দেশে ৩৮ জেলায়, ঢাকায় ৭৫ এলাকায় করোনাভাইরাস
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার ৩৫ দিনের মাথায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ৩৮ জেলায়; রাজধানী ঢাকার ৭৫টি এলাকায় কোভিড-১৯ রোগীর সন্ধান মিলেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোববার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে এ পর্যন্ত ৬২১ জনের দেহে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকই ঢাকার বাসিন্দা। আর ৩৫ শাতাংশ রোগী ঢাকার বিভাগের অন্যান্য জেলার।
এর মধ্যে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৩৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এক দিনে নতুন রোগী শনাক্তের এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ঢাকা মহানগর এলাকায় দেশের সর্বোচ্চ ৩১৩ জন নভেল করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া ঢাকা জেলার অন্যান্য অংশে আরও ২২ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
অর্থাৎ পুরো ঢাকার হিসাব করলে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৩৫ জন, যা সারা দেশে আক্রান্তের প্রায় ৫৪ শতাংশের সমান ।
ঢাকা মহানগরের যে ৭৫টি এলাকায় কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া গেছে, তার মধ্যে কয়েকটি ক্লাস্টারে রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
রাজধানীতে কোথায় কত আক্রান্ত আদাবর: ১, আগারগাঁও: ২, আশকোনা: ১, আজিমপুর: ২, বাবুবাজার: ৩, বাড্ডা: ৪, বেইলি রোড: ৩, বনানী: ৭, বংশাল: ৭, বাসাবো: ১২, বসুন্ধরা: ৪, বেগুনবাড়ি: ১, বেড়িবাধ: ১, বসিলা: ১, বুয়েট এলাকা: ১, সেন্ট্রাল রোড: ১, চকবাজার: ৪, ঢাকেশ্বরী: ১, ধানমন্ডি: ১৪, ধোলাইখাল: ১, দয়াগঞ্জ: ১, ইস্কাটন: ১, গেণ্ডারিয়া: ৩, গ্রিন রোড: ৫, গুলিস্তান: ২, গুলশান: ৪, হাতিরঝিল: ১, হাতিরপুল: ২, হাজারীবাগ: ৮, ইসলামপুর: ২, জেলগেট: ১ যাত্রাবাড়ি: ১১, ঝিগাতলা: ৩, কামরাঙ্গীর চর: ১, কাজীপাড়া: ১, কদমতলী: ১, কোতোয়ালি: ২, লালবাগ: ১৩, লক্ষ্মীবাজার: ২, মালিবাগ: ২, মানিকদি: ১, মীর হাজিরবাগ: ২, মিরপুর-১: ৫, মিরপুর-৬ :২, মিরপুর-১০: ৫, মিরপুর-১১: ১০, মিরপুর-১২: ৮, মিরপুর-১৩: ২, মিটফোর্ড: ১, মগবাজার: ৪, মহাখালী: ৭, মোহাম্মদপুর: ১২, মুগদা: ১, নবাবপুর: ১ নারিন্দা: ২, নিকুঞ্জ: ১, পীরেরবাগ: ২, পুরান পল্টন: ২, রাজারবাগ: ২, রামপুরা: ১, রায়েরবাজার: ১, সায়েদাবাদ: ১, শাহ আলী বাগ: ২, শাহবাগ: ২, শান্তিনগর: ৫, সোয়ারি ঘাট: ৩, সিদ্ধেশ্বরী: ১ শনির আখরা: ১, সুত্রাপুর: ২ তেজগাঁও: ৩, টোলারবাগ: ১৯, উর্দু রোড: ১, উত্তরা: ১৭, ওয়ারী: ১৬। |
ঢাকার পর দেশে সবচেয়ে বেশি রোগী ধরা পড়েছে রাজধানীর পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জে, যেখানে গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
ইতোমধ্যে পুরো অবরুদ্ধ করে ফেলা এ জেলায় এ পর্যন্ত ১০৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এমনকি জেলার সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজেও এখন আক্রান্ত।
ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ- এ দুই জেলাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪২ জন, যা দেশে মোট আক্রান্তের ৭১ শতাংশের বেশি।
কয়েকদিন আগেও নারায়ণগঞ্জকে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ‘এপিসেন্টার’ বলেছিলেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোববারের ব্রিফিংয়ে বলেন, “প্রতিটি জেলার তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, যাদের মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া গেছে, তারা গত এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ থেকে ওই সমস্ত এলাকাগুলোতে গিয়েছেন। সেজন্য আমরা বারবার সবাইকে সতর্ক করছি, এ সময়ে আপনারা ভ্রমণ করবেন না।”
পুরো ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত ৫২৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা দেশে মোট আক্রান্তের ৮৫ শতাংশের বেশি। ৬ শতাংশ রোগী চট্টগ্রাম বিভাগের এবং বাকিরা অন্যান্য বিভাগের।
অধ্যাপক ফ্লোরা জানান, সারা দেশে এ পর্যন্ত মোট ৩৮টি জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তবে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় এখনও কোনো রোগী শনাক্ত হযনি।
ঢাকা বিভাগঢাকা মহানগরীতে ৩১৩, ঢাকা জেলার অন্যান্য এলাকায় ২২, নারায়ণগঞ্জে ১০৭, গাজীপুরে ২৩, মাদারীপুরে ১৯, মুন্সীগঞ্জে ১৪, কিশোরগঞ্জে ১০, রাজবাড়ীতে ৬, মানিকগঞ্জে ৫, নরসিংদীতে ৪, গোপালগঞ্জে ৩, টাঙ্গাইলে ২ এবং শরিয়তপুরে ১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এ বিভাগের ১৩ জেলার মধ্যে কেবল ফরিদপুর জেলায় কারও মধ্যে সংক্রমণ ধরা পাড়ার তথ্য আইইডিসিআরের তালিকায় নেই।
চট্টগ্রাম বিভাগ
চট্টগ্রামে ১২ জন, কুমিল্লায় ৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৬ জন, চাঁদপুরে ৬ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন, কক্সবাজারে ১জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এ বিভাগের ফেনী, নোয়াখালী জেলা এবং তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে কোনো কোভিড-১৯ রোগী ধরা পড়েনি।
সিলেট বিভাগ
এ বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জে একজন করে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সুনামগঞ্জে এখনও কারও মধ্যে সংক্রমণের খবর আইইডিসিআরের কাছে নেই।
রংপুর বিভাগ
গাইবান্ধায় ৬, নীলফামারীতে ৩, ঠাকুরগাঁয়ে ৩, রংপুরে ২ এবং লালমনিরহাটে ১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
এ বিভাগের আট জেলার মধ্যে দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগরে কোনো রোগী এখনও শনাক্ত হয়নি।
ময়মনসিংহ বিভাগ
এ বিভাগের চার জেলার সব জায়গা থেকেই সংক্রমণের খবর এসেছে। এর মধ্যে জামালপুরে ৬, ময়মনসিংহে ৫, শেরপুরে ২, নেত্রকোণায় একজন আক্রান্ত হয়েছেন।
বরিশাল বিভাগ
এ বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে বরগুনায় ৩, ঝালকাঠিতে ৩ এবং পটুয়াখালীতে একজন আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে। বরিশাল, ভোলা ও পিরোজপুরে কারাও মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েনি।
খুলনা বিভাগ
এ বিভাগের দশ জেলার মধ্যে কেবল চুয়াডাঙ্গায় একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এসেছে আইইডিসিআরের তালিকায়।
বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর, নড়াইল ও সাতক্ষীরায় এখনও কারও কোভিড-১৯ ধরা পড়েনি।