November 23, 2024
জাতীয়

নির্বাচন কমিশন সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নে তৎপর : ফখরুল

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই কমিশনের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তারা কী কারসাজিতে যুক্ত তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাদের অতীত কর্মকাণ্ডে এটি স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশন সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নেই তৎপর রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন-২০২০ প্রণয়ন, নির্বাচনী আইন (পিআরও) সংশোধনী প্রস্তাব এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনী আইন-২০২০ প্রণয়নে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ : বিএনপির প্রতিবাদ ও প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মহামারি করোনা এই গ্রহের সকল মানুষের স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। বাংলাদেশও যা থেকে মুক্ত নয়। দেশে স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থা ফিরে আসেনি। বরঞ্চ পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে পড়ছে। এমন পটভূমিকায় এ পর্যায়ে জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নতুন যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্তগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে অপ্রত্যাশিত। আর তা যদি হয় দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কিংবা জনগণের ভোটাধিকার বা অধিকার-সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে জড়িত, তাহলে সে বিষয়ে ন্যূনতম সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বর্তমান মহামারিকালীন সময় নিঃসন্দেহে অনুপযুক্ত।’

তিনি বলেন, ‘অথচ নির্বাচন কমিশন এই সময়টিকে বেছে নিয়েছে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আইন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরপিও এর অনেকগুলো মৌলিক সংশোধনী আনয়নের জন্য। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে অপ্রয়োজনীয়, হঠকারী ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এই উদ্যোগ কোনো বিবেচনাতেই স্বাভাবিক কিংবা সময়োচিত নয় বরং অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত, অগ্রহণযোগ্য এবং মহল বিশেষের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অপকৌশল বলে আমরা মনে করি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রকিবউদ্দিন কমিশন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত নির্বাচনী আইনে যে পরিবর্তন হয়েছে সেটার দুইটা দিক আছে। একটা হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করা, আরেকটা হচ্ছে কমিশনকে দুর্বল ও অকার্যকর করা। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইতোমধ্যে বর্তমান কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, এ সময় যে কাজে তাদের একান্তভাবে নিবিষ্ট থাকা দরকার সেই আরপিওসহ বিদ্যমান নির্বাচনী আইনগুলোর সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ না করে কমিশন অকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।’

মির্জা ফখরুলের ভাষ্য, ‘নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখন আর স্বাধীন নেই। তারা সরকারের হুকুম তামিলের জন্য আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কমিশন সরকার নির্দেশিত প্রক্রিয়ায় সকল কাজ করছে। এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হলো জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রকল্প কমিশন সরকারের হাতে তুলে দেয়ার প্রস্তাব। এটা হলে ভোটার তালিকা তৈরির ক্ষমতা সরকারের কাছে চলে যাবে। ফলে সরকার নিজের ইচ্ছামতো ভোটার তালিকা প্রণয়নের সুযোগ পাবে। সেই ভোটার তালিকায় প্রকৃত ভোটার নয়, সরকারি দলের পছন্দের লোকজনকে স্থান করে দেয়া হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা জাতির জন্য একটি অশনিসঙ্কেত ছাড়া আর কিছুই নয়।’

“নির্বাচন কমিশন ইউনিয়ন পরিষদের নাম পরিবর্তন করে ‘পল্লি পরিষদ’, পৌরসভার নাম পরিবর্তন করে ‘নগর সভা’ আর সিটি করপোরেশনের পরিবর্তে ‘মহানগর সভা’ করার প্রস্তাব করে একটি খসড়া করেছিল। এই আইন পরিবর্তনের প্রস্তাব করার এখতিয়ার ইসির নেই। এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার।’

ফখরুল বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আগেই দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জেলায় অফিস বা কমিটি করার যে কথা বলা হয়েছে, সেটি মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। তাছাড়া রেজিস্ট্রেশনের আগে ‘প্রস্তাবিত’ দলীয় প্রতীকে কারও নির্বাচন করার সুযোগ নাই। বেশিরভাগ সক্রিয় রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হলে নির্বাচন কমিশনকে এই বিধান পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *