নিজের ভেতরেই রয়েছে খুশী থাকার পন্থা
আনন্দের অনুভূতি দিতে বিভিন্ন হরমোন ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ডোপামিন, সেরোটোনিন ও অক্সিটোসিন। যা সাধারণ ভাষায় ‘হ্যাপি হরমোন’ নামে পরিচিত।
আর এসব হরমোনের মাত্রা বাড়ানো যায় নানান পন্থায়।
মালিশ করা: দেহে আরামের জন্য মালিশের বিকল্প নেই। মালিশ করা মস্তিষ্কের জন্য উপকারী বলে জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ মায়ামি’র ‘টাচ রিসার্চ ইন্সটিটিউট’য়ের গবেষণা থেকে।
গবেষকদের মতে, মালিশ বা ‘মাসাজ’ কর্টিসোলের (চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন) মাত্রা ৩১ শতাংশ কমায় এবং ২৮ শতাংশ সেরোটোনিন ও ৩১ শতাংশ ডোপামিনের মাত্রা বাড়ায়।
গ্রিন টি পান: অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ড’য়ের গবেষণা অনুযায়ী গ্রিন টি’তে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ‘এল-থায়ানাইন’ দেহকে আরাম দিতে সাহায্য করে ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।
গ্রিন টি পান মানসিক চাপ কমায়, সুখী হরমোন নিঃসরণ করে এবং সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে।
রৌদ্রস্নান: আবহাওয়া মনের ওপর প্রভাব ফেলে। সাধারণত, রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের মন ভালো থাকে ও বৃষ্টির দিনে মন খারাপ থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেটনে অবস্থিত ‘রাইট স্টেট ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ‘সাইকিয়েট্রি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন’ বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী- রোদ ও সেরোটিনের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। আর একারণেই শীতকাল বা বৃষ্টির দিনে মানুষের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।
গান শোনা: সুর মনকে প্রশান্ত করে। নিয়মিত গান শোনা মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
‘ন্যাচার ডটকম’য়ে প্রকাশিত কানাডার ‘ম্যাকগিল’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মনট্রিয়েল নিউরোলজিকাল ইন্সটিটিউট’য়ের করা গবেষণা অনুযায়ী, নিয়মিত পছন্দের গান শোনা ডোপামিনের মাত্রা বাড়ায় ও মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ: ওজন কমাতে কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণের মাত্রা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে মন উৎফুল্ল রাখতে চাই এই উপাদান।
‘টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস অনলাইন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ডেনমার্কের ‘এসসিটি. হান্স হসপিটাল’য়ের করা গবেষণা অনুযায়ী, কার্বোহাইড্রেইট মেজাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গবেষকদের মতে, যে সকল নারীর ‘পিএমএস’ ও অনুভূতি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ায় ও প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পুষ্টিকর খাবার থেকে কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করা উচিত।
যোগ ব্যায়াম
যোগ ব্যায়ামের রয়েছে নানান গুণ। এটা হৃদরোগ ও রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে।
‘ইউরোপ পিএমসি ডটঅর্গ’য়ে প্রকাশিত জার্মানির ‘ইউনিভার্সিটি অফ ইয়োথবর্গ’য়ের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টার্নাল মেডিসিন’য়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল নারী নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করেন তাদের মন মেজাজ ভালো থাকে, মানসিক চাপ কম থাকে এবং অন্যদের তুলনায় কম উদ্বেগগ্রস্ত হন।
আরও দেখা গেছে, নারীদের ‘পোস্টমেনোপজাল’ সময়ে যোগ ব্যায়াম এস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়িয়ে উদ্বেগ ও অস্বস্তির বিরূদ্ধে কাজ করে। আর তা বাড়ে সেরোটনিন মাত্রা বাড়ার কারণে।
ধ্যান: যোগব্যায়াম পছন্দ না? তবে করতে পারেন ধ্যান।
ডেনমার্কের ‘জন এফ কেনেডি ইন্সটিটিউট’য়ের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ধ্যান করেন তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
শরীরচর্চা: শরীরচর্চা মন ভালো রাখে এক কথা প্রায় সবারই জানা।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শরীর কার্যকর রাখা সেরোটিন ও ডোপামিনের মাত্রা বাড়ায়।
গরুর দুধ পান: এতে আছে ‘আলফা-ল্যাক্টালবিউমিন’ নামক প্রোটিন। যারা নিয়মিত ‘ল্যাকটালবিউমিন’ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন তাদের মাঝে এই প্রোটিন জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
নেদারল্যান্ডের ‘ইউনিভার্সিটি অফ মাস্ট্রিক্ট’য়ের গবেষকদের তথ্যানুসারে, মস্তিষ্কের ‘ট্রাইটোফান’ ও ‘সেরোটিনিন’য়ের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ‘ল্যাকটালবিউমিন’।
জড়িয়ে ধরা: এটা শুধু আনন্দ প্রকাশের ভঙ্গী নয়, বরং সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক ভাবেও উপকৃত হওয়া যায়।
‘ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলাইনা’র করা গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, ৫৯ জন ‘প্রিমেনোপোজাল’ নারীকে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, যারা প্রায় সময় তাদের সঙ্গীর কাছ থেকে আলিঙ্গন পেয়েছেন তাদের রক্ত চাপ যেমন কমেছে তেমনি বেড়েছে ‘অক্সিটসিন’য়ের মাত্রা।
হাসি: হাসলে মন ভালো হয়। আর এই কথার আরও জোড় বাড়িয়েছে ‘দি হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি’র গবেষণা।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ রিহ্যাবিলিটেশন সায়েন্স’য়ের করা গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, হাসি মস্তিষ্কের ডোপামিন ও সেরোটনিনের মাত্রা বাড়ায়। হাসার ফলে হতাশা ও উদ্বেগ কমে।
অনেকে মানসিক চাপ কমাতে হাসিকে চিকিৎসা হিসেবে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
ল্যাভেন্ডার: ল্যাভেন্ডারের সুঘ্রাণ মন ভালো করে দেয় ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়াও, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কমাতে এটা কার্যকর। অনেকে অনিদ্রার চিকিৎসায় ল্যাভেন্ডার ব্যবহার করে থাকেন।
‘দি হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি’র ‘ডিপার্টমেন্ট অফ রিহ্যাবিলিটেশন সায়েন্স’য়ের করা গবেষণা দেখা গেছে, ল্যাভেন্ডারের সুঘ্রাণ সেরোটনিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে।
চুম্বন: কাউকে চুম্বন করা কেবল ভালোবাসার প্রকাশই নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের ‘কার্নেগি মেলন’ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঠোঁটের ওপর চাপ প্রয়োগ ও লালা বিনিময় করা অক্সিটোসিনের নিঃসরণ বাড়ায়।
‘কাডল’ করা বা জড়িয়ে ধরা রক্তে কর্টিসোলের মাত্রা কমায় এবং খুশীর হরমোনের মাত্রা বাড়ায়।
ভিটামিন বি সিক্স: খাদ্যাভ্যাসও মনের ওপর প্রভাব ফেলে। বেশিরভাগ সময় বিষণ্ন বোধ করলে বিভিন্ন ধরনের মাছ খাদ্যতালিকায় রাখুন। এর থেকে মিলবে ভিটামিন বি সিক্স; যা সেরোটনিনের মাত্রা বাড়ায়।
মাছ পছন্দ না হলে খেতে পারেন- মুরগির মাংস, গাজর ও পালংশাক। এগুলোও ভিটামিন বি সিক্স’য়ের ভালো উৎস।
খেতে পারেন চকলেট: শুধু স্বাস্থ্যকরই নয়, মনের ওপরেও ভালো প্রভাব ফেলে ডার্ক চকলেট।
‘ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা’র ‘অ্যারিজোনা প্রিভেনশন সেন্টার’য়ের করা গবেষণা অনুযায়ী, চকলেট সেরোটনিন ও ডোপামিন এর মাত্রা বাড়ায়।
ভিডিও গেইম: মাঝে মাঝে ভিডিও গেইম খেলা খারাপ কিছু না। বরং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
নিউ ইয়র্কের ‘ইউনিভার্সিটি অফ রচেস্টার’, ‘ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা’ ও কোরিয়ার ‘চুং অ্যাং ইউনিভার্সিটি’র মিলিত গবেষণায় দেখা গেছে যখন পছন্দের গেইম খেলে তখন গেইমার’দের মস্তিষ্কে ডোমাপিনের নিঃসরণ হয়।