দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হয়েছে : অ্যাটর্নি জেনারেল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
তিন বছর আগে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় দেশের ভাবমূর্তি যতটুকু ম্লান হয়েছিল, মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মধ্য দিয়ে তা পুনরুদ্ধার হয়েছে বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়, জঙ্গীবাদ নির্মূলে সরকার যে তৎপর, এ রায়ের মাধ্যমে সেটিও প্রমাণ হয়েছে।
গতকাল বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান বুধবার জনাকীর্ণ আদালতে সাত আসামির জন্য মৃত্যুদণ্ড রায় ঘোষণা করে রায় দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল জঙ্গিবাদ প্রশমনের ক্ষেত্রে এ রায়কে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, আমাদের দেশ যে জঙ্গিবাদ উৎপাটনের ক্ষেত্রে আন্তরিক এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম- এই মামলার রায় থেকে এটাই প্রমাণ হয়েছে।
এই ঘটনাটি (হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা) আমাদের দেশের ভাবমূর্তি অনেকটা ম্লান করেছিল। এই রায়ে ফলে সেই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সরকার যে তৎপর নয় বলে তা প্রমাণিত হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়া জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন আদেশের সময় কাঠগড়াতেই উপস্থিত ছিলেন।
মামলাটির ডেথ রেফারেন্স বা দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল শুনানির প্রসঙ্গ টেনে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নিশ্চয়ই ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাই কোর্টে এই মামলা আসবে। তখন আমরাও আমদের সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে এই মামলাটি পরিচালনা করার চেষ্টা করব, যাতে জঙ্গিবাদের ব্যাপারে আদালত যে রায় দিয়েছে, সে রায়টি যেন বহাল থাকে।
যারা জঙ্গিবাদের প্রতি আকৃষ্ট বা জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে, এই রায়ের মাধ্যমে তাদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছুবে বলে মনে করেন প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার তাগাদা দিয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো- যারা বিত্তবান ঘরের ছেলে, তারা ভাল স্কুলে পড়াশুনা করছে, আবার তারাই জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে।
আমার মনে হয় সময় এসেছে, সেরকারি-বেসরকারি, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, মাদরাসাসহ সব জায়গায় অন্ততপক্ষে এই জঙ্গিবাদের শিক্ষা দেওয়া না হয়, কোনো রকমভাবে সেদিকে আকৃষ্ট করা না হয়, উৎসাহিত করা না হয়, এ ব্যপারে সবাই মিলে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। জঙ্গিবাদ দমনে এটি একটি যুগান্তকারী রায়।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা যে নৃসংশতা দেখিয়েছে, তাতে আসামিদের প্রাণদণ্ড হওয়াটাই যথাযথ। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য রায়ের বিস্তারিত হাই কোর্ট আসবে; আসামিরাও হয়তো আপিল করবে। হাই কোর্ট যদি মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে এরপর তা সর্বোচ্চ আদালতে গড়াবে।
সেখানেও রায় বহাল থাকলে আসামিদের দোষ স্বীকার রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া ছাড়া আর কোনো আইনি সুযোগ থাকবে না। তবে এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সাধারণত প্রাণভিক্ষার আবেদন গ্রহন করবেন না বলেই আমার ধারণা।