তালার বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ
অবৈধ প্রক্রিয়ায় আয়াকে অপসারণ!
তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
তালার কলাগাছি সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপদিতর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের আয়াকে অবৈধ পন্থায় পরিকল্পিতভাবে বহিষ্কারের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন খোদ বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হরিদাসী সরকার।
তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর (১৭ নভেম্বর) রোববার দায়ের করা লিখিত অভিযোগে প্রধান শিক্ষক হরিদাসী জানিয়েছেন, চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধীরেন্দ্র নাথ সরকার অবসর গ্রহন করায় তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। শিক্ষা কর্মকর্তার উপদেশ ও নির্দেশ মোতাবেক দায়িত্ব পালনকালে ইতোপূর্বে বৈধ পন্থায় নিয়োগকৃত আয়া কৃষ্ণা রাণী রায়কে ডেকে তার দায়িত্ব বুঝে দেন। সে মোতাবেক তিনি গত,২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বও পালন করেন। এর আগে গত ৩ নভেম্বর বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ পদ ব্যানার্জী তাকে (প্রধান শিক্ষিকা) একটি টিমের ভয় দেখিয়ে হাজিরা খাতা থেকে আয়া কৃষ্ণার নাম কর্তনের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর ১২ নভেম্বর ফের তাকে বিদ্যালয়ের একটি আলাদা কক্ষে ডেকে নিয়ে আরো ৩ জনের সহযোগীতায় হাজিরা খাতার প্রতিটি পাতা থেকে আয়ার নাম কর্তনের নির্দেশ দেন। এসময় প্রধান শিক্ষককে নাম না কাটতে ব্যাপক অনুনয়-বিনয় করলেও কাজ হয়নি। এরপর গত ১৫ নভেম্বর বেলা ৪ টা থেকে রাত আনুমানিক ১০ টা পর্যন্ত পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ পদ ব্যানার্জীর আহŸানে উপজেলার কলাগাছি ও দোহার-মুড়াগাছা এলাকার গণ্যমান্য ও সাধারণ মানুষের সমন্বয়ে এক সভা শেষে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য করে একটি সাদা কাগজে রেজুরেশন করে আয়া কৃষ্ণাকে বিদ্যালয়ে না আসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগে আরো জানানো হয়,গত ১৯৯৮ সালের ১৩ মে’ অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজের বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে ঐ বছরের ১৪ জুন নিয়োগ বোর্ডের পরীক্ষার মাধ্যমে ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে কৃষ্ণা রাণী রায়কে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এরপর ১৬ জুন পরিচালনা পরিষদের সভায় নিয়োগ অনুমোদনপূর্বক ১৭ জুন’ সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের,ডাক: হরিহর নগর’র নারায়ন চন্দ্র রায়ের স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী রায়কে নিয়োগ পত্র প্রদান করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০ জুন তিনি আয়া পদে সেখানে যোগদান করেন।
এরপর দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সর্বশেষ সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চলতি বছরের ৯ মে’ তারিখের ৩৭.০২.০০০০.১০৭.৯৯.৫৭.২০১৬-২১৬০ নং স্মারকে জানানো হয় যে,বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এম.পি.ও. নীতিমালা-২০১৮ এ স্কুল পর্যায়ে সহশিক্ষা অনুমোদিত নি¤œ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সহকারী শিক্ষক (কৃষি/গার্হস্থ্য) এবং আয়া পদ প্যাটার্নভুক্ত হয়েছে। যেসকল প্রতিষ্ঠানে সহশিক্ষা অনুমোদনসহ চালু রয়েছে সে সব প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক (কৃষি/গার্হস্থ্য) এবং আয়া পদে এম.পি.ও. বিহীন শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক শূণ্য পদের তালিকা,কৃষি ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়ের বিষয় অনুমোদন পত্র এবং সহশিক্ষা পরিচালনার অনুমোদন পত্র জরুরী ভিত্তিতে নি¤েœাক্ত ছক মোতাবেক নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। ইতোমধ্যে ছক পূরণ করে পাঠালেও সর্বশেষ সভাপতির অবৈধ কার্যক্রমে স্কুলের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে পারছেননা বৈধ পন্থায় নিয়োগপ্রাপ্ত আয়া কৃষ্ণা রাণী রায়।
এ ব্যাপারে কলাগাছি সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের অভিযুক্ত সভাপতি কৃষ্ণ পদ ব্যানার্জীর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিষয়টি তাকে না জানিয়ে চুপিসারে আয়া পদের প্যার্টাভূক্তির ছক পূরণ করে তা মাউশিতে পাঠিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে তিনি প্রক্রিযার মাধ্যমে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
সর্বশেষ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিদাসী সরকার কর্তৃক সভাপতির বিরুদ্ধে শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগের ঘটনায় বেশ নড়েচড়ে বসেছেন এলাকাবাসী। তারাও এর প্রতিকার দাবি করেছেন। অন্যথায় ভবিষ্যতে আন্দোলনে নামারও হুমকি দেন কেউ কেউ।