নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার দ্রুত তদন্তের আহ্বান তথ্যমন্ত্রীর
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দু’টি মসজিদে বর্বরোচিত হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনার দ্রুত তদন্তের আহŸান জানিয়েছেন। এই ঘটনায় তিনজন বাংলাদেশীসহ ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, এটি প্রকৃতপক্ষে বিষ্ময় ও উদ্বেগের বিষয়, একজন ঘাতক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে থেকে মানুষ হত্যা করল, আর পুলিশ ২০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে এসেছে।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে ‘ঢাকা মানবাধিকার কনভেনশন-২০১৯’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ক্রাইস্টচার্চে হামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
তিনি বর্বরোচিত এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জনিয়ে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। ড. হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যদের প্রাণ রক্ষায় আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিউজিল্যান্ডকে শান্তির দেশ হিসেবে জানতাম। সেখানকার পৃথক দু’টি মসজিদে ঢুকে নামাজ পড়ার সময়ে মুসুলীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা ও নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও নিন্দনীয়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, একটি মসজিদের পর আরেকটি মসজিদে হামলা হলো, কিন্তু সেদেশের পুলিশ সেখানে পৌঁছাতে পারলো না, এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও দুঃখজনক। আমাদের দেশেও এমন উপর্যুপরি হামলা করা সম্ভব নয় বলে তিনি উলেখ করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের পুলিশ প্রয়োজনে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে।
‘যানজটের ঢাকা শহরেও কোথাও আগুন লাগলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সেখানে ফায়ার ব্রিগেড পৌঁছে যায়, আর যানজটহীন নিউজিল্যান্ডে হামলাস্থলে পুলিশ পৌঁছাতে পারলো না, এটি দ্রুত ও পূর্ণ তদন্তের বিষয়’ উলেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদমনে ইতোমধ্যে যথেষ্ট দক্ষতা প্রমাণ দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আজ জঙ্গিদমনে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আমাদের অভিজ্ঞতা অন্যরাও কাজে লাগতে পারে।’ তথ্যমন্ত্রী এসময় জাতীয় ক্রিকেট দলের নিরাপত্তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এরআগে ওই কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানবিক মূল্যবোধে অনেক পশ্চিমা দেশ থেকে আমরা এগিয়ে আছি, তাই পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণ নয়। তারা ভৌত ও অবকাঠামোগত দিক দিয়ে উন্নততর হলেও, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধে আমরা তাদের থেকে অনেক উন্নত।’
ড. হাছান মাহমুদ ন্যায়ভিত্তিক সুষম সমাজ, উন্নত রাষ্ট্রের পাশাপাশি উন্নত জাতি গঠনে মানবিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
এসময় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কথা উলেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অধিকার রক্ষায় প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন গড়ে তোলেন, পরে সে আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ দেন। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে নৃশংসভাবে হত্যার কারণে তার ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে পারেনি, যা পূর্ণ করার কাজ করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’
তথ্যমন্ত্রী মানবাধিকার রক্ষায় আয়োজক সংস্থার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সকল মানবাধিকার সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহŸান জানান। পরে তিনি মানবাধিকার নিয়ে প্রশংসনীয় কাজের জন্য সংস্থার নির্বাচিত কর্মীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সংস্থার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী কাজী রেজাউল মোস্তফার সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপি এবং কনভেনশন উদ্বোধক হিসেবে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব সাইফুল ইসলাম দিলদার বক্তব্য রাখেন।