দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডে চূড়ান্ত বিচারে মৃত্যুদণ্ড বহাল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
দিলিতে চলন্ত বাসে এক প্যারামেডিকেল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির মধ্যে শেষ ব্যক্তির রিভিউ আবেদনও খারিজ হয়ে গেছে। আর এর মধ্যে দিয়ে ধর্ষণ-হত্যায় দোষী সাব্যস্ত ওই চার আসামি আরও একটু এগিয়ে গেল ফাঁসিকাষ্ঠের দিকে।
নিয়ম অনুযায়ী আসামিরা ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করার সুযোগ পান। সেই সুযোগ না নিলে বা আবেদন নাকচ হয়ে গেলে তাদের সাজা কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, চার আসামির মধ্যে তিনজনের রিভিউ আবেদন আগেই খারিজ হয়ে গিয়েছিল। সর্বশেষ অক্ষয় কুমার সিংয়ের রিভিউ আবেদনের শুনানি করে বুধবার তা খারিজ করে দেয় তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চ।
অক্ষয়ের আইনজীবী প্রাণভিক্ষার আবেদনের জন্য তিন সপ্তাহের সময় চেয়েছিলেন আদালতের কাছে। কিন্তু আদালত সেজন্য এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে ফেরার সময় চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হন ওই প্যারামেডিকেল ছাত্রী।
ছয় পাষণ্ড ধর্ষণের আগে তার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে। পরে তাদের দুজনকেই চলন্ত বাস থেকে ফেলা দেওয়া হয়। এর দুই সপ্তাহ পর মারাত্মক আহত ওই ছাত্রী সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ওই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ছাত্র-জনতা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মেয়েটির নাম দেয় ‘নির্ভয়া’। মামলায় অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে মারা যান; পরে তার নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
দোষী সাব্যস্ত আরেক অপরাধী সে সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিশোর অপরাধীদের জন্য প্রযোজ্য আইনে ২০১৫ সালে তাকে তিন বছরের জন্য সংশোধনাগারে পাঠায় আদালত। আইন অনুযায়ী সেটাই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সর্বোচ্চ সাজা।
শাস্তির মেয়াদ কাটিয়ে ২০১৫ সালে সেই তরুণ মুক্তি পেলে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরপর ধর্ষণের মত গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ বিবেচনা করে বিচারের আইন হয় ভারতে।
ভারতের একটি দ্রুত বিচার আদালত ২০১৩ সালে বাকি চার আসামির ফাঁসির রায় দেয়। পরের বছর হাই কোর্ট এবং গতবছর আপিল ওই সাজাই বহাল রাখে।
তাদের মধ্যে আসামি মুকেশ, পবন গুপ্ত ও বিনয় শর্মার রিভিউ আবেদন গতবছর জুলাই মাসে খারিজ হয়ে যায়। অপর আসামি অক্ষয় সিং গত ১০ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তার ওপর শুনানি শুরু হয়।
অক্ষয়ের আইনজীবী এপি সিং আদালতে বলেন, গণমাধ্যম ও জনতার চাপেই অক্ষয়কে মামলায় জড়ানো হয়েছে। মৃত্যুর আগে দেওয়া নির্ভয়ার জবানবন্দি ‘সন্দেহজনক’ এবং তার ওপর ‘নির্ভর করা যায় না’।
এর জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তুষার মেহতা বলেন, কোনো ক্ষমা অভিযুক্তের প্রাপ্য নয়। এ ধরনের দানব তৈরি করার জন্য খোদাও লজ্জা পাবে। যে ধরনের অপরাধে ‘মানবতা কেঁদে ওঠে’ এটা সেই ধরনের মামলা।