December 27, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

দুধ-দই ও গোখাদ্য পরীক্ষার নির্দেশ

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও বাজারে প্যাকেটজাত দুধ, দই ও গোখাদ্যে ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, সীসা, রাসায়নিকের মাত্রা নিরূপনে বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে জরিপ চালাতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
এই খাদ্যে ভেজাল মেশানো এবং ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, সীসা, রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়ার ঘটনায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত কি না, তা অনুসন্ধান করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে দুদক চেয়ারম্যানকে।
সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর নজরে আসার পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চ গতকাল সোমবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেয়।
আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে জরিপ চালিয়ে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই), নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটিকে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ভেজাল মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত এবং ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, সীসা, রাসায়নিকের মাত্রা নিরূপণ ও ভেজাল মেশানোর কাজে জড়িতদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি করতে বলেছে হাই কোর্ট।
এই কমিটিকে জড়িতদের চিহ্নিত করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া দুধ, দই ও গোখাদ্যে ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, সীসা, রাসায়নিকের উপস্থিতি আছে কি না, তা পরীক্ষা করে ছয় মাস পরপর আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আদালতের দেওয়া রুলে বলা হয়েছে, নিরাপদ দুধ, দই ও গো খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও ভেজাল প্রতিরোধে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না? পাশাপাশি দুধ-দই ও গোখাদ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
খাদ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব, কৃষি সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিএসটিআই চেয়ারম্যানকে চার সপ্তাহের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
দুধ, দই ও দুধজাত পণ্যে ভেজাল মেশানোকে ‘মারাত্মক দুর্নীতি’ বলে মন্তব্য করেছে আদালত। বিচারক বলেছেন, খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটি সিরিয়াস করাপশন। এ ধরনের ভেজালে মানুষের কিডনি, লিভার নষ্ট হচ্ছে, ক্যান্সার হচ্ছে।
বিচারক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মানুষ শুধু টাকার পেছনে ঘুরছে। দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে কেউ ভাবছে না। স্বাস্থ্যই যদি ঠিক না থাকে, তাহলে এত টাকা-পয়সা দিয়ে হবেটা কী? আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব।
আদেশের পর মামুন মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, দুধ, দই, গোখাদ্যে ভেজাল মেশানো এবং তা বাজারজাত করাকে আদালত সিরিয়াস করাপশন বলেছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান, তদন্ত করে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আদেশের আগে প্রথমেই আদালত এ বিষয়ে সরকার ও দুদকের বক্তব্য জানতে চান। পরে আদালত অন্তর্বর্তী নির্দেশনাসহ রুল জারি করেছেন।
আগামী ৩ মার্চ পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে আদালত ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবেদককে প্রতিবেদনটি হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলেছেন।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গো খাদ্য, দুধ, দই ও বাজারে থাকা প্যাকেটের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগার (এনএফএসএল) জরিপ চালায়।
এনএফএসএল জরিপের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাভির দুধের ৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করে। ঢাকাসহ তিন জেলার ছয়টি উপজেলাসহ ১৮টি স্থান থেকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। গাভির দুধ ও গোখাদ্য সরাসরি খামার থেকে সংগ্রহ করা হয়।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান ও আশপাশের উপজেলার দোকান থেকে দই সংগ্রহ করে এনএফএসএল। বিভিন্ন সুপার স্টোর থেকে সংগ্রহ করা হয় বাজারে প্রচলিত প্রায় সব ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত তরল দুধ এবং আমদানি করা প্যাকেট দুধ।
গোখাদ্যের ৩০টি নমুনা পরীক্ষা করে কীটনাশক (২ নমুনায়), ক্রোমিয়াম (১৬টি নমুনায়), টেট্রাসাইক্লিন (২২টি নমুনায়), এনরোফ্লোক্সাসিন (২৬টি নমুনায়), সিপ্রোসিন (৩০টি নমুনায়) এবং আফলাটক্সিন (৪টি নমুনায়) গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রা পাওয়ার কথা জানিয়েছে এনএফএসএল।
গাভির দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় সীসা পেয়েছে তারা। ৯৬ শতাংশ দুধে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াও পাওয়া গেছে।
প্যাকেটের দুধের ৩১টি নমুনায় ৩০ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে টেট্রাসাইক্লিন পাওয়ার কথাও জানিয়েছে এনএফএসএল। একটি নমুনায় সীসা মিলেছে। একই সঙ্গে ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশ দুধের নমুনায় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া পাওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। দইয়ের ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে একটিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সীসা পাওয়ার কথা জানিয়েছে এনএফএসএল। ৫১ শতাংশ নমুনায় মিলেছে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *