তেজোদ্দীপ্ত বার্তায় প্রশংসায় ভাসছেন সানজিদা
ইতিহাস গড়ার হাতছানি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সামনে। আজ (সোমবার) বিকেল সোয়া ৫টায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের মেয়েরা। এর আগে ২০১৬ সালের আসরে ফাইনালে উঠলেও জয় পায়নি নারী দল।
এবার ফাইনালে নামার আগে আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান পুরো দল। গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচের পর সেমিফাইনালেও সহজ জয়ে শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চের টিকিট পেয়েছে বাংলাদেশ। এই চার ম্যাচে তারা করেছে ২০টি গোল, বিপরীতে হজম করেনি একটিও।
নেপালে বিপক্ষে ফাইনালের আগে দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে উদ্যমী ও তেজোদ্দীপ্ত এক বার্তা দিয়েছেন নারী দলের অন্যতম সেরা ফুটবলার সানজিদা আখতার। যা এরই মধ্যে ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নিজেদের জিততে চাওয়ার বাসনা পরিষ্কার করা সেই বার্তার প্রশংসায় ভাসছেন সানজিদা।
সানজিদার লেখার অংশবিশেষ উল্লেখ করে বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট আমিনুল ইসলাম নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সানজিদা আখতার নামের মেয়েটার লেখা পড়ে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের এই মেয়েটা সাফ ফুটবলের ফাইনাল খেলার অপেক্ষায় আছে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রিয় সানজিদা, এই দেশকে তোমরাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছ। তোমারা যদি চ্যাম্পিয়ন না-ও হও; কোন ক্ষতি নেই। কারণ আমরা জানি, কতো বাধা পার হয়ে তোমরা আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছ। তাই আমাদের কাছে তোমরাই এই দেশের চ্যাম্পিয়ন।’
এছাড়া প্রায় ১২শ’র বেশি মানুষ সানজিদার সেই লেখাটি শেয়ার করেছেন। প্রায় সবারই মতামত অভিন্ন। সানজিদার সাহসী বার্তার পর ফাইনাল নিয়ে আরও বেশি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন সবাই। সকলের আশা, এবার নেপালকে হারিয়ে ঠিকই চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশ।
রাতিন রহমান নামের আরেক ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্ট নিজের প্রোফাইলে লিখেছেন, ‘সানজিদা আখতার, আপনার শব্দচয়ন আর চিন্তার সুদূরপ্রসারী ব্যাপ্তিতে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এমন দুঃসাহসী সুন্দর আনন্দময়ীদের জন্য বাজি ধরা যায় সবকিছুই! সাবাশ বাঘিনীরা, সবটুকু ভালোবাসা আর শুভকামনা তোমাদের জন্য!’
নিচে সানজিদার পুরো বার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
২য় বারের মতো সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ। প্রথমবার ফাইনাল খেলেছি ২০১৬ সালে। সেবার ভারতের বিপক্ষে আমরা হেরে যাই। ৫ বার সাফের মঞ্চে এসে ১ বার রানার্সআপ, ৩ বার সেমিফাইনাল এবং ১ বার গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছি আমরা।
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এবার মাঠে দারুণ ছন্দে রয়েছি, ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। স্বাগতিক হিসেবে ফাইনাল খেলা কিংবা স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ফাইনাল খেলা সবসময় রোমাঞ্চকর। এছাড়াও এবারের ফাইনাল ম্যাচটি কিছুটা ভিন্ন। বহুদিন পর সাফ পাবে নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন দেশ। আর তাই এবার রোমাঞ্চকর একটি ফাইনাল ম্যাচ হতে যাচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের হাত ধরে ২০০৩ সালে দক্ষিন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছিলো বাংলাদেশ। এখনো আমরা সেই গল্প শুনি। বাংলাদেশ ফুটবলের বড় সাফল্যের মহাকাব্যে সেটি উজ্জ্বলতম অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এবার আমাদের জেতার সময় এসেছে। আমাদের দলের প্রতিটি সদস্য এটি জিততে মুখিয়ে আছে।
যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থণের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনী কে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরো নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।
পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।
আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। দক্ষিন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাবো। জয় – পরাজয় আল্লাহর হাতে। তবে বিশ্বাস রাখুন, আমরা আমাদের চেষ্ঠায় কোনো ত্রুটি রাখবো না ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।