November 28, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

তিন দিনের রিমান্ডে হেলেনা জাহাঙ্গীর

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অভিযোগে গ্রেফতার হেলেনা জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার রাতে সাড়ে আটটার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
এদিন রাতে তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। এদিন রাতেই তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আনা হয়।


এর আগে হেলেনা জাহাঙ্গীর নানা ধরনের ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়নে সোশাল মিডিয়ায় ‘অপপ্রচার চালানোর একটি সংঘবদ্ধ চক্র’ গড়ে তুলেছিলেন বলে অভিযোগ করেছে র‌্যাব। আওয়ামী লীগের পদ হারানো ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের পরদিন গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেলেনা জাহাঙ্গীর স্বীকার করেছেন, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের মানহানি ও সুনাম নষ্ট করেছেন। নিজের খ্যাতি লাভের আশায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে ছবি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে খ্যাতনামা হিসাবে উপস্থাপন করতে চাতুরির আশ্রয় নিতেন হেলেনা জাহাঙ্গীর।
হেলেনা জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পেয়েছেন দাবি করে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তৈরি করে ফেসবুক লাইভে এসে অযাচিত এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতেন।
সংবাদ সম্মলনে বলা হয়, বিভিন্ন সম্মানিত ব্যক্তিদের ‘কটাক্ষ করতেন’ হেলেননা। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসব ছড়িয়ে ‘অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেন’। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সময়ে মন্তব্যের জন্য আলোচিত অস্ট্রিয়া প্রবাসী সেফাতউল্লাহ ওরফে সেফুদার সঙ্গেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের ‘নিয়মিত যোগাযোগ এবং লেনদেন’ ছিল বলে র‌্যাবের ভাষ্য।
নানা ধরণের ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ বক্তব্য ছড়িয়ে ২০১৮ সালে আলোচনায় আসেন সেফুদা। ফেসবুক লাইভে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকার আদালতে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছিল।
কমান্ডার খন্দকার আল মইন বলেন, সেই সেফুদা তাকে (হেলেনা জাহাঙ্গীর) নাতি সম্বোধন করে থাকেন। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার গুলশানে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র‌্যাব। পরে মিরপুরে হেলেনার মালিকানাধীন জয়যাত্রা আইপিটিভির কার্যালয় এবং জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন ভবনেও অভিযান চলে।
অভিযানে গুলশানের বাসা এবং মিরপুর থেকে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, ১টি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, ১টি হরিণের চামড়া, ২টি মোবাইল ফোন, ১৯টি চেক বই ও বিদেশি মুদ্রা, ২টি ওয়াকিটকি, ৪৫৬টি চিপস ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
ইতোমধ্যে মিরপুরে ‘জয়যাত্রা টেলিভিশন’ সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, এই অননুমোদিত টেলিভিশনে কর্মী, সাংবাদিক নিয়োগের নামে হেলেনা জাহাঙ্গীর চাঁদাবাজি ও প্রতারণা করতেন। চাঁদাবাজি সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি পাওয়া গেছে এবং সেগুলো জব্দ করা হয়েছে।
মিরপুরে জয়যাত্রা আইপি টিভি ও জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন ভবনে অভিযানের পর র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ বলেছিলেন, জয়যাত্রা টিভির ‘কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না’। ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে আসা হেলেনা ‘অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী’ ছিলেন মন্তব্য করে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মঈন জানান, তার বিরুদ্ধে পাঁচটি আইনে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
ওয়াকিটকি পাওয়ায় টেলিযোগাযোগ আইনে, ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে, মদ পাওয়ায় মাদক আইনে, হরিণের চামড়া পাওয়ায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এবং বিভিন্নভাবে ‘অপপ্রচার চালানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, তার অপকর্মের বিষয়ে কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে র‌্যাব। প্রাথমিকভাবে তদন্তে হেলেনা জাহাঙ্গীর ২০টি ক্লাবের সদস্য বলে জানা গেছে। হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার। জয়যাত্রা টেলিভিশনের চেয়ারপারসন হেলেনা নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন।
হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য ছিলেন। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেরও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন তিনি। ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি ‘ভূইফোঁড়’ সংগঠনে হেলেনা জাহাঙ্গীরের সভাপতি হওয়ার খবর চাউর হলে সম্প্রতি তাকে দুই কমিটি থেকেই বাদ দেয় আওয়ামী লীগ। হেলেনা এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কুমিল্লায় আব্দুল মতিন খসরুর আসনে উপনির্বাচনেও প্রার্থী হতেও চেয়েছিলেন তিনি। তবে কোনোবারই তিনি দলের মনোনয়ন পাননি।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *