নতুন বছরে বদলে ফেলুন নিজেকে
আলি আবরার
দেখতে দেখতে ক্যালেন্ডারের পাতায় চলে এলো ২০২০। প্রতিটা ফেলে আসা দিন গুলোই আমাদের অনেক কিছু শেখায় আবার হারাবারও থাকা অনেক কিছু। কিন্তু জীবন কি আর থেমে থাকে ? নদী যেমন তার চলার পথে কখনো থেমে যায়না তেমনি জীবনের গতিপথও থেমে থাকে না। কিছু পাওয়া-না-পাওয়া, ভুল, ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়েই জীবন চলতে থাকে আপন গতিতে। কিন্তু আমরা চাইলেই পারি এই গতিপথ পরিবর্তন করতে, শুধু প্রয়োজন নিজের প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও একটি সূক্ষ্ম পরিকল্পনার । চলুন তবে আজ জানা হোক এমন কিছু বিষয় যেগুলি ২০২০ এ আপনার গতিপথ পরিবর্তনে সহায়ক হবে।
ঝেরে আসুন অতীতকে
সোনালি অতীত যেমন একটি মানুষকে চলতে শেখায় সুন্দর ভবিষ্যৎ এর পথে তেমনি নেতিবাচক অতীত গ্রাস করে ফেলতে পারে সামনের সুন্দর চলার পথগুলকে। জীবনে ভুল ভ্রান্তি থাকবেই আর আমাদের উচিত সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া এবং খেয়াল রাখা ঐ ভুলগুলো পরবর্তীতে যেন আর না হয়। মনে রাখবেন অতীতকে আঁখরে ধরে আপনি কখনোই সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হতে পারবেন না। তাহলে সুন্দর একটি শুরু হোক না ২০২০ এর আরম্ভ থেকেই !
জীবনে আসুক সাহিত্য-সংস্কৃতির ছোঁওয়া
কর্মব্যাস্ত বা শিক্ষা জীবনের চাপে আমরা জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারিনা। অথচ সাহিত্য-সংস্কৃতি কিন্তু বাংলা সমাজের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এগুলি যেমন আমাদের চিন্তা চেতনাকে উন্নত ও প্রসারিত করে তেমন জ্ঞানকে করে সমৃদ্ধ। এ বছরে আমরা তৈরি করতে পারি বই পড়ার অভ্যাস বা সাহিত্য চর্চা। অথবা তালিম নিতে পারি পেইন্টিং এর। গান গাওয়াটা সবার ভাগ্যে না থাকলেও আমরা কিন্তু চাইলেই শিখে নিতে পারি গিটার, পিয়ানো বা ভাইওলিন যা হতে পারে আমাদের অবসরের বন্ধু।
গড়ে তুলি নতুন কোনো অভ্যাস
এ বছরে আমাদের উচিত এমন একটা ইতিবাচক অভ্যাস তৈরি করা যা আমাদের জীবনের গতিপথ ঘুরিয়ে দিতে পারি। হোক না শুরু সেটা নিতান্ত বিছানার চাঁদর পাল্টানো থেকে! অভ্যাসটা হতে পারে নিয়মানুবর্তিতা, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, অন্যকে সাহায্য করা, অনেক সকালে ঘুম থেকে ওঠা বা প্রতিদিন একটি করে নতুন শব্দ শেখা।
থাকতে হবে একটিভ !
একটি মানুষের সারাটি দিন কেমন যাবে সেটা বহুলাংশে নির্ভর করে তাঁর দিনটি কিভাবে শুরু করছে তাঁর ওপর। বিভিন্ন জরিপে দেখা গিয়েছে যারা অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করে বা হাটে তারা তুলনামূলক ভাবে কার্যক্ষম ও সফলভাবে দিনটি পার করে। শরীর যদি সজাগ থাকে তবে আপনি জয় করতে পারবেন সুবিশাল এভারেস্ট ও ! আর শরীরকে একটিভ রাখার সব থেকে উন্নত পন্থা হল জিমে যেয়ে ব্যায়াম করা। তবে গড়ে ফেলুন এমন একটি অভ্যাস যা আপনার দিনকে করে তুলতে পারে আরো সমৃদ্ধময় !
হতে পারে ছোট কোন ভ্রমণ
ভ্রমনের সাথে কিন্তু মানসিক প্রশান্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ আছে। দেখা গেছে অত্যাধিক চাপ থেকে ওঠার পর কেউ যদি কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরতে যায় তবে ছুটি শেষে তাঁর কাজের আগ্রহ ও কার্যক্ষমতা আরো বাড়ে। তবে বিগত বছরের সকল ধকল কাটিয়ে উঠে নতুন বছরটা শুরুর আগে আমরা নিয়ে নিতে পারি ছোট একটি ছুটি যা এ বছরের শুরুতেই আমাদের কাজে মনোনিবেশে সহায়তা করবে ।
হোঁচট খেলে ভেঙ্গে পরা যাবেনা
চলার পথে মানুষ হোঁচট খায়, পরে আবার উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু শুধু দাঁড়িয়ে থাকলেই হবেনা, কারণ জীবন কিন্তু থেমে নাই। মনবল শক্ত রাখতে হবে, প্রয়োজনে কথা বলতে হবে এমন কারো সাথে যাকে আপনি ভাল বন্ধু মনে করে।
খারাপ মানুষদের থেকে দূরে থাকুন
মানুষ সফলতা নির্ভর করে তাঁর নিয়তির ওপরে। যাদের নিয়তি খারাপ বা নেতিবাচক তাঁরা শুধু নিজেদেরই ডুবায় না, সাথে তাঁর পরিপার্শ্বের মানুষজনদের ও ডুবতে সাহায্য করে । এমন মানুষজনদের পরিহার করা উচিত যারা আপনার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
সামাজিক মাধ্যম ফেলে দিন, সামাজিকতা শুরু করুন
বিভিন্ন জরিপে দেখা গিয়েছে সামাজিক মাধ্যম (যেমন- ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম) এগুলো মানুষকে আরো অসামাজিক করে তুলছে। অসামাজিক এই অর্থে যে মানুষ এখন ঘর থেকে বের হতে চায় না। তাঁরা সামাজিক মাধ্যম থেকে অন্যের জীবন দেখে তার সাথে নিজের জীবনের পার্থক্য মাপা শুরু করেছে যার ফলস্বরূপ তাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে বিষণ্ণতা, উদ্বিগ্নতা ও অলসতা। প্রযুক্তির আরো একটি নেতিবাচক দিক হল এটি সব কিছু মানুষকে হাতে মুঠে এনে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু তাঁরা হারিয়ে ফেলছে জীবনের গতি, হয়ে যাচ্ছে অলস ও কর্মবিমুখ। আমরা মানুষ আর আমাদের পরিচিতিই হল আমরা সামাজিক, প্রযুক্তিগত ভাবে নয় বরং প্রকৃত অর্থেই। আমরা সামাজিকতা ফেসবুকে কম করে যদি বাস্তবিক জীবনে করতে অভস্ত হই তবে আমাদের মন ও চিন্তাধারা যেমন সুস্থ হবে তেমনি একটি সুন্দর সামাজিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হব আমরা।
অন্তত একটি ভয়কে জয় করুন
মানুষ ছোটবেলা থেকে নানান অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। কিছু অভিজ্ঞতা দিয়ে যায় সুন্দর স্মৃতি বাকি গুলে থেকে যায় ভয় হিসাবে এবং সারাজীবনই হয়তোবা এই ভয়টি আমাদের তাড়া করতে পারে। ভয়কে জয় করা যেমন আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে তেমনি হয়তবা পেয়ে জেতে পারি জীবনের পাজেলে হারানো কোন পাজেল পিস। একটু চেষ্টা করলে আমরা আমাদের ভয় গুলোকে দূর করতে পারবো। তবে শুরু হক ২০২০ একটি ভয়কে জয় করে ।
সময়ের সঠিক ব্যবহার
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আমরা প্রতিনিয়তই আমাদের সময় অপচয় করি মোবাইলে, গেমে, ফেসবুকে বা ইউটিউব দেখে। আমরা ভুলে যাই আমাদের জীবনে আমাদের নিজের প্রাণ বাদে দ্বিতীয় মূল্যবান এন্টিটির নাম হল “সময়”। সময়ের সঠিক ও সুন্দর ব্যবহারই আমাদের জীবনকে সুন্দর ও সফল করে তুলতে পারে। আমাদের ২০২০ এ লক্ষ্য স্থির করা উচিত সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করার।