তাইওয়ানকে ১১০ কোটি ডলারের অস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ক্ষুব্ধ চীন
নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র বলে দাবি করা দ্বীপ ভূখণ্ড তাইওয়ানের কাছে ১১০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাবে চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে এএফপি ও বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রণালয়ের এক মুখাপাত্র।
প্রস্তাবিত এই অস্ত্র প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে ৬৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার মূল্যের আরলি রাডার ওয়ার্নিং সিস্টেম এবং ৬০টি হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র, যেগুলোর সম্মিলিত বাজারমূল্য ৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
শত্রুপক্ষ থেকে যদি কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, সেক্ষেত্রে তা ছোড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরলি রাডার ওয়ার্নিং সিস্টেমের মাধ্যমে তার সংকেত পাওয়া যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি গত মাসের শুরুতে তাইওয়ান সফরে গিয়েছিলেন। সেই সময়েই অস্ত্র বিক্রির সংক্রান্ত প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল স্বায়ত্তশাসিত এই দ্বীপ ভূখণ্ডের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন ও পেলোসির মধ্যে।
শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এই বিক্রয় চুক্তি চুড়ান্ত হলো। মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘আমরা এই প্যাকেজ বিক্রির চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছি। কারণ, চীন-তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাইওয়ানের নিজস্ব নিরাপত্তারর জন্যই এখন এই প্যাকেজ জরুরি।’
‘পাশাপাশি চীনের প্রতি আমাদের আহ্বান, তাইওয়ানের ওপর থেকে যাবতীয় সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ পরিহার করতে হবে এবং অর্থপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যেতে হবে।’
১৯৪০ সালের গৃহযুদ্ধে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তাইওয়ান। তারপর থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী রাজনীতিকরা নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে দাবি করে আসলেও চীন এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে এখনও নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।
৩৬ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ ভূখণ্ডের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব এবং প্রায় ৩ লাখ সক্রিয় সেনা সদস্যের একটি সেনাবাহিনী।
এখন পর্যন্ত অবশ্য খুবই অল্প কয়েকটি দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকলেও তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনো দূতাবাস খোলেনি দেশটি।
তবে তাইওয়ান বিষয়ক আইন ‘তাইওয়ান রিলেশন অ্যাক্ট’র আওতায় স্বাধীনতাকামী এ দ্বীপভূখণ্ডকে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই সামরিক ও নিরাপত্তা সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘তাইওয়ান প্রণালীতে যুদ্ধ উস্কে দিতে এই অস্ত্র বিক্রি করা হচ্ছে না। এটা একটা রুটিন সেল; তাইওয়ানেরর সামরিক ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করতেই এই প্যাকেজ বিক্রি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের জনগণের পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে ওয়াশিংটনের চীনা দূতাবাস বলেছে—হয় যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি বাতিল করতে হবে, নয়তো চীনের পাল্টা জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
দূতাবাসের মুখাপাত্র লিউ পেনগিউ বিবিসিকে বলেন, ‘এই চুক্তি ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার সম্পর্ককে চরমভাবে বিপদগ্রস্ত করবে। যদি সত্যিই তাইওয়ানে এই প্যাকেজ পৌঁছায়, সেক্ষেত্রে চীন অবশ্যই ন্যায্যভাবেই তার কঠিন জবাব দেবে।’