ভোট বর্জনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান বলেন, অতীতে দেখেছি নির্বাচনে যখনই একটু পরাজয়ের ভাব দেখা দেয় তখন তারা বর্জনের কথা বলেছে। এ ধরনের সুযোগ আর দেওয়া ঠিক হবে না।
প্রতিনিধি দলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সানজিদা খানমসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন।