November 23, 2024
আন্তর্জাতিক

নাগোরনো-কারাবাখ: আর্মেনিয়ার হামলায় ৬ বেসামরিক হতাহত

বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ ঘিরে সপ্তাহব্যাপী সংঘাতে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার সৈন্যরা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ করেছে।

রোববার আজারবাইজানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশটির গাঞ্জা শহরে রকেট হামলা চালিয়েছে আর্মেনিয়া। এতে একজন বেসামরিক নিহত ও আরও ৫ জন আহত হয়েছেন। এই হামলার জবাবে আর্মেনিয়ার ভেতরে সামিরক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে বাকু।

আজারবাইজান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে প্রতিবেশি এ দুই দেশের মাঝে ব্যাপক সংঘাত চলছে। হামলা-পাল্টা হামলায় দুই দেশে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

তবে আজারবাইজান লক্ষ্য করে কোনও ধরনের গোলা ছোড়া হয়নি বলে দাবি করেছে আর্মেনিয়া। নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের এক নেতা বলেছেন, তার সামরিক বাহিনী আজারবাইজানের গাঞ্জা শহরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য হামলা চালিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে বেসামরিক হতাহত এড়াতে হামলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর আগে, আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গাঞ্জা এবং অন্যান্য বেশ কিছু বেসামরিক এলাকায় রকেট হামলা এবং গোলাবর্ষণ করেছে আর্মেনিয়া।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সহযোগী হিকমত হাজিয়েভ বলেছেন, আর্মেনিয়ার ভেতরে সরাসরি হামলা চালিয়ে সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়া হবে। নাগোরনো-কারাবাখ সীমান্তের বেলাগান শহরে আর্মেনিয়ার হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, আর্মেনিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, নাগোরনো-কারাবাখের প্রধান শহর স্টিপ্যানাকার্টে আজারবাইজানের সৈন্যরা গোলাবর্ষণ করেছে। বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের পর সেখানে সাইরেনের শব্দ শোনা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আর্টসরান হোভহানিসইয়ান বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, স্টিপ্যানাকার্টে বেসামরিক টার্গেটে রকেট নিক্ষেপ ও গোলাবর্ষণ করেছে আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভূক্ত দেশ দুটির মাঝে নাগোরনো-কারাবাখ ঘিরে কয়েক দশকের পুরনো সংঘাত রয়েছে। আজারবাইজানের ভেতরে অবস্থিত জাতিগত আর্মেনীয়দের শাসনাধীন নাগোরনা-কারাবাখকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অঞ্চল হিসেবে মনে করে আজারবাইজান।

অঞ্চলটির দখল ফিরে পেতে প্রয়োজনে সব ধরনের সামরিক উপায় অবলম্বনের হুমকি দীর্ঘদিন ধরে দিয়ে আসছিল দেশটি। বর্তমানে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ফ্রান্স।

সংর্ঘষের ফলে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত আর্মেনিয়া এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আজারবাইজানের সঙ্গে বিশ্ব মোড়লদের কূটনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। রাশিয়া তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। আঞ্চলিক অপর পরাশক্তি তুরস্ক বলেছে, ঐতিহ্যবাহী মিত্র আজারবাইজানের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইনে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল আজারবাইনের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগত আর্মেনীয়রা আজারি শাসন প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আর্মেনিয়ার সমর্থনে নিজস্ব শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছে নাগোরনো-কারাবাখ।

এই অঞ্চলে দুই পক্ষের সংঘাতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং লাখো মানুষ বাস্ত্যুচুত হওয়ার পর ১৯৯৪ সালে দ্বিপাক্ষিক অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয় আর্মেনিয়া-আজারবাইজান।

২০১৬ সালের এপ্রিলে দুই দেশের মাঝে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়। এতে উভয় পক্ষে ২ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। চলতি বছরের জুলাইয়ে উভয় দেশের সংঘাতে ১৬ জন নিহত হন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *