তীব্র শীতেও খোলা আকাশের নিচে আমরণ অনশনে পাটকল শ্রমিকরা
তৃতীয় দিনে অসুস্থ আরও আটজন
জয়নাল ফরাজী
১১ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বিক্ষোভ ও প্রতিকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ২য় পর্যায়ে গতকাল মঙ্গলবার কর্মসূচির ৩য় দিনে অব্যাহত রয়েছে।
খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বিক্ষোভ ও অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই কর্মসূচির টানা ৩য় দিন গতকাল মঙ্গলবার অব্যাহত রয়েছে। খালিশপুরে ক্রিসেন্ট, প্লাাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর ও দিঘলিয়ার ষ্টার মিলের শ্রমিকরা বিআইডিসি রোডে, আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইষ্টার্ন এবং নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার কার্পেটিং, জেজেআই মিলের শ্রমিকরা স্ব স্ব মিল গেটে অবস্থান নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন কর্মসূচি পালন করছে। তীব্র শীতের মধ্যে গেল ২ রাত ৩ দিন খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করে একে পর এক অনাহারী শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৮ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়েছে। এদের মধ্যে প্লাটিনাম জুট মিলের তাত বিভাগের মোঃ আবু ও ফিনিসিং বিভাগের মোঃ শাহ আলমকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া অনশন স্থলে অর্ধশতাধিক শ্রমিককে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
খালিশপুর বিআইডিসি রোড, খুলনা-যশোর মাহাসড়কে প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তায় শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করার কারণে আন্দোলনকারীরা দু’পাশের যান চলাচল বন্ধ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। শ্রমিকদের আন্দোলন চলাকালে ক্রিসন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, ষ্টার, আলীম ও ইষ্টার্ন জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন অব্যাহত রেখে এই কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচি চলাকালে খালিশপুর, আটরা ও রাজঘাট এলাকায় দফায় দফায় শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক আব্দুল হামিদ সরাদর যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন, মোঃ সোহরাব হোসেন, শাহানা শারমিন, হুমায়ুন কবির খান, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ ও শেখ মোঃ ইব্রাহীম, সাইফুল ইসলাম লিঠু, নেতা কাওসার আলী মৃধা, মোঃ খলিলুর রহমান, সেলিম আকন, সেলিম শিকদার,মনিরুল ইসলাম শিকদার, মোঃ আবু হানিফ, সাহাজান সিরাজ মোঃ তরিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও মিন্টু মিয়া, ষ্টার জুট মিলের বেল্লাল মল্লিক, আব্দুল মান্নান. মাসুম গাজী,আবু হানিফ, তবিবর রহমান, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম লিয়াকত হোসেন। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে জাতীয় মজুরী ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকরসহ ১১ দফা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে জোর আহবান জানান।
পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরী-বেতন পরিশোধ, জাতীয় মজুরী ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকুরীচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বহালসহ ১১ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের নেতারা রাজপথে আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর থেকে অনশন কর্মসূচি পালন করে শ্রমিকরা। এই কর্মসূচি চলাকালে ১৩ ডিসেম্বর রাতে খুলনা বিভাগীয় যুগ্ম শ্রম পরিচালকের অধিদপ্তরে আন্দোলনরত শ্রমিক নেতাদের সাথে জরুরী বৈঠকে বসেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। প্রতিমন্ত্রীর প্রতিশ্রæতিতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনশন স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ১৫ ডিসেম্বর বিজেএমসিতে ও ২৬ ডিসেম্বর শ্রম মন্ত্রণালয়ে শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান আবারও প্রতিশ্রæতি দিয়ে একমাস পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান। এ সময় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের নেতারা প্রতিমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখান করে আন্দোলনে ফিরে আসে। পুনরায় ঘোষণা দেন অনির্দিষ্টকালের অনশন কর্মসূচির।