তালায় পানি কমিটির সংবাদ সম্মেলন
তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
কপোতাক্ষ নদের উপর ক্রসড্যাম স্থাপন ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি নিয়ে তালা প্রেসক্লাবে পানি কমিটির আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তালা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি মোঃ ময়নুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রæত সময়ের মধ্যে ক্রসড্যাম নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা এবং আগামীতে নদী রক্ষায় প্রতি বৎসর অবশ্যই ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ক্রসড্যাম নির্মাণের দাবী করা হয় সংশ্লিষ্টদের কাছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, কপোতাক্ষ নদের নাব্যতা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানকল্পে বাংলাদেশ সরকার ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (১ম পর্যায়)’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাখিমারা বিলে ২০১৫ সালে টিআরএম বাস্তবায়ন শুরু করে এবং ২০১৭ সালে নদী খনন কার্যক্রম সম্পন্ন করে। প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী খননকৃত নদী রক্ষায় প্রতি বছর টিআরএম এর উজানমুখে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে ক্রসড্যাম নির্মাণ ও যথাসময়ে তা অপসারণ করার কথা। কেননা সাধারণতঃ পলি মৌসুম ধরা হয় জানুয়ারী মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত ৫ মাস। উল্লেখ থাকে যে, সারা বৎসরের ৮০ ভাগ পলি এ মৌসুমেই নদীতে অবক্ষেপিত হয়। টিআরএম বিলের নদীর উজানে ক্রসড্যাম দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো খননকৃত নদী যাতে আবার পলি পড়ে ভরাট না হয় এবং সমস্ত পলি যাতে টিআরএম বিলে অবক্ষেপিত হয়ে দ্রæত বিলটি পলি দ্বারা ভরাট হতে পারে। যথাসময়ে ক্রসড্যাম নির্মিত না হলে উক্ত দু’টি উদ্দেশ্যই ব্যাহত হতে বাধ্য। বিগত বছরগুলোতে বিলম্বে ক্রসড্যাম নির্মিত হওয়ায় এক-তৃতীয়াংশ নদী ভরাট হয়েছে এবং টিআরএম বিল প্রত্যাশিত মাত্রায় পলি দ্বারা ভরাট হতে পারেনি। যথাসময়ে কার্যক্রম গৃহীত না হওয়ায় এ বৎসরেও পূর্ববর্তী বৎসরের তুলনায় নদীর ৫০ ভাগ ভরাট হবে এবং টিআরএম বিলের বিল ভরাট কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হবে। জনগণের আশংকা সামনের বর্ষা মৌসুমে এলাকা পূর্বের মতো আবারও জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হবে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে যে, পলি মৌসুম এগিয়ে এসেছে অর্থাৎ ডিসেম্বরের শুরু থেকে নদীতে পলি পড়া শুরু করেছে। নি¤œ অবাহিকায় নদীতে ¯্রােতের গতিবেগ হ্রাস পাওয়ায় পলি মৌসুম যেমন পূর্বের তুলনায় আগে শুরু হয় যার দরুন পলির আগমনও বৃদ্ধি পায়। বিদ্যমান এ বাস্তবতায় পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ডিসেম্বর মাসেই কাটপয়েন্টের উজানে ক্রসড্যাম নির্মাণ করা জরুরী ছিল। ইতোমধ্যে পলি মৌসুমের প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় পলি মৌসুমের মধ্য সময়ে বা শেষ দিকে ক্রসড্যাম নির্মাণ করা হলে তা দ্বারা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। যথাসময়ে ক্রসড্যাম না দেওয়া হলে পরিস্থিতির সম্ভাব্য অবনতি সম্পর্কে পানি কমিটি কর্তৃক বিগত বছরগুলোতে সংবাদ সম্মেলন করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে অবগত করানো হয়েছে এবং নিয়মিত ভাবে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এর দ্বারা প্রত্যাশিত কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। যে কারণে টিআরএম এর সুফল ধরে রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ আন্তরিক কিনা সে বিষয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় এলাকাবাসীর দাবী, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অতি দ্রæত সময়ের মধ্যে ক্রসড্যাম নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা এবং আগামীতে নদী রক্ষায় প্রতি বৎসর অবশ্যই ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ক্রসড্যাম নির্মাণ করা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এ নদীর সাথে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। এ অববাহিকার বিগত দিনের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা আপনারা দেখেছেন। সেজন্য পুনরায় যাতে জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হয়ে দূর্বিসহ জীবন-যাপন করতে না হয় তার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে পানি কমিটি আপনাদের মাধ্যমে সরকারের নিকট আবেদন জানান যে, নদীটিকে রক্ষার জন্য জনস্বার্থে অতি দ্রæত ক্রসড্যাম নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দাবী জানান।
নদী রক্ষা সংক্রান্ত সরকারের এ বৃহৎ প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত টিআরএম প্রযুক্তিকে ব্যর্থ প্রমাণিত করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্রসড্যাম দেয়ায় বিলম্ব করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী মনে করছে। অন্যদিকে আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, ক্রসড্যাম নির্মাণের ক্ষেত্রে ধীরগতি ও সময়ক্ষেপনে নদীর অকাল মৃত্যু ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং টিআরএম বিলে পলি ভরাটের ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে; যা বিভিন্নভাবে এলাকার জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বর্তমান প্রেক্ষিতে এলাকাবাসী মনে করে পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে উপরোল্লেখিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জনগণের দূর্ভোগ লাঘবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের নিকট আহŸান জানানো হয়।