তথ্য-প্রযুক্তিতে তরুণদের দক্ষ করে তুলছে ‘কয়রা আইটি স্কুল’
জয়নাল ফরাজী
তরুণ-তরুণীদের তথ্য প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে মানব কল্যাণ ইউনিট পরিচালিত কয়রা আই.টি. স্কুল। প্রথমে নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের দেওয়া অর্থে যাবতীয় সরঞ্জমাদি ক্রয় করে প্রতিষ্ঠানটির কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমানে আড়াই শতাধিক ব্যক্তি বিনামূল্যে কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রামের উপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, তরুণদের মাঝে সুষ্ঠু নেতৃত্ব ও সাবলীল জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছিলো কয়রার মানব কল্যাণ ইউনিট। খুলনা শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে কয়রা উপজেলা। ফলে তথ্য ও প্রযুক্তিতে অনেক পিছিয়ে এ উপজেলাটি। এমতাবস্থায় তরুণদের তথ্য প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে কিছু অভিভাবকের উৎসাহে মানব কল্যাণ ইউনিটকে অনুপ্রেরণা যোগায়। ফলশ্র“তিতে ২০১০ সালে ছোট পরিসরে পথচলা শুরু হয় কয়রা আই.টি. স্কুলের।
এ উদ্যোগটি যখন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের নজরে আসে, তখন ওই বিভাগ থেকে তিন মাস ‘শেখ রাসেল প্রতিবন্ধী ও শিশু উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের জন্য কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ক্রয় বাবদ ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। এটির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে স্থায়ী আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা চাওয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। অনুমতি পাওয়ার পরে প্রকল্পটির পাশাপাশি অন্যান্য কোর্স চালু করা হয়েছে। সরঞ্জামাদি বাদে বর্তমান সকল খরচ সংগঠনের কর্মীরা বহন করেন।
বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ৬৫ জন শিশু, ৫৮ জন তরুণ-তরুণী, ১৮ জন প্রতিবন্ধী, ১০৩ জন বেকার এবং অন্যান্য পেশার ১৩ জন। শিক্ষক হিসেবে ৩ জন নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন এবং ৭ জন পারটাইম সময় দিয়ে থাকেন। এ প্রতিষ্ঠানে মোট সদস্য রয়েছেন ১৩০ জন ও স্বেচ্ছাসেবক ১৭৯ জন।
প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা জানায়, কয়রা আই.টি. স্কুল বর্তমানে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে শিশুদের জন্য মজার কম্পিউটার ক্লাস (১-৫ পর্যন্ত), তরুণদের জন্য বিশেষ ৭টি প্রোগ্রাম, প্রতিবন্ধী ও অন্যন্য সকল বয়সীদের জন্য তাদের সুবিধা ও চাহিদামত প্রশিক্ষণের। বেকারদের জন্য ‘স্মার্ট ক্যারিয়ার’ কর্মশালা ইত্যাদি।
মানব কল্যাণ ইউনিটের সভাপতি আল আমিন ফরহাদ দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, ‘কয়রা থেকে শিক্ষা জীবন শেষ করে যখনি উচ্চ শিক্ষার জন্য জেলা সদর বা শহরে জীবন পদার্পন করি, তখনি দেখতে পাই দেশ কোথায় এগিয়ে গেছে। আর আমরা কোথায় পড়ে আছি। দেখতে পাই প্রযুক্তির এক যাদুর বাংলাদেশ। অন্যান্য এলাকা থেকে আগত ও স্থানীয় শহুরে বন্ধুদের কাছে আমার পদে পদে হেনস্থ আর অপমান আমাদের তাড়া করে থাকে। যখন তারা কম্পিউটারে বিভিন্ন প্রোগ্রাম তৈরীর চিন্তায় ব্যস্ত সময় কাটায়, তখনও আমরা মাউস ধরতে শিখিনি। যখন এভাবেই বছরকে-বছর যুগকে-যুগ সময় পার হয়ে চলেছে, প্রিয় কয়রার ভাই-বন্ধুরা দেশের বোঝা হয়ে হতাশ জীবন অতিক্রম করে চলেছে তখন এ ধারাবাহিকতার অবসান ঘটাতে প্রতিষ্ঠা করা হয় এ স্কুল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা একটা শিশু গড়ে উঠবে কম্পিউটারের সাথে। শিশুকাল থেকে দশম শ্রেনীর মধ্যে তাকে ১০টি প্রোগ্রাম প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মে সংযুক্ত করা এবং তাকে অন্যন্য বাহ্যিক সৌদর্য্য তথা নীতি নৈতিকতার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন স্মার্ট তরুণ তৈরী করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশ একদিন তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে দূর হবে তরুণ-তরুণীদের বেকারত্বের অভিশাপ। শুধু তাই নয়, এখন থেকে আমরা বিদেশে শ্রমিক নয়, পাঠাবো দক্ষ আই.টি ইঞ্জিনিয়ার।’