November 25, 2024
জাতীয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন চলমান। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চলছে বিভিন্ন কর্মসূচি। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। এর মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী— ২০২৩ সালের নভেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে এবং ডিসেম্বরের শেষে কিংবা জানুয়ারির শুরুতে ভোটগ্রহণ হবে। তবে নির্বাচন কমিশনের এই কর্মপরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধী দলগুলো।

এদিকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না সরকারবিরোধী দলগুলো। শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে অনড় অবস্থানে তারা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন যেহেতু ক্ষমতাসীন সরকার নিয়োগ দিয়েছে, তাদের পছন্দ মতো লোকজন বসিয়েছে। তাই যতোই রোডম্যাপ দিক, বর্তমানের সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব না। তার মতে— প্রায় সব রাজনৈতিক দল ইভিএম বাদ দিতে বলেছে। কিন্তু তারা ইভিএমেই ভোট নেবে। তাদের কথা কাজে সুষ্ঠু নির্বাচনের আভাস নেই। তাই রোডম্যাপ নিয়ে আমাদের আগ্রহও নেই। তিনি মনে করেন— নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া কারও পক্ষেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

ব্যর্থ নির্বাচনের ইঙ্গিত
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ায় ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতের আধাঁরে ভোট-চুরির অভিযোগ ওঠে। সেসময় ভোট শুরুর আগেই চট্টগ্রামের একটি কেন্দ্রে থেকে ব্যালট ভর্তি বাক্সের ছবি প্রকাশ করেছিল যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। এসব কারণে স্থানীয় থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্বাচন থেকে ভোটারদের অংশগ্রহণ লক্ষ্যজনকভাবে কমে যায়। নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে দেশের বাইরেও।

বিগত নির্বাচনগুলোয় অস্বচ্ছতা, ভোট-চুরি ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের নতুন এই রোডম্যাপ আরেকটি ব্যর্থ নির্বাচনেরই ইঙ্গিত মাত্র। আগের সব নির্বাচনে সরকারের নির্দেশে ভোট ডাকাতি হয়েছে। ওই নির্বাচন কমিশনও ভালো ভালো কথা বলেছিল কিন্তু কিছুই করতে পারেনি।

মান্না আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন কখনই নিজেদের নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। সমস্যা সরকারের মধ্যে। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে আমাদের আপত্তি। কারণ সেটা সুষ্ঠু হবে না।

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন
নির্বাচন কমিশন বলছে, তাদের কাজ নির্বাচন আয়োজন করা। কোন দল নির্বাচনে যোগ দেবে কি দেবে না কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে কী হবে না, এগুলো তাদের দেখার বিষয় নয়।

এদিকে নির্বাচনে আস্থার সংকটের বিষয়টি স্বীকার আওয়ামী লীগ নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই। আস্থার জায়গাটা নিয়ে তো সমস্যা আছেই। নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করবে নির্বাচনে তাদের আস্থা ফেরানোর। তবে যতো আলোচনাই হোক, সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে আর নির্বাচন হবে না। তবে নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হবে।

‘রোডম্যাপ আস্থা ফেরাবে না’
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তাহলে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাইরে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না?

এই প্রশ্নে রাজনীতি বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনকে যতোই ক্ষমতা দেওয়া হোক না কেন, তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রশাসন নিরপেক্ষ না থাকলে কখনোই সুষ্ঠু ভোট হতে পারে না। যখন আমাদের সবকিছুতেই রাজনীতির ছত্রছায়া থাকে। পুলিশ থেকে শুরু করে রিটার্নিং অফিসার। সেখানে কীভাবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, আমার বোধগম্য নয়।

এই নির্বাচন বিশ্লেষক আরও বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ দিয়েছে সেটা অসম্পূর্ণ। এই কর্মপরিকল্পনা রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের আস্থা ফেরাতে পারেনি।

দিলারা চৌধুরী বলেন, কমিশনের কর্মপরিকল্পনায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা হয়নি। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে ভোটারদের আস্থা অর্জনে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে ফেরাতে কমিশনের করণীয় কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

তাছাড়া ইভিএমে কীভাবে আস্থা ফেরাবে, পুলিশ-প্রশাসন আর কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, তফসিল ঘোষণার পর দলীয় নেতাকর্মী এবং এজেন্টদের হয়রানি বন্ধ করা হবে কিনা, এই বিষয়গুলো কর্মপরিকল্পনায় সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা হয়নি বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *