November 25, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

দু’বছর পর মঙ্গল শোভাযাত্রা

দুই বছর পর বাংলা বর্ষবরণে হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। মহামারির গ্লানি ভুলে সুসময়ের বার্তা দিলো এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক ছাত্রকেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে থেকে বের হয় শোভাযাত্রাটি। ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ প্রতিপাদ্যে বের হওয়া শোভাযাত্রার গন্তব্য ছিল ঢাবি ভিসির বাসভবন। ভিসির বাসভবনের সামনে স্মৃতি চিরন্তন ঘুরে শোভাযাত্রাটি আবার টিএসসিতে ফিরে যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেলের কাজ চলায় শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত সড়ক সঙ্কুচিত হয়ে পড়ায় এবার শোভাযাত্রার গতিপথে পরিবর্তন আনা হয়।

শোভাযাত্রা ঘিরে ছিল কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরো শোভাযাত্রার চতুর্দিকে সোয়াট, ডিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও স্কাউট সদস্যদের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী চোখে পড়ে। এছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের টিমও তৎপর ছিল।

শোভাযাত্রার পুরো পথে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। পথে কেউ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারেননি। কারণ চতুর্দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে মানবপ্রাচীর গঠন করা হয়। নিরাপত্তার জন্য রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় কেন্দ্রীয় রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়।

শোভাযাত্রা বেরোনোর আগেই টিএসসি থেকে নীলক্ষেত যাওয়ার পথটি লোকারণ্য হয়ে পড়ে। যদিও সকাল থেকেই রং-বেরঙের মাছ, পাখি, ঘোড়া, টেঁপা পুতুল, ঢাকঢোল-বাঁশি নিয়ে চারুকলা অনুষদের সামনের সড়কে অপেক্ষায় ছিলেন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা।

শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে খুন, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে জেগে ওঠার প্রত্যয়। অতীতের গ্লানি মুছে দিয়ে অনাগত সুদিনের পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার তাড়না ছিল শোভাযাত্রার শিল্পকাঠামোয়।

প্রতিবারের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকলেও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের প্রতিটি প্রবেশ মুখে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। এছাড়া পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ছিল পুলিশ, র্যাব, সোয়াতসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল।

ঢাকঢোলের বাদ্যি আর তালে তালে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ছন্দোবদ্ধ নৃত্যে আনন্দ-উৎসবমুখর হয়ে ওঠে শোভাযাত্রা। বাংলাদেশে কাজ করেন এমন অনেক বিদেশি বর্ণিল পোশাকে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

ঢাবি ভিসি মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, দুই বছর পর মঙ্গল শোভাযাত্রা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। দুই বছর পর এবার পহেলা বৈশাখ প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। মানুষের প্রাণের উচ্ছ্বাসে জায়গা পহেলা বৈশাখ। এটি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রাণের একটা উৎসব।

তিনি বলেন, সব সম্প্রদায়ে মানুষ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারে বলেই এই উৎসবটি অসম্প্রদায়িক মানবিক চেতনা জাগ্রত করে। ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সকলের। মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রতি, মানবিক কল্যাণ সুদৃঢ় হোক সেটা প্রত্যাশা করি।

৮০ এর দশকে সামরিক শাসনের শেকল ভাঙার আহ্বানে বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে চারুকলা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। পরে তা মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম ধারণ করে। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পায় এই কর্মসূচি।

মহামারি হানা দেওয়ার পর ২০২০ সালে বর্ষবরণের আয়োজন ছিল সংক্ষিপ্ত, সে বছর মঙ্গল শোভাযাত্রাও হয়নি। ২০২১ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা হলেও তা ছিল প্রতীকী, সেখানে সবার অংশগ্রহণের সুযোগও ছিল না।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *