দেশে পর্যটনের ক্ষতি ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা: টোয়াব
নভেল করোনাভাইরাসের অভিঘাতে এরই মধ্যে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে দাবি করে সরকারের বিশেষ প্রণোদনা চেয়েছে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)।
বুধবার সংগঠনের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বাংলাদেশের পর্যটন খাত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই ‘কার্যত অচল’ অবস্থায় রয়েছে। অভ্যন্তরীণ পর্যটনের সব বুকিং বাতিল হয়ে গেছে।
এ অবস্থায় কেবল ট্যুর অপারেটররা নয়, এ শিল্প সংশ্লিষ্ট সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, এয়ারলাইন্স, পর্যটক পরিবহন, ক্রুজিং ও গাইডিং সংশ্লিষ্ট অন্তত ৪০ লাখ পেশাজীবী এখন জীবিকা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
“দ্য ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বজুড়ে ৫ কোটি মানুষ কাজ হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। আমাদের সদস্যদের সাথে কথা বলে আমরা বলতে পারি যে, করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে এবং বিপদ কেটে গেলেও এর ধকল সামলে উঠতে পর্যটন খাতের অন্তত দুই বছর লেগে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন রাফেউজ্জামান।
তিনি বলেন, “পরিস্থিতির সঙ্গে এ অসম লড়াইয়ে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেও সুরক্ষা সহযোগিতা জরুরি।”
এর অংশ হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটন খাতের লোকসানের একটি হিসাব ধরে টোয়াবের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আপৎকালীন ও দীর্ঘমেয়াদী কয়েকটি দাবি তুল ধরা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
আপৎকালীন দাবির মধ্যে, টোয়াবের সদস্যদের আপৎকালীন আর্থিক সহায়তা, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকার সহায়তা প্যাকেজের আওতায় টোয়াব সদস্যদের ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল’ যোগানো, কর্মচারীর বেতন-ভাতা, অফিস ভাড়া, ইউটিলিটি বিল মেটাতে দুই বছরের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া টোয়াব সদস্যদের এআইটি এবং ট্রেড লাইসেন্স ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ফি, পস মেশিন ট্রানসেকশন ফি ও ইউলিটি বিল, টোয়াবের সহযোগী সদস্যদের যাদের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট আছে সেগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট মওকুফ করা এবং র চলমান ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ও সুদ মওকুফ করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
কক্সবাজার, সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, সিলেট, বরিশাল ও অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটন-সংশ্লিষ্ট স্বল্প আয়ের পেশাজীবীদের (স্থানীয় ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, কমিউনিটি পর্যটন পরিবার, মাঝি, চালক ইত্যাদি) জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের তত্ত্বাবধানে আপৎকালীন আর্থিক অনুদানের দাবিও রয়েছে তাদের।
টোয়াব সদস্যদের কেউ কোভিড-১৯ এ মারা গেলে তাদের পরিবারকে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
সেখানে বলা হয়েছে, এবার করোনাভাইরাসের কারণে টোয়াবের বার্ষিক মেলা পিছিয়ে দেওয়ায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তা পুষিয়ে নিতে আগামী ৩ বছর মেলার ভেন্যু ভাড়া মওকুফ ও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।
এছাড়া ভবিষ্যতে পর্যটকদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসার পাশাপাশি ই-ভিসা প্রবর্তন করা, পর্যটনের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অনুদান ও সহজ শর্তে ঋণ আনার ব্যবস্থা করা, বাংলাদেশের পর্যটনের প্রচার, ব্র্যান্ডিং ও বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন, টোয়াবের সহযোগী সদস্যদের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট পরিচালনায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ‘ইকুইপমেন্ট’ আমদানিতে ‘ট্যাক্স ফ্রি’ সুবিধা দেওয়ার কথা রয়েছে সংগঠনটির দীর্ঘমেয়াদী দাবিনামার মধ্যে।