দাকোপে গ্রাম আদালতের সেবা প্রান্তিক মানুষের দ্বারপ্রান্তে
দাকোপ প্রতিনিধি
খুলনার উপকুলীয় অঞ্চলে অবস্থিত দাকোপে গ্রাম আদালতের সেবা প্রান্তিক মানুষের দ্বার প্রান্তে। দরিদ্র ও হতদরিদ্র থেকে শুরু করে এলাকার মানুষ ছোট ছোট দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার বিচার গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদে নিষ্পত্তি হওযায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এ উপজেলায় গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠিত হওযার পর থেকে গত ২ বছরে ৭৮০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
উপজেলা গ্রাম আদালত অফিস ও জনপ্রতিনিধি এবং এলাকা বাসী সুত্রে জানা যায়,উপজেলা ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ নিয়ে গঠিত এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠিত পক্ষে ছোট ছোট দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা জন্য এখন আর জেলা শহর খুলনাতে অধিক টাকা-পয়সা খরচ করে যেতে হয় না। ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন,ইউএনডিপি, বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতার গ্রাম আদালত সক্রীয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় এবং বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে দাকোপে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের ছোট ছোট দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা (অনুর্ধ ৭৫ হাজার টাকা) স্থানীয় ভাবে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠিত করে মামলা নিষ্পতি করে আসছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপির সদস্য বৃন্দ।
গ্রাম আদালত থেকে সুবিধা প্রাপ্তি উপজেলার লাউডোব ইউনিয়নের বিপুল বাছাড়, পানখালী ইউনিয়নের একরামুল শেখ, তিলডাঙ্গা ইউপির মোঃ আজিজুল গাজী, কামারখোলা ইউপির সবিতা বাইন, সুতারখালী ইউপির শাহানারা বেগমসহ অনেকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর থেকে ছোট খাট বিরোধ এলাকায় দেখা দিলে ভুক্তভোগী ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতে অভিযোগ বা মামলা দায়ের করে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের মাধ্যমে সীমিত সময়ের মধ্যে তাদের অভিযোগ ও মামলার নিষ্পত্তি করে থাকে। যদি কোন মামলার রায় বাদীর পক্ষে না যায় তাহলে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মামলার নকল সংগ্রহ করে উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচারে স্বার্থে যেতে পারেন। গ্রাম আদালতে বিচারক হচ্ছেন অত্র ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য ও স্থানীয় ব্যাক্তি। স্থানীয় সরকার আইন ২০০৬ (সংশোধন ২০১৩) অনুযায়ে তারা তাদের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। ছোট ছোট দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা (অনুর্ধ ৭৫ হাজার টাকা) মধ্যে ক্ষয়-ক্ষতি থাকলে ইউপি পরিষদের বিচারক গন বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।
এ বিষয়ে উপজেলা গ্রাম আদালত সমন্বয়কারী মোঃ সবুজ আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে দাকোপ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম শুরুর হওয়ার পরে থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে ৮৩৪টি মামলা গ্রহন করে। এর মধ্যে ৭৮০টি মামলা গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকী ৫৪টি মামলা বিভিন্ন ইউনিয়নে বিচারধীন রয়েছে। উপজেলা ৯টি ইউনিয়নে এক জন করে গ্রাম আদালত সহকারী কর্মকর্তা রয়েছে এ প্রকল্পে। গ্রাম আদালতে সাধারণ মানুষ ১০ টাকা ও ২০ টাকা ফিস দিয়ে অল্প সময় ছোট ছোট দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা দায়ের করতে পারেন।
এ বিষয়ে সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুম আলী ফকিরের সাথে কথা বলে জানান,গ্রাম আদালত গঠিত হয় ৫ জন সদস্য নিয়ে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানই গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান, আবেদন কারী ও প্রতিবাদি পক্ষের ২ জন্য করে সদস্য,(এক জন ইউপি সদস্য ও একজন স্থানীয় ব্যাক্তি) নিয়ে গ্রাম আদালত গঠিত হয়। গ্রাম আদালতে অভিযোগ হলে তা ইউনিয়ন পরিষদে বসে গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। মামলার কার্যক্রম নথিতে লিপিবন্ধ ও সংরক্ষণ করা হয় এবং সংক্ষিপ্ত সময়ের মামলা নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে।