September 17, 2024
আঞ্চলিক

তালার বালিয়া ভাঙ্গনকুল উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বস্তির নিঃশ^াস ৪ গ্রামের

 

 

তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের বালিয়া, ডুমুরিয়া, শাহাজাতপুর এবং খেশরা গ্রামের তিনপাশে প্রবাহমান কপোতাক্ষ নদ দ্বারা বেষ্টিত। প্রতিবছর নদীর তীরবর্তী ১২ কিঃমিঃ ভেড়িবাঁধের কমপক্ষে ৪/৫ টি স্থান ভেঙ্গে গিয়ে পুরো অঞ্চল প্লাবিত হতো। ২০০৯ সালের আইলায় এই অঞ্চলের ৯৫০ হেক্টর জমির মধ্যে ৮০০ হেক্টর জমি লোনা জলে তলিয়ে যায়। পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়ে এবং লক্ষাধিক বৃক্ষ মারা যায়। ৩শ’ হেক্টর উঁচু ফসলী জমিতে ৫/৭ বছরের মধ্যে কোন ফসল হয়নি। শতাধিক পুকুর এখনও রয়ে গেছে আইলার লোনা পানি। উপযুক্ত রেগুলেটর না থাকায় বর্ষার পানি সরাতে সীমাহীন দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়।

এলাকাবাসী এ দুর্যোগ ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণের জন্য বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে যোগাযোগ করে। অবশেষে ২০১১ সালে এলজিইডি’র ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ এ অঞ্চলে একটি প্রকল্প গ্রহণের জন্য সমীক্ষা শুরু করে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ১২ কিঃমিঃ ভেড়িবাঁধ এবং ৭.৫ কিঃমিঃ খাল খননের কাজ ৫২ টি এলসিএস দলের ১১০০ শ্রমিকের ৪ মাসের কাজের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছে। ঠিকাদারের মাধ্যমে ৩টি রেগুলেটর, ৪টি পাইপ ¯øুইস এবং সমিতির অফিস ঘর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

মাজেদ মোড়ল, সুলতান শেখ, আফাজ জোয়ার্দ্দার, মোমেনা খাতুনসহ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, বালিয়া ভাঙ্গনকুল উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে তারা অনেকটা আশংকামুক্ত। ফণী’র কোন প্রভাবও এখানে পড়েনি। তারা জানান, ১২ কিঃমিঃ ভেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় তারা বাড়িতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন। এছাড়া খাল খননের কারণে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা দূর হয়েছে এবং ১৫০ হেক্টর নিচু জমিতে ১৫ বছর পর এবারই আমন ধান লাগাতে পেরেছেন। তবে এলাকাবাসীর আশংকা যদি বর্ষার আগে রেগুলেটর নির্মাণের কাজ শেষ না হয়, তবে  পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে থাকবে। তাই বর্ষা মৌসুমের আগে ঠিকাদার রেগুলেটর নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারলে এ অঞ্চলের দুর্যোগ ঝুঁকি অনেকটা নিরসন হবে। ২৪০০ পরিবারের ৯০০ হেক্টর জমির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, স্বার্থক হবে সরকারের প্রায় ৫ কোটি টাকার প্রকল্প।

এদিকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এলাকার জনগণ খুশী হলেও এলসিএস দল খুশী হতে পারেনি। জোনা খাল ২ নং এলসিএস দলের মফিজুল মোড়ল জানান, তাদের দলের ২২ জন শ্রমিক ১ বছর আগে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার কাজ শেষ করেছে। অথচ টাকা পেয়েছে মাত্র দেড় লক্ষ। বাঁধ নির্মাণ ৪ নং এলিএস এর সভাপতি বাবলুর রহমান শেখ জানান, তার দল এক বছর আগে ৪.৫ লক্ষ টাকার কাজ শেষ করলেও এ পর্যন্ত মাত্র দেড় লক্ষ টাকা পেয়েছে। আরও কয়েকজন এলিএস দলের সভাপতি ও সম্পাদক একই অভিযোগ করেন।

এ প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা বালিয়া ভাঙ্গনকুল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, ৫২ টি এলসিএস দলের মধ্যে ৪৪ টি দল জুন ২০১৮ এরমধ্যে তাদের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করেছে। প্রতিকূল অবস্থার কারণে ৮ টি এলসিএস দল গত বছর কাজ শেষ করতে পারেনি। এ মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এলসিএস দলকে বিল পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এলসিএস দল তাদের সকল টাকা পেয়ে যাবেন বলে তিনি মনে করছেন।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুণ্ডু বলেন, এলসিএস দলের বকেয়া টাকা প্রদানের জন্য কিছু প্রক্রিয়া আছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই টাকা ছাড় করা হবে।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *