December 22, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

নগরীতে ব্যাংক কর্মকর্তাকে গণধর্ষণ ও পিতাসহ হত্যার দায়ে ৫ জনের ফাঁসি

 

দ: প্রতিবেদক

খুলনায় এক্সিম ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষণের পর বাবা ইলিয়াছ চৌধুরীসহ শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে ৫ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৩নং ট্রাইব্যুনালের বিচারক মহিদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। লোমহর্ষক জোড়া হত্যার পর দুটি মামলা হয়। একটি হত্যা ও মরদেহ গুমের চেষ্টা অপরটি গণধর্ষণ।

ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ৫ আসামি হলেন- লবণচরা থানাধীন বুড়ো মৌলভীর দরগা রোডের বাসিন্দা শেখ আব্দুল জলিলের ছেলে সাইফুল ইসলাম পিটিল (৩০), তার ভাই শরিফুল (২৭),আবুল কালামের ছেলে  লিটন (২৮), অহিদুল ইসলামের ছেলে আবু সাইদ (২৫) ও মৃত সেকেন্দারের ছেলে আজিজুর রহমান পলাশ (২৬)। এদের মধ্যে শরিফুল পলাতক।

এদিকে চাঞ্চল্যকর মামলায় আসামীদের ফাঁসির রায় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পারভীন সুলতানার পরিবার। তার ভাই রেজাউল আলম চৌধুরী বিপ্লব বলেন, এ বিচারের রায়ে আমরা খুশি হয়েছি। সম্পূর্ণ আস্থা ছিলো বিচারকের প্রতি। সঠিক রায় পাবো এ ধারণা ছিলো। সঠিক রায় পেয়েছি।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেছেন স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তার জন্য ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষে অ্যাডভোকেট কাজী সাব্বির আহমেদ, অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট তসলিমা খাতুন, অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা।

রায় প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, পারভীন সুলতানার বাবা ইলিয়াছ চৌধুরীকে হত্যা মামলার রায়ে ৫ জনের ফাঁসি ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা। একই মামলায় মরদেহ গুমের চেষ্টায় প্রত্যেককে ৭ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষণ হত্যা মামলায় ৫ জনের ফাঁসি ও ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকান্ডের মামলায় ২২জন ও গণধর্ষণের মামলায় ২৮ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে পৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ২ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের বর্ননা রয়েছে। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৩নং ট্রাইব্যুনালে মামলাটির যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শুরু হয়।

মামলার তদন্ত চলাকালে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৫ জনের মধ্যে ৪ জন গ্রেফতার হয়। এছাড়াও গ্রেফতার করা হয় পিটিলের স্ত্রী আসমা খাতুন, নোয়াব আলি গাজী ও আসলাম মিস্ত্রি নামের একজন সন্দেহভাজনকে। তাদের মধ্যে লিটন ও সাঈদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উঠে আসে লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা।

তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দীতে বলে, ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন অফিসে আসা-যাওয়ার পথে আসামিরা কু-প্রস্তাবসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করতো। এর প্রতিবাদ করায় ঘটনার দিন রাতে বাড়ির দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করে ৫ আসামি। এরপর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পারভীনের বাবাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পাশের রুমে থাকা পারভীনকে ৫ জন মিলে গণধর্ষণের পর হত্যা করে সেফটি ট্যাংকির মধ্যে বাবা ও মেয়ের মরদেহ ফেলে দেয়। পরে ঘরে লুটতরাজ চালিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

এ ঘটনায় লবনচরা থানায় পারভীন সুলতানার ভাই রেজাউল আলম চৌধুরী বিপ্লব বাদি হয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলা দায়ের করেন নং-০৩। পারভীন সুলতানাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের অভিযোগে ২২ সেপ্টেম্বর আরও মামলা দায়ের হয় নং-০৫। ২০১৬ সালের ৯ মে হত্যাকান্ডের ও একই বছরের ২৪ মার্চ গনধর্ষনের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা এস আই কাজী বাবুল ওই ৫ জনকে অভিযুক্ত করে খুলনা’র মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *