দিল্লির ‘রক্ষাকর্তা’ সেই বিচারপতিকে বদলি
ভারতের রাজধানীতে সহিংসতার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও দিল্লি পুলিশকে কড়া ভাষায় তিরস্কার করা দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরালিধরকে রাতারাতি বদলি করা হয়েছে।
বুধবার মাঝরাতে তাকে বদলি করে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
দিল্লিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে গত চার দিন ধরে চলা দাঙ্গায় ২৮ জন নিহত ও দুই শতাধিক লোক আহত হয়েছে। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য দিল্লি পুলিশের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। পুলিশ আগে থেকে আরও সক্রিয় হলে পরিস্থিতি এতটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেত না, এমনটিই মত সমালোচকদের।
বুধবার ভোররাতে বিচারপতি মুরালিধরের বাসভবনে বিচারপতি কেএম জোসেফ ও বিচারপতি মুরালিধরের বেঞ্চ অগ্নিগর্ভ রাজধানীতে লাফিয়ে লাফিয়ে মৃত্যুসংখ্যা বাড়তে থাকার জন্য দিল্লি পুলিশকে তিরস্কার করেন।
“দিল্লি পুলিশ স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছে না এবং তাদের মধ্যে পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে” বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি মুরালিধর।
“এই দেশে ১৯৮৪ সালের মতো আরেকটি হত্যাযজ্ঞ ঘটতে দিতে পারি না আমরা,” এমন মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লির সরকারকে সহিংসতা বন্ধে একযোগে কাজ করার জন্য বলেছিলেন তিনি।
বুধবার দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে মামলার শুনানির সময় দাঙ্গার কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে আসতে বাধ্য হওয়া লোকজনের জন্য উপযুক্ত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
এর পাশাপাশি উত্তরপূর্ব দিল্লিতে দাঙ্গা উস্কে দেওয়া ও এর সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য বিজেপির চার নেতা, কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর, অভয় ভার্মা ও প্রাভেশ ভার্মার বিরুদ্ধে কেন মামলা দায়ের করা হয়নি, দিল্লি পুলিশের কাছে তা জানতে চান আদালত।
মামলা দায়ের না করার জন্য যে ‘গুরুতর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে’ তা বিবেচনায় নিতে দিল্লির পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দেন বিচারপতি মুরালিধর।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা তুষার মেহতা, ‘উপযুক্ত সময়ে’ মামলা দায়ের করা হবে বলে আদালতকে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্ট করলে বিচারপতি মুরালিধর বলেছিলেন, “উপযুক্ত সময় কখন জনাব মেহতা? নগর পুড়ছে।”
এ বিচারপতির এমন ভূমিকা দেখার পর দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবীরা তাকে ‘দিল্লির রক্ষাকর্তা’ বলে অভিহিত করা শুরু করেন বলে জানায় আনন্দবাজার পত্রিকা।
এনডিটিভি জানায়, বুধবার রাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লি হাইকোর্টের তৃতীয় শীর্ষ এই বিচারপতির বদলির আদেশ ইস্যু করে।
এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি এস মুরলিধরকে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলির সুপরিশ করেছিল ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। এই সুপারিশের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করেছিল দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবীরা। বিচারপতি মুরালিধরকে বদলি করা হলে প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হবে মন্তব্য করে এর তীব নিন্দা করেছিল দিল্লি হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন।
কলেজিয়ামের ওই সুপারিশ মেনেই তার দুই সপ্তাহ পর মুরালিধরকে বদলি করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। একই রাতে দিল্লির পাঁচ আইপিএস কর্মকর্তাকেও বদলি করা হয়।