নাঈমের ফিফটির পর তাসকিনের ফেরার বার্তা
শুরুতে ঝড় তুলে ফিফটি করলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। পরে আঁটসাঁট বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রাখলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ছন্দে ফেরার আভাস দিয়ে চার উইকেট নিলেন তাসকিন আহমেদ। তিন তরুণের নৈপুণ্যে রাজশাহী রয়্যালসকে উড়িয়ে দিল রংপুর রেঞ্জার্স।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার বছরের সবশেষ ম্যাচে ৪৭ রানে জেতে রংপুর। ১৮২ রান তাড়ায় রাজশাহী ৮ উইকেটে করে ১৩৫।
আঁটসাঁট বোলিং করেন রংপুরের প্রায় সব বোলার। উইকেট নিয়ে চাপ আরও বাড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করেন তাসকিন। দারুণ বোলিংয়ে যেন ফিরে আসার বার্তা দিলেন এই তরুণ। তিন ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকার পর এবার ২৯ রানে নিলেন ৪ উইকেট।
টানা চতুর্থ ম্যাচে দারুণ বল করলেন মুস্তাফিজ। একটি মেডেনসহ ৪ ওভারে দেন কেবল ১৬ রান।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নাঈমের ব্যাটে শুরুটা ভালো করে রংপুর। ইনিংসের প্রথম ওভারে মাত্র তিন বল করে মাঠ ছাড়েন রাজশাহী অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেল। পরে মাঠে ফিরলেও আর বল করেননি ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার।
তাকে চার ও ছক্কা মেরে ডানা মেলেন নাঈম। তাইজুল ইসলামের বলে ক্যাচ হতে হতে ছক্কা পেয়ে যান শেন ওয়াটসন। তবে যেতে পারেননি বেশিদূর। আফিফ হোসেনের বলে শর্ট থার্ড ম্যানে কামরুল ইসলাম রাব্বির চমৎকার ক্যাচে ফিরেন রংপুর অধিনায়ক।
দ্রুত রান তোলার গতি ধরে রাখতে পারেননি নাঈম। রানের চাকা সচল রাখেন ক্যামেরন দেলপোর্ত। আফিফ হোসেনকে দুই ছক্কা ও এক চার হাঁকিয়ে সেই ওভারেই ফিরে যান ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। ১৭ বলে ৩১ রান করেন দেলপোর্ত, তার বিদায়ে ভাঙে ৫৪ রানের জুটি।
প্রথম ২৫ বলে ৩৯ রান করা নাঈম ৪০ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। বোলিংয়ে এসেই ফিরতি ক্যাচ নিয়ে তরুণ বাঁহাতি ওপেনারকে বিদায় করেন রাব্বি। ৬ চার ও এক ছক্কায় নাঈম ৪৭ বলে করেন ৫৫। শেষ ২২ বলে করেন কেবল ১৬ রান। একবার জীবন পেলেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি লুইস গ্রেগোরি। ২৬ রানে রাব্বিকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া অলরাউন্ডার বিদায় নেন ২৮ রানে।
প্রত্যাশিত ঝড় ওঠেনি মোহাম্মদ নবির ব্যাটে। ২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যাওয়া রংপুরকে পৌনে দুইশ রানে নিয়ে যান আল আমিন ও জহুরুল ইসলাম।
দুই চারে ১০ বলে ১৫ রান করেন আল আমিন। তার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৩৪ রানের জুটি গড়া জহুরুল ৪ চারে করেন ১৯ রান।
বড় রান তাড়ায় যে শুরু প্রয়োজন ছিল সেটা এনে দিতে পারেননি লিটন দাস ও আফিফ হোসেন। রংপুরের বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে রানের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছিল তাদের।
মুস্তাফিজের বাউন্সার আফিফ পুল করতে গেলে বল লাগে তার হেলমেটে। এরপর তেড়েফুড়ে মারতে চাচ্ছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তাসকিন আক্রমণে আসতেই প্রথম বল বেরিয়ে ওড়াতে চেয়েছিলেন। টাইমিং করতে পারেননি, মিডঅফে কিছুটা দৌড়ে ডাইভ দিয়ে চমৎকার ক্যাচ মুঠোয় জমান গ্রেগোরি।
তিনে নেমে চেষ্টা করেছিলেন অলক কাপালী তবে দম দিতে পারেননি রানের গতিতে। তার সঙ্গে লিটনের জুটি যখন জমে উঠতে শুরু করেছিল তখনই বোলিংয়ে ফিরে আঘাত হানেন তাসকিন। প্রথম বলে পয়েন্টে আল আমিনের হাতে ধরা পড়েন লিটন। পরের বলে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়ে যান শোয়েব মালিক।
কাপালীকে বিদায় করার পর বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া রবি বোপারাকেও থামান গ্রেগোরি।
রাসেল ছিলেন বলে তখনও বেঁচে ছিল রাজশাহীর আশা। অধিনায়ক ক্রিজে আসার সময় তাদের প্রয়োজন ছিল ৩৫ বলে ৯২ রান। গ্রেগোরিকে চার ও ছক্কা হাঁকানোর পর নবিকে ছক্কায় ওড়ান রাসেল। জয়ের জন্য শেষ ৪ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৬৫ রান। আগের ২ ওভারে মাত্র ৭ রান দেওয়া মুস্তাফিজের ওপর চড়াও হতে চেয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। পারেননি তিনি। প্রথম বলে সিঙ্গেল নেওয়া সম্ভব ছিল, তবে রান নেননি। পরের বল সীমানায় পাঠিয়ে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে হয়ে গিয়েছিলেন একটু মন্থর। নাঈমের বুলেট গতির থ্রো ধরে মুস্তাফিজ বেলস ফেলে দিলে রান আউট হয়ে যান রাসেল।
এরপর বেশিদূর এগোয়নি রাজশাহীর ইনিংস। খরুচে বোলিংয়ে এক সময়ে একাদশে জায়গা হারানো তাসকিন ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে রংপুরের সেরা বোলার। গ্রেগোরি ২ উইকেট নেন ২৭ রানে।
৮ ম্য্যাচে তৃতীয় জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে রয়েছে রংপুর। সমান ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে রয়েছে রাজশাহী।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৮২/৬ (নাঈম ৫৫, ওয়াটসন ৭, গ্রেগোরি ২৮, নবি ১৬, মাহমুদ ০, আল আমিন ১৫, জহুরুল ১৯*; রাসেল ০.৩-০-১১-০, মালিক ২.৩-০-৬-০, ইরফান ৪-০-৩৫-২, তাইজুল ২-০-২৩-০, আফিফ ৪-০-৪০-২, নাহিদুল ৩-০-১৭-০, কাপালী ১-০-১০-০, রাব্বি ১-০-১৫-১, ফরহাদ ২-০-২৪-১)
রাজশাহী রয়্যালস: ২০ ওভার ১৩৫/৮ (লিটন ১৫, আফিফ ৭, কাপালী ৩১, মালিক ০, বোপারা ২৮, নাহিদুল ১৯, রাসেল ১৭, ফরহাদ ০, তাইজুল ৪*, রাব্বি ৫*; সানি ৪-০-৩২-০, মুস্তাফিজ ৪-১-১৬-০, তাসকিন ৪-০-২৯-৪, গ্রেগোরি ৪-০-২৭-২, নবি ৪-০-২৯-১)
ফল: রংপুর রেঞ্জার্স ৪৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: লুইস গ্রেগোরি