November 28, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

না’গঞ্জে জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জন নিহত ॥ আহত অর্ধশতাধিক

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১৯ ঘণ্টা পর কারখানার ভেতর থেকে ৪৯টি পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো ফায়ার সার্ভিসের চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়েছে। এর আগে এ ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫২ জনে। এছাড়া আহত হন আরও অন্তত অর্ধশতাধিক। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো: মোস্তাইন বিল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আগুনে নিহত ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পরপরই তিনজন মারা গেছে বলে সনাক্ত হয়েছিলো। সব মিলিয়ে ৫২ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহত প্রত্যকের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা ও গুরুতর আহতদের পরিবারকে দশ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রুপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুস কারখানায় আগুন লাগে। আগুন থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে বৃহস্পতিবারই তিনজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তারা হচ্ছেন স্বপ্না রানী (৪৪), মিনা আক্তার (৩৪) ও মোরসালীন (২৮)। শুক্রবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ৪৯টি লাশ উদ্ধার করে। ফলে এ ঘটনায় মোট ৫২ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান।
তিনি জানান, শুক্রবার যেসব লাশ উদ্ধার হয়েছে তার প্রায় সবই এমনভাবে দগ্ধ যে সেগুলি আত্মীয়রা দেখে চিনতে পারছেন না। তাই এই মৃতদেহগুলি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে ডিএনএ টেষ্টের জন্য। ডিএনএ টেষ্টের মাধ্যমে এ লাশগুলি সনাক্ত করে আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি জানান, আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রনে আনার পরে নিচ তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত তল্লাশী করে ৪৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে এনে পুরো ভবনটিতে আমরা পুনরায় তল্লাশি চালাবো।
তিনি আরো জানান, আগুন লাগার পরপর এক থেকে তিন তলা পর্যন্ত আগুন লাগে। পরে চারতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। লাশ বেশিরভাগ চতুর্থ তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকের লাশ সিড়িতেও পাওয়া যায়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, সিড়িতে এবং অন্যান্য স্থানে এত বিপুল পরিমান ফয়েল পেপার, রাসায়নিক দ্রব্য, বিস্কুট-লজেন্স- কেক-জুস-নুডুলস এর প্যাকেট মজুদ ছিলো যে এগুলির মাধ্যমে আগুন সিড়িতে জ্বলছিলো। ফলে চতুর্থ তলায় আটকে পড়া শ্রমিকরা ছাঁদে যেতে পারছিলেন না আবার নিচেও নামতে পারছিলেন না।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, সজিব কর্পোরেশনের হাসেম ফুড এন্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডে অনেকগুলি প্রাণ ঝড়ে পড়েছে। এ ঘটনায় যদি মালিক পক্ষের কোনো গাফিলতি পাওয়া যায় অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় এক বা একাধিক মামলা হবে। এ প্রতিষ্ঠানে যদি শিশু শ্রমিক নিয়োগের প্রমান পাওয়া যায় তাহলে আলাদা আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, নিহতদের লাশ ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। সেখানে জেলা পুলিশের একটি ও ডিএমপির একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আগুন নেভাতে ধীরগতির অভিযোগ তুলে কারখানার শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।
জানাগেছে, এ কারখানার ভেতরে সেজান জুসের পাশাপাশি নুডুলস, লাচ্ছি সেমাই, চকলেট, লাচ্ছি, কেক বিস্কুটসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরী ও প্যাকেটজাত করা হতো। এছাড়া ছয় তলা ভবনের প্রতিটি ফ্লোরেই ছিলো দাহ্য পদার্থ ও বিপুল পরিমান রাসায়নিক পদার্থের মজুদ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় সেজান জুস কারখানায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের রূপগঞ্জের কাঞ্চন, ডেমরা, আদমজী, ঢাকা, ও নারায়ণগঞ্জ স্টেশন থেকে ১৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতের কাজ করছে।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *