May 4, 2024
লেটেস্টশিক্ষা

তাবতিলা মারিয়াম মেঘার গল্প ‘ৎহি অথবা তহি’

আজকে রায়হান অনেক খুশি। কারণ তাকে আজ স্কুলে যেতে হবে না। কারণ সে অসুস্থ। সত্যি সত্যি অসুস্থ না, মিথ্যামিথ্যি অসুস্থ।

অসুস্থতার এই ভান ধরার কারণ, আজ স্কুলে গেলে ফারহানা মিস তাকে সমাজ পড়া ধরবেন। পাল রাজবংশ নিয়ে কার পড়তে ভালো লাগে? কেন এসব ইতিহাস পড়তে হবে? কে কবে জন্মগ্রহণ করল, কার পিতার নাম কি ছিল, কে কবে যুদ্ধ করলো এসব পড়ে কি লাভ?

কই সেদিন তো, রায়হান আর তার বড় বোন দীপা অনেক ঝগড়াঝাঁটি করল। রায়হান কি একবারও কাউকে বলেছে যে, তারা দুজন কিভাবে ঝগড়া করেছে, কবে ঝগড়া করেছে, এসব মনে রাখতে হবে?

মাঝে মাঝে এসব প্রশ্ন ফারহানা মিসকে করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু ইচ্ছা করলেই তো সব করা যায় না। ফারহানা মিস যা রাগী! প্রশ্নগুলো করলেই প্যারেন্টস কল করবেন। তবে আজ রায়হান বেঁচে গেছে। সে অসুস্থ হওয়ার ভান ধরেছে, ফলে তাকে আর স্কুলে হবে না।

আজ এমনিতেই বোধহয় স্কুলে যাওয়া লাগত না। কারণ সকাল থেকেই বাইরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির দিন রায়হানের খুব ভালো লাগে। বৃষ্টির একটা অদ্ভুত গন্ধ আছে, সেটা পাওয়া যায়। আকাশ মেঘলা থাকে, বৃষ্টির শব্দ শোনা যায়, প্রচন্ড গরমে আবহাওয়া ঠান্ডা হয়ে যায়। এই সময় শুধু বিছানায় শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।

” রায়হান, বাবা….. ঘুমিয়ে পড়েছিস তুই? ” মা বললেন।

“না.. মা। এখনো.. খুক খুক.. জেগে আছি.. খুক খুক।” রায়হান কাশার শব্দ করল।

“আহারে, কাশি তো অনেক বেড়ে গিয়েছে। নিশ্চয়ই বন্ধু-বান্ধবের সাথে আইসক্রিম খেয়েছিস, তাই না?” মা বললেন।

“আমার কি মনে হয় জানো, মা? আমার মনে হয় এগুলো সব ওর ঢং। স্কুলে যাবে না তাই ঢং শুরু করেছে।” চেচিয়ে বলে উঠল রায়হানের বড় বোন দীপা।

রায়হান আবার খুক খুক করে কাশার শব্দ করল।

“কি যে বলিস তুই দীপা। বেচারা এতো কাশছে আর তুই কি সব যা-তা বলছিস! নে বাবা, তোর জন্য গরম গরম দুধ এনেছি, খেয়ে ফেল। এই দীপা! তুই বের হয়ে যা তো ওর রুম থেকে! ও একটু দুধটা খেয়ে ঘুমাক। চল আমরা যাই।”

দীপা মুখ ভ্যাটকায় রুম থেকে বের হল। কি যে খারাপ দীপা! আরেকটু হলেই মার কাছে ধরা খেয়ে যেত রায়হান। দীপাকে একটা শিক্ষা দিতে হবে।

রায়হান টেবিল থেকে দুধের গ্লাস নিল। কিন্তু ওমা! দুধ কই? এ তো খালি কাপ! কাপটা এখনো গরম আছে, কিন্তু দুধ নেই। আশ্চর্য তো!! রায়হান বোধহয় মনের ভুলে এক ঢোকে সব দুধ খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু তা তো সম্ভব না। এত গরম দুধ খেতে গেলে রায়হানের জিভ পুড়ে যেত।

তাহলে কি মা মনের ভুলে কাপে দুধ ঢালতে ভুলে গিয়েছেন? কিন্তু কাপটা তো এখনো গরম আছে!!

রায়হান বোধহয় অসুস্থ হওয়ার অভিনয় করতে করতে সত্যি সত্যি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। উল্টাপাল্টা জিনিস দেখছে। রায়হানের ঘুমিয়ে পড়াই ভালো।

রায়হান ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম থেকে উঠে দুধের কাহিনীর কথা মনে পড়তেই রায়হানের অনেক হাসি লাগলো। অন্য কিছু ভাবতে ভাবতে কেউ কিছু খেলে, সেটা গরম নাকি ঠাণ্ডা, সেটা সাধারণত কারো মনে থাকে না। রায়হানেরও তাই হয়েছে। আর কিছু না।

২.

রায়হানের স্কুলটা অনেক বড়। অনেকগুলো ক্লাসরুম আছে, অনেক বড় মাঠ আছে, আর আছে একটা অডিটোরিয়াম। রায়হান এখন সপ্তম শ্রেণিতে। সে তার ক্লাসে গিয়ে দেখলো, তার বন্ধুরা মিলে একটা বড় কাগজে কিসব যেন লিখছে।

“কি লিখছিসরে তোরা?” সে জিজ্ঞেস করল।

“ফারহানা মিস আমাদের পাল রাজবংশ এবং সেন রাজবংশ নিয়ে পোস্টার বানাতে বলেছে। তুই কালকে আসলি না কেন? আমরা কালকে কত কাজ করেছি জানিস? ” সামির বলল।

“ভালো হয়েছে কালকে আসিনি। বেঁচে গিয়েছি।” রায়হান মনে মনে বলল।

“তুই কি পোস্টারটা বাসায় নিয়ে যেতে পারবি? কালকে ক্লাসের দেয়ালে টাঙ্গাতে হবে।”
“ঠিক আছে। আমি নিয়ে যাব।” রায়হান বললো।

রায়হান বাসায় পৌঁছালো। পোস্টারটি টেবিলে রাখল। তারপর বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। প্রত্যেকদিন স্কুল থেকে এসেই প্রচণ্ড টায়ার্ড হয়ে যায় সে। নিজের অজান্তেই সে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যা ছটায়। ৫ ঘন্টা ঘুমিয়েছে সে!!

সে টেবিলের দিকে তাকাতেই হকচকিয়ে গেল। ওমা!! এ কি হল!! পোস্টারটা কই গেল?

ছোট ছোট কাগজের টুকরো পড়ে আছে এবং কাগজগুলো দেখে মনে হচ্ছে কেউ এগুলো চিবিয়েছে।

কে চিবাবে? কে পোস্টার খাবে? এখন কি হবে? এখন কি হবে?

এমন কোন প্রাণীর কথা তো মনে পড়ছে না যে কাগজ খায় বা চিবোয়। তাহলে এটা কে করেছে? বাবা মা নিশ্চয়ই এই কাজ করবে না। তাহলে কে করল? দীপা? হ্যাঁ দীপা! কিন্তু দীপা কাগজ খাবে কেন? এখন কি হবে? সে ফারহানা মিস কে কি বলবে এখন?

৩.

“আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। কি বলছো, আবার বল।” ফারহানা মিসের গলা খুব গম্ভীর।

“মিস, আমার বড় বোন পোস্টারটা খেয়ে ফেলেছে। ”

“তোমার বড় বোন কোন ক্লাসে পড়ে? ”

“কলেজে পড়ে।”

“কলেজে পড়া একটি মেয়ে তার ছোট ভাইয়ের পোস্টার খেয়ে ফেলেছে? ইন্টারেষ্টিং!! তো শুধু পাল রাজাকেই খেলো, নাকি সেনকেও খেয়েছে? ” মিস প্রশ্ন করলেন, তার গলা আগের মতই গম্ভীর।

রায়হান চুপ করে রইল।

“কি ব্যাপার? তুমি কি পাল রাজা কে, সেন রাজা কে, তাও ভুলে গেছো? বলতো, সেন রাজা কে?”

রায়হান উত্তর দিতে পারছে না। কে যেন সেনরাজা?

পোস্টারে দুজনের ছবি একসাথে লাগিয়েছিল। তাহলে কি পালের ভাই? পালের ভাইই হবে নির্ঘাৎ।

“পালের ভাই।” রায়হান উৎসাহ নিয়ে বলল।

“পালের ভাই? তাহলে পাল রাজা কে?তোমার শ্বশুর? ”

“মিস, আমিতো এখনো বিয়ে করিনি। ”

“তোমার বিয়ে আমি দিয়ে দিচ্ছি।” রেগে গেলেন ফারহানা মিস।

৪.

রায়হান চুপিচুপি বাসায় ঢুকলো। আজকে বাসাটা কেমন সুনসান লাগছে।

সাধারনত, যখন রায়হান কোন অপরাধ করে তখন তার জন্য একটা বড় ঝড় অপেক্ষা করে । তখন বাসা এরকম নিশ্চুপ হয়ে যায়। মা-বাবা গম্ভীর হয়ে যান। শীতল স্বরে কথা বলেন। আর দীপার মুখে মুচকি হাসি দেখা যায়।

আজকের দিনের মতো প্রত্যেক ভয়ংকর দিনে দীপা বলে ওঠে, “আজকে তো তোকে ছেচা দেওয়া হবে!”

আজকেও দীপা একই কথা বলল। রায়হান দীপার কথার কোন উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে ঢুকলো। দীপা আবার বলে উঠলো, ” তুই নাকি ফারহানা মিসকে বলেছিস, যে, তোর বিয়ে করার খুব ইচ্ছা! হি হি!” হেসে উঠে বলল দীপা।

রায়হান তার রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। যে কোন মুহূর্তে তাকে বাবা মা ডাকবেন। তারপর রুমের দরজা বন্ধ করে ঠান্ডা গলায় খানিকক্ষণ বকবেন।

ঠান্ডা গলায় যখন বকা দেন, তখন যা ভয় করে! এর থেকে তার উপর চেঁচালে ভালো ছিল।

কেন সবাই তার সাথে এরকম করে? সে যা সত্যি তাই তো বলেছে।

দীপা না খেলেও, কেউ তো একজন পোস্টারটা খেয়েছে। সেই কে একজনটা কে?

“রায়হান!” শীতল গলায় ডাকলেন মা।

শেষ! রায়হান এখন শেষ হয়ে যাবে। ২ ঘণ্টা ধরে বকা শুনতে হবে তাকে। ভাবতে ভাবতে কেঁদে ফেলল সে।

খুব তাড়াতাড়ি চোখ মুছতে লাগলো। সে রুম থেকে বের হল। বাবা মার রুমে ঢুকলো। মা দরজা আটকে দিলেন।

“রায়হান, তোমার সাথে আমাদের কিছু কথা আছে। তুমি বোধ হয় জানো যে, আমরা কি ব্যাপারে কথা বলব। জানো না?” বাবা গম্ভীর গলায় বললেন।

” হ্যাঁ…… বাবা। ”

“রায়হান, তুমি যে প্রত্যেকদিন গোসলের পর গিজার বন্ধ করো না, এটা কি ঠিক? এতে বিদ্যুৎ অপচয় হয়। এখন থেকে গোসল করার পর গিজার বন্ধ করে দেবে, ঠিক আছে? ” বাবা বললেন।

রায়হান চমকে গেল। ব্যাপার কি? রায়হান তো ভেবেছিল ফারহানা মিস মা-বাবাকে নালিশ করেছে। তাই মা বাবা বকবেন। কিন্তু তারা তো অন্য কারণে বকছেন।

ও আচ্ছা। প্রথমে ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে শুরু হবে। তারপর বড় ব্যাপার। মূল অ্যাটাকটা শুরু হবে একটু পর। “আর কখনো যেন এরকম না হয়।” মা বললেন।

“আ…আচ্ছা।” রায়হান ভয়ে ভয়ে বলল।

বাবা রুমের দরজা খুলে দিলেন। মাও উঠে পড়লেন। রায়হান বসে আছে দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কি? তুই এখনও বসে আছিস কেন? ” কিছুটা অবাক তিনি। “এতোটুকুই?” রায়হান বলল।

“এতোটুকুই মানে?”

“মানে…. তোমাদের ফারহানা মিস ফোন দেয়নি?” রায়হান বলল।

“ফারহানা মিস কেন ফোন দেবে? তুই কি কিছু করেছিস?” মা বললেন।

“না, ওই যে ফারহানা মিস বেতন দিতে বলেছিলেন, তাই আর কি।”

“ঠিক আছে, কালকে দিয়ে দিস।” বাবা বললেন।

রায়হান ঘাবড়িয়ে গেল। ব্যাপার টা কি? ফারহানা মিস তার চোখের সামনেই তো তার বাবা-মাকে ফোন দিয়েছিলেন! বাবা-মা কি কোন কারণে ভুলে গিয়েছেন? কেন ভুলে যাবেন?

রায়হান দিপার রুমে ঢুকলো। “এই! বাবা-মা তো আমাকে ছেচা দেয়নি।” রায়হান বলল।

“তো আমি কি করবো? বাবা-মাকে গিয়ে বলব যেন তোকে ছেচা দেয়? ” দীপা গম্ভীর স্বরে বলল।

দীপা আগে মুচকে শয়তানি হাসি দিচ্ছিল। তবে এখন তার মুড খুব খারাপ। এর কারণ কি?

“কিন্তু তুমি যে বললে বাবা-মা আজকে আমাকে ছেচা দিবে?”

“বিরক্ত করবি না, রায়হান। আমি একেবারে এই কথা বলিনি। যা ভাগ! আমার পড়া আছে।”

রায়হান রুম থেকে বের হল। সে কিছু বুঝতে পারছে না। ওরা কি সবাই বিষয়টি ভুলে গেছে? কেউ কি ওদেরকে সবকিছু ভুলিয়ে দিয়েছে? কে ভুলিয়ে দিয়েছে? কেন ভুলিয়ে দিয়েছে?

৫.

রায়হান চিন্তিত মুখে তার রুমে ঢুকলো। ঢুকেই সে হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনতে পেল। কে কাঁদছে? টেবিলের নিচ থেকে এই কান্নার শব্দ আসছে। রায়হানের টেবিলে নিচে বসে কে কাঁদবে? দীপা? কিন্তু দীপা তো নিজের রুমে।

রায়হান টেবিলের কাছে গেল। নীল রঙের কি একটা যেন পেছন ফিরে আছে। রায়হান ভয় পেয়ে গেল। কোন নীল রঙের প্রাণী তার টেবিলের নিচে ঢুকলো কিভাবে? বাবা মাকে কি সে ডাকবে? নাকি নিজেই প্রাণীটিকে তাড়াবে?

আশ্চর্য! প্রাণীটি অবিকল মানুষের মত কাঁদছে। রায়হান তার হাতে একটি স্কেল নিল। স্কেলটি নাড়িয়ে সে বলল “শুশ!!” “শুশ!!”

প্রাণীটি এবার সামনে ফিরলো।

কিন্তু একি! এ তো কোন জন্তু না। এতো মানুষ। একটি বাচ্চা ৭-৮ বছর হবে। তার গায়ের রং নীল। ওমা! একি! ধীরে ধীরে তার গায়ের রং বেগুনি হয়ে যাচ্ছে। প্রাণীর মতো মানুষটি চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে রায়হানের দিকে।

” হ্যা..লো” প্রাণীর মত মানুষটি বলল। কথাও বলতে পারে এটা। ইংলিশ বলছে। জিনিসটা আসলে কি?

“তুমি কি আমাকে দেখতে পাচ্ছো?” প্রাণীর মতো মানুষটি জিজ্ঞাসা করলো।

বাংলাও বলছে। ব্যাপার টা কি? “তুমি কে?” রায়হান প্রশ্ন করলো।

“আমি ৎহি।”

“তহি? ”

“তহি না!! ৎহি” ৎহি হালকা লাল হয়ে বলল।

“তুমি কি?” রায়হান বলল।

“আমি কি মানে?” ৎহি লাল হয়ে বলল।

“মানে তুমি জিনিসটা কি?”

“ও আচ্ছা। আমি হলাম ভূত।”

“ভূত?”

“হ্যাঁ, ভূত।” ৎহি সাদা হয়ে গেল।

“তুমি তাহলে এরকম রং পরিবর্তন করছ কিভাবে?”

“এটা আমাদের নিয়ম।”

“কাদের নিয়ম?”

“ভুতদের!!” ৎহি আবার লাল হয়ে গেল।

“ভুতের এরকম নিয়ম কেন?”

“যাতে সবার এক্সপ্রেশন বোঝা যায়। একটু আগে, আমি নীল ছিলাম কারণ আমার মন খারাপ ছিল এবং আমি কাঁদছিলাম। এরপর আমার রঙ বেগুনি হয়েছে কারণ তোমাকে দেখে আমি ভয় পেয়েছিলাম। তারপর আমি লাল হয়েছি কারণ তোমার কথায় আমি রাগ করেছিলাম। এখন আমি সাদা, কারণ আমি এখন নরমাল। আমার কোন অনুভূতি নেই। আমি যদি এখন খুশি হই তাহলে আমি হলুদ হয়ে যাব। আর যদি আমি লজ্জা পাই, তাহলে গোলাপি হব। বুঝেছ?” ৎহি বলল।

রায়হান হা করে তাকিয়ে থাকলো। মানুষদেরও যদি এই সিস্টেম থাকতো, তাহলে কতো ভালো হতো। অনেক মানুষ আছে, বলে একরকম, কিন্তু তার মনের ভেতরে থাকে অন্যরকম। এই সিস্টেমটা থাকলে মানুষের ভেতরকার আসল অনুভূতি বোঝা যেত।

“তুমি কার ভুত? মানে কে মারা গেলে তুমি ভুত হয়েছো??”

“এই যে! তোমরা মানুষেরা আরেকটা জিনিস ভুল ভাবো। তোমরা ভাবো মানুষ যখন মারা যায়, তখন তারা ভূত হয়। এটা ঠিক না।” ৎহি হালকা লাল হয়ে বলল।

“তাহলে কোনটা ঠিক?”

“আসলে মানুষদের যখন ১৮ বছর হয়, তখন তাদের একটা ছোট ভার্সন ভূত হয়ে যায়।”

“মানে?”

“মানে হল, তোমার বয়স যখন ১৮ বছর হবে, তখন তুমি ৭-৮ বছরে যেরকম ছিলে, অবিকল সেটার একটা ভার্সন ভূত হয়ে ভুতের দুনিয়ায় চলে যাবে। সেখানে সব ভূতেরই বয়স ৭-৮ বছর। যেমন আমার বাবা মা, দাদা দাদি, নানা নানীর বয়সও কিন্তু ৭-৮ বছর।

তবে যেহেতু তারা অনেক আগে ১৮ বছর অতিক্রম করেছিল এবং অনেক আগে ভুত হয়েছিল এজন্য তাদের বড় বলা হয় ।”

“আমি বুঝি নাই।”

“না বোঝার মত কিছু তো এখানে নেই।”

“আচ্ছা, তহি! আমারও কি কোন ছোট ভার্সনের ভূত আছে তোমাদের দুনিয়ায়?”

“আহা! বললাম তো, তোমার এখনো ১৮ বছর হয়নি। তাই তোমার ভুতও এখনো আসেনি। তবে তোমার বোনের ভূত এসেছে। কারণ তার বয়স ১৮ হয়েছে।”

“তাহলে দীপার ভূত কে? তুমি তাকে চিনো? ” রায়হান কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল।

“আমি তাকে চিনব কিভাবে? একটা মানুষ থেকে ভূত হওয়ার পর তার চেহারাও পাল্টে যায়, নামও পাল্টে যায়। যেমন আমার নাম ৎহি, তবে আমার মানুষ ভার্সনের নাম কিন্তু ৎহি ছিল না। ”

“তহি, আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে, তুমি দীপার ভূত ভার্সন। কারণ দীপাও রাগী, তুমিও রাগী। হি হি হি হি হি হি!!” রায়হান হাসলো।

ৎহির মুখ লাল এবং গোলাপির মিশ্রণ হয়ে গেল। মানে সে লজ্জাও পাচ্ছে আবার রাগও হচ্ছে।

“আমার নাম ৎহি! তুমি তহি বলছ কেন??”

“তোহী” রায়হান হেসে বলল।

“ৎহি!”

“তুহি”

ৎহি এবার একদম গভীর রক্তের মতো লাল রঙে পরিণত হলো।

রায়হান বুঝতে পারল, আর মজা করলে বিপদ হতে পারে। তাড়াতাড়ি প্রসঙ্গ পাল্টাতে হবে। সে বলল, “আচ্ছা, তুমি মানুষের দুনিয়ায় কেন এসেছ?”

ৎহি এবার পুরো গোলাপি হয়ে গেল। কি ব্যাপার? এত লজ্জা পাচ্ছে কেন সে?

“আমি…. ফেল করেছি। তাই…. পালিয়ে এসেছি।”
রায়হান হো হো হো হো করে হেসে ফেললো। ৎহি গোলাপি হতে হতে কেমন এক প্রকার নীল হয়ে উঠল।

রায়হান হাসি থামিয়ে বলল,” কোন্ সাবজেক্টে ফেল করেছ? ”

“শারীরিক শিক্ষায়।”

রায়হান আবার হাসতে লাগলো। “এই সাবজেক্টে কেউ ফেল করে?” রায়হান বলল।

“কি করব বলো, আমি শারীরিক শিক্ষায় খুবই কাঁচা।”

“তাই!! তাহলে পাকা কোনটায়??”

“মানুষের মাথার ভিতরে ঢুকতে পারাতে।”

“কি!! তুমি মানুষের মাথার ভিতরে ঢুকতে পারো??”

“হ্যা, পারি। ওটা তো খুবই সহজ একটা ব্যাপার। আমি আজকেই তো, তোমার বাবা, মা আর বোনের মাথায় ঢুকেছিলাম।”

“কি বলছ তুমি এটা??” রায়হান অবাক হয়ে বলে উঠল।

“হ্যা…আমি আজ অবশ্য তোমার মাথাতেও ঢুকেছিলাম।”

“আমার মাথাতে!!!”

“হুম! তোমার মাথাতে ঢুকে আমি যখন দেখলাম আমি তোমার পোস্টার চিবিয়েছি, সেই কারণে তুমি তোমার মিসের কাছে বকা খেয়েছো, তখন আমার খুব খারাপ লেগেছে…”

“তুমি আমার পোস্টার খেয়েছ?? তাহলে আমার দুধও তুমি খেয়েছ??” রায়হান চেচিয়ে বলল।

ৎহি লাল হয়ে বলল, “সেজন্যই তো সবাইকে আমি সব ঘটনা ভুলিয়ে দিয়েছি যাতে তুমি বকা না খাও পোস্টারের জন্য। আর তখন আমার খুব খিদা লেগেছিল, কি করবো বল?”

“ও… এবার আমি সব বুঝতে পারছি। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে তহি।” খুশি হয়ে বলে উঠলো রায়হান।

“কিন্তু, তুমি শারীরিক শিক্ষায় কীভাবে ফেল করলে এটা বলতো…”

ঠিক তখনই দীপা রুমে ঢুকলো।

৬.

” কিরে রায়হান? তুই কার সাথে কথা বলিস? ”

“কারও সাথে কথা বলছি না তো।”

“আর তুই কোন সাবজেক্টে ফেল করেছিস?”

“কোন সাবজেক্টে ফেল করিনি তো!” রায়হান দীপার সাথে কথা বলতে বলতে টেবিলের নীচে তাকালো। তহি নেই!! সে চলে গিয়েছে……

“একদম মিথ্যা কথা বলবি না!!” দীপা বলে উঠলো। “আমি শুনেছি, কার সাথে যেন বলছিলি যে, তুই ফেল করেছিস। এই বয়সে এসে ফেল করলি কিভাবে, রায়হান? আমি জীবনে একবার ফেল করেছিলাম। যখন আমার সাত বছর ছিল। আর তুই এই বুড়ো বয়সে এসে ফেল করছিস? ছি!!”

“তু…..তুমি ৭ বছর বয়সে ফেল করেছিলে?”

“হ্যাঁ, কত আগে করেছিলাম আমি। তোর মতো নাকি?”

“কোন সাবজেক্টে ফেল করেছিলে?”

দীপা একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “শারীরিক শিক্ষায়।”

রায়হান চমকে গেল। একি! একি! এটা কি হলো!

“তহি!” রায়হান চেঁচিয়ে বলল।

“তহি মানে?” দীপা জিজ্ঞেস করল।

“দীপা, তুমিই তাহলে তহি!” রায়হান খুব গর্বের সাথে বলে উঠলো।

“কি বলছিস এসব তুই?” দীপা যুগপৎ অবাক ও কৌতুহলী। রায়হান হাসতে হাসতে বলল। “আরে না! কিছু না, মজা করছি। হিহিহিহি।”

কিন্তু রায়হান জানে, সে মোটেই মজা করছে না।

 

শেয়ার করুন: