November 27, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

তিস্তা ব্যারেজের সব গেট খুলে দেওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

কার্তিক মাসের বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরের লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্রাবিত হয়েছে।

বুধবার (২০ অক্টোবর) বেলা ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, ভারতের সিকিম উপত্যকা থেকে সৃষ্ঠ তিস্তা নদী ভারতে প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উজানে ভারতের অংশে ভারত সরকার বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা নদীর এক তরফা ভাবে ব্যবহার করছে। ফলে শুষ্কু মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে কোনো পানি থাকে না। মরুভূমিতে পরিণত হয় তিস্তা। আবার বর্ষাকালে অতিবর্ষণের ফলে ভারতের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যা আর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলাসহ নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা।

চলতি বর্ষা মৌসুমেও কয়েক দফায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরে পানি কমতে থাকে তিস্তায়। বর্ষা শেষ না হতেই আবারও পানি শূন্য হতে থাকে তিস্তা নদী। প্রায় শূন্যের কোটায় যাওয়া তিস্তা গত দুই দিনের ভারী বর্ষণে কার্তিক মাসেও ফুলে ফেঁপে উঠেছে তিস্তা নদী। হঠাৎ পানি বাড়ার কারণে তিস্তার উভয় তীর উপচিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডুবে গেছে চাষিদের স্বপ্নের ফসল। পানি বাড়ার কারণে তিস্তা ব্যারেজ রক্ষার্থে সব জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গত দুই দিনে উজানের ভারত ও বাংলাদেশে ভারী বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। যা মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। বুধবার সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার। তা আবারও বেড়ে গিয়ে দুুপুর ১২টায় রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। সব জলকপাট খুলে ব্যারেজের পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

ফলে তিস্তার বাম তীরে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডারের আমিনগঞ্জ, কাকিনা, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অসময়ের এ বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের ছিন্নমূল মানুষ।

তিস্তার বাম তীরের বাহাদুরপাড়া গ্রামের মনিরুজ্জামান বলেন, আকাশের পানি আর বানের পানিতে ডুবে গেছি। হঠাৎ এ বন্যায় শুকনো খাবারও নেই বাড়িতে। শিশুদের নিয়ে বেশ কষ্ট আছি।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউ দৌলা  বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের বৃষ্টির কারণে তিস্তার পানি প্রবাহ সকাল থেকে বেড়েছে। ব্যারেজ রক্ষার্থে সব জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *