তরুণদের জলবায়ু সচেতনতায় প্রথম সারিতে বাংলাদেশ: জরিপ
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতন তরুণের সংখ্যায় ২১ দেশের মধ্য বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক এক জরিপে উঠে এসেছে। একই অবস্থানে রয়েছে জিম্বাবুয়ে, আর প্রথম অবস্থান নাইজেরিয়ার।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল- ইউনিসেফ এবং ওয়াশিংটন ভিত্তিক জরিপ সংস্থা গ্যালপ ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত ‘দ্য চেইঞ্জিং চাইল্ডহুড’ জরিপে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
বিশ্ব শিশু দিবসের আগে বৃহস্পতিবার ইউনিসেফের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, “বাংলাদেশে বয়স্কদের তুলনায় তরুণ জনগোষ্ঠীর মাঝে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতার হার বেশি।
“বাংলাদেশি শিশু ও তরুণের মধ্যে যারা বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন, তাদের ৯০ শতাংশের বেশি তাদের সরকারের কাছে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও একমত।”
স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, শিক্ষা ও সুরক্ষা বঞ্চিত শিশুদের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তরুণ জনগোষ্ঠীর বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে প্রতি বছর ২০ নভেম্বর বিশ্ব শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব অঞ্চল এবং আয় সীমার ২১টি দেশের ২১ হাজারের বেশি মানুষের মতামত নেওয়া হয়।
বয়সের ভিত্তিতে একটি গ্রুপে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের এবং অপর একটি গ্রুপে ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ফলাফলে দেখা যায়, নাইজেরিয়ার ৯৪ শতাংশ, বাংলাদেশের ৯১ শতাংশ এবং জিম্বাবুয়ের ৯১ শতাংশ তরুণ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন তরুণদের মধ্যে গড়ে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ তরুণ বিশ্বাস করে, এ সঙ্কট মোকাবিলায় সরকারের দৃঢ় এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, জলবায়ু বিষয়ক কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশের তরুণদের কণ্ঠস্বর ‘উচ্চকিত’ এবং তাদের বক্তব্য ‘খুবই স্পষ্ট’।“বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন এবং আরও বেশি কিছু করা যে প্রয়োজন সে বিষয়ে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সোচ্চার।
“বিশ্ব সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্যান্য দেশের সমবয়সীদের তুলনায় কিছু বিষয়ে ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে তাদের স্বপ্ন মূলত একই– একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে তারা।”
ইউনিসেফ জানায়, বিশ্ব সম্পর্কে একাধিক প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বর্তমান সময়ে একজন শিশু হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন, সে বিষয় নিয়ে এটা প্রথম বড় আকারের জরিপ।
শিশুদের অর্থনৈতিক অবস্থা মা-বাবার চেয়ে ভালো হবে- এমন মনে করা তরুণের সংখ্যায় শীর্ষ চারটি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তরুণদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে আত্মবিশ্বাস খুবই কম।
ইউনিসেফ জানায়, তরুণ জনগোষ্ঠীর ৮১ শতাংশ বিশ্বাস করে, শিক্ষার অবস্থা আগের প্রজন্মের তুলনায় উন্নত হয়েছে, যা বাংলাদেশকে শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের তরুণরা সঠিক তথ্যের উৎস হিসেবে সরকার, বিজ্ঞানী, ধর্মীয় সংগঠন এবং জাতীয় গণমাধ্যমের ওপর বয়স্কদের তুলনায় কম আস্থাশীল বলেও জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে।
শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর মাঝে এই বিশ্বাস প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি যে, প্রতিটি প্রজন্মের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব আরও ভালো বসবাসের জায়গা হয়ে উঠছে এবং শৈশবকালীন অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জরিপে অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ বিশ্বাস করে, আজকের শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও শারীরিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি তাদের বাবা-মায়ের প্রজন্মের চেয়ে ভালো।
“তবে তরুণ জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বিগ্ন, সামাজিক মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে সন্দিহান এবং হতাশা ও উদ্বেগের অনুভূতির সঙ্গে যুঝছে।
“বয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি মাত্রায় তারা নিজেদেরকে বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে দেখে এবং কোভিড-১৯ মহামারীর মত হুমকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিতে অনেক বেশি আগ্রহী।”
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারী, দারিদ্র্য ও অসমতা, ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস ও জাতীয়তাবাদ হতাশার কারণ হলেও শিশুরা আশা জাগিয়েছে।
“শিশু ও তরুণরা বয়স্কদের বিবর্ণ দৃষ্টিতে বিশ্বকে দেখতে চায় না। বিশ্বের তরুণ জনগোষ্ঠী তাদের পুরনো প্রজন্মের তুলনায় আশাবাদী, অনেক বেশি বিশ্বমুখী এবং বিশ্বকে একটি ভালো স্থানে পরিণত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
“আজকের তরুণ জনগোষ্ঠীর মাঝে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, তবে তারা নিজেদেরকে এক্ষেত্রে সমাধানের অংশ হিসেবে দেখে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিশুদের ব্ক্তব্য রাজনৈতিক নেতাদের শোনা উচিত- এমন ভাবনাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা তরুণের সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিক থেকে দ্বিতীয়।
শেলডন বলেন, “জরিপে একটি বিষয় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, তা হল- তরুণদের কথা বলার জন্য, তাদের উদ্বেগ প্রকাশের জন্য এবং প্রত্যাশার কথা জানানোর জন্য আরও জায়গা তৈরি করে দিতে হবে।”
গ্যালপ ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র পার্টনার জো ডালি জানান, পরবর্তী প্রজন্মের বক্তব্য শোনা এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার বিষয়টি যে গুরুত্বপূর্ণ, এই জরিপের ফলাফল তা সামনে নিয়ে এসেছে।
“আজকের শিশুরাই আগামী দিনে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে; আমাদের সন্তানদের জন্য একটি উন্নত বিশ্ব রেখে যাওয়া নিশ্চিত করতে বয়স্ক প্রজন্মের দায়িত্ব পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
জরিপের আওতায় গ্রামীণ এলাকাসহ পুরো দেশ এবং টেলিফোন ব্যবহারের সুযোগ আছে এমন বেসামরিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক ও প্রতিটি বয়স ও শ্রেণির জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বশীল অংশের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, ক্যামেরুন, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, লেবানন, মালি, মরক্কো, নাইজেরিয়া, পেরু, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জিম্বাবুয়েতে পরিচালিত হয়েছে এ জরিপ।