তিস্তা নিয়ে আবার আশ্বাস ভারতের
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করতে নয়া দিলিকে তাগিদ দিয়েছে ঢাকা। জবাবে শিগগিরই সমাধানে পৌঁছানোর ব্যাপারে আশ্বাস এসেছে নয়া দিলির পক্ষ থেকে। গতকাল শুক্রবার নয়া দিলিতে ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) পঞ্চম বৈঠকের সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনকে এই আশ্বাস দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
তিস্তা চুক্তিসহ ভারতের অন্যান্য নদ-নদীর পানি বণ্টন স্বাভাবিক রাখতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান আবদুল মোমেন। তার ওই অনুরোধের পর শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশ্বাস দেন সুষমা।
বৈঠকের পরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহুমুখী সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুক্রবার নয়া দিলিতে যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠক শেষে এসব সমঝোতা স্মারকও সই হয়। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে ঢাকার পক্ষে এ কে আব্দুল মোমেন ও নয়া দিলির পক্ষে সুষমা স্বরাজ নেতৃত্ব দেন।
জেসিসির বৈঠকের আগে জওহর ভবনেই দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী একান্তে সাক্ষাৎ করেন। আধা ঘণ্টার ওই আলোচনায় পারস্পরিক চেনা-জানার পাশাপাশি দুজনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়েও কথা হয়। জেসিসি বৈঠকের আগে বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। বৈঠকে মোমেনকে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আশাবাদের কথা বলেছেন।
২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতর সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দেশে বর্তমান সরকারের মেয়াদেই চুক্তি করার আশ্বাস দেন। কিন্ত গত ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আগের মেয়াদে না হলেও ক্ষমতাসীনরা চাচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী তাদের নির্বাচনের আগেই তিস্তা চুক্তি সম্পূর্ণ হবে। এই উদ্দেশে ঢাকা জোর চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের পক্ষ থেকে তিস্তা নিয়ে বারবার আশ্বাস এলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনড় অবস্থানের কারণে হচ্ছে না তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। তিস্তা নিয়ে ভারত সরকার আশ্বাস দিলেও তারাও এটাও বলছেন যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্মতি ছাড়া এই চুক্তি হচ্ছে না।
২০১১ সালে মনমোহন সিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। মনমোহন চুক্তি করতে ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঁকে যান মমতা। জানান, এই চুক্তি করলে তিনি সেই সময়ের কংগ্রেস সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেবেন।
তখন মমতার তৃণমূলের সমর্থন কংগ্রেসের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জরুরি ছিল। কিন্তু বর্তমান বিজেপি সরকারের এটা জরুরি নয়। তারপরও মমতারে রাজি না করিয়ে চুক্তি করতে চাইছে না বিজেপি সরকার।
একাদশ জাতীয সংসদ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত নতুন সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর এটাই এ কে আবদুল মোমেনের প্রথম বিদেশ সফর। গত ৬ ফেব্র“য়ারি রাতে তিন দিনের সফরে ভারত যান তিনি। আজ শনিবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।